শুল্ক দ্বিগুণ করাসহ নানা কড়াকড়ির পরও থামানো যাচ্ছে না স্বর্ণের বার আনা। রেমিট্যান্স পাঠানোর পরিবর্তে মধ্যপ্রাচ্য থেকে স্বর্ণ নিয়ে ফিরছেন প্রবাসীরা। শুধু চট্টগ্রাম শাহ আমানত বিমানবন্দরেই গত দুমাসে এক হাজার কোটি টাকা মূল্যের ১১ হাজার পিস স্বর্ণের বার বৈধ করা হয়েছে। এর বিপরীতে সরকার রাজস্ব পেয়েছে মাত্র ৪৪ কোটি টাকা!
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম শাহ আমানত বিমান বন্দরে চলতি মাসের প্রথম ৭ দিনে ৮৮ কোটি ৪৭ লাখ টাকা মূল্যের ৯৮৩ পিস স্বর্ণের বার বৈধ করেছেন মধ্যপ্রাচ্য ফেরত প্রবাসীরা। আগস্ট মাসে আনা হয় ৭৩৫ কোটি টাকা মূল্যের ৮ হাজার ১৭১ পিস স্বর্ণের বার। নতুন বাজেটে নতুন নিয়মের পাশাপাশি দ্বিগুণ শুল্ক আরোপের কারণে জুলাইতে তুলনামূলক কম এলেও ১৬৪ কোটি টাকা মূল্যের এক হাজার ৮২১ পিস স্বর্ণের বার বৈধ করা হয়। আর এ সময়ের মধ্যে সরকারের রাজস্ব আদায় হয়েছে মাত্র ৪৪ কোটি তিন লাখ টাকা!
এছাড়া দীর্ঘদিন ধরে মধ্যপ্রাচ্য ফেরত প্রবাসীরা রেমিট্যান্স পাঠানোর পরিবর্তে স্বর্ণের বার নিয়ে দেশে ফিরছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে সংশ্লিষ্টদের।
সূত্রটি আরও জানায়, চলতি অর্থ বছরের বাজেটের আগে প্রতি পিসে মাত্র ২০ হাজার ১০০ টাকা শুল্ক জমা দেয়ার মাধ্যমে ২ পিস স্বর্ণের বার বৈধ করার সুযোগ পেতেন প্রবাসীরা। আর এ সুযোগে গত অর্থ বছরে দেশে আসে অন্তত ২০ হাজার কোটি টাকা মূল্যের ২০ টন স্বর্ণের বার। এবারের বাজেটে স্বর্ণের বার আনার সুযোগ একটিতে কমিয়ে আনা হয় এবং শুল্কহার বাড়িয়ে দ্বিগুণ করা হয়। তারপরও কমছে না রেমিট্যান্সের পরিবর্তে স্বর্ণের বার আনার প্রবণতা।
চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের উপ-কমিশনার ব্যারিস্টার মো. বদরুজ্জামান মুন্সি বলেন, এ বছর প্রবাসীরা মাত্র স্বর্ণের একটি বার আনার সুযোগ পাচ্ছেন। এতে গত অর্থ বছরের তুলনায় এ বছর স্বর্ণের আমদানি কিছুটা কমেছে। তবে আমরা মনে করি, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড বা সরকার যে উদ্দেশ্যে দুটির পরিবর্তে একটি বার আনার অনুমতি দিয়েছে, সেটা অনেকটাই সফল হয়েছে।
চট্টগ্রাম শ্রম ও জনশক্তি রফতানি কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মো. আলী বলেন, মধ্যপ্রাচ্য প্রবাসী যারা, তাদের পরিবারের চাহিদা থাকে কিছু স্বর্ণ আনার। তাই তারা রেমিট্যান্স পাঠানোর পাশাপাশি স্বর্ণও নিয়ে আসেন।
বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতির (চট্টগ্রাম) সাধারণ সম্পাদক প্রণব সাহা জানান, স্বর্ণ বেচাকেনার আন্তর্জাতিক বাজার হিসেবে পরিচিত দুবাইতে বর্তমানে ১১৭ তোলা বা ১০ ভরি ওজনের প্রতিটি স্বর্ণের বার বিক্রি হচ্ছে ৮ লাখ ৯০ হাজার টাকা দরে। আর ৪০ হাজার টাকা শুল্ক পরিশোধের পর মাত্র ১০ হাজার টাকা বাড়তি লাভে বিক্রি করা হয় এসব স্বর্ণের বার।
তিনি বলেন, স্বর্ণের একটি বার বাংলাদেশে আনার পর মাত্র ১০ হাজার টাকা লাভ হয়। এর কারণে বৈধ পথে স্বর্ণ আনাটা অনেকটাই কমে গেছে। এছাড়া প্রতি ভরি স্বর্ণের দাম লাখ টাকা ছোঁয়ার পর বাংলাদেশের বিপণি বিতানগুলোতে স্বর্ণালংকার বেচাকেনা অনেকটাই কমে গেছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৩:৩৯:০৫ ৮৯ বার পঠিত