মানবাধিকার নিয়ে ব্যবসা দেশে-বিদেশে বন্ধ হওয়া প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেছেন তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। তিনি বলেছেন, কিছু কিছু সংগঠন আছে পৃথিবীতে, যারা মানবাধিকার নিয়ে ব্যবসা করে। তারা কাউকে কিল মারলে বিবৃতি দেয়, কাউকে ঘুষি মারলেও বিবৃতি দেয়। কিন্তু তাদের আত্মীয়-স্বজন কাউকে মেরে ফেললে কোনো বিবৃতি নাই। ২০১৩-১৪ সালে যারা মানুষ পুড়িয়ে হত্যা করেছে, ফিলিস্তিনের শিশুরা যখন ঢিল ছুড়ে তার প্রতিবাদে ইসরাইলে সৈন্যরা যখন পাখির মতো শিশুদের শিকার করে, তখন কোনো বিবৃতি নাই। আপনাদের অনুরোধ জানাব, আপনারা যদি মানবাধিকার ব্যবসাটা করেন, তাহলে এই দিকগুলোর দিকেও আপনারা তাকাবেন। মায়ের কান্নার কান্না যখন আপনাদের কানে পৌঁছে না, তখন আপনারা মানবাধিকার নিয়ে কাজ করেন।
সোমবার (২ অক্টোবর) জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে জিয়াউর রহমানের মরণোত্তর বিচার ও সংসদ এলাকা কবর অপসারণের দাবিতে মায়ের কান্না আয়োজিত মানববন্ধনে এসব কথা বলেন তিনি।
হাছান মাহমুদ বলেন, আপনাদের নিশ্চয়ই মনে আছে ২০১২-১৪ সালে কীভাবে মানুষ পুড়িয়ে হত্যা করা হয়েছে। নিরীহ মানুষ যারা রাজনীতি বোঝে না, রাজনীতি করে না, রাজনীতির অঙ্গনে হাঁটে না তাদের কীভাবে পেট্রোল বোমা নিক্ষেপ করে হত্যা করা হয়েছে। ক্লান্ত চালক-হেলপাররা যখন গাড়ির ভেতর ঘুমিয়ে ছিলেন, তারা যেন বাইরে বের হতে না পারে সেজন্য দরজায় তালা দিয়ে গাড়িতে আগুন দেওয়া হয়েছে। গাড়িও পুড়ে গেছে আর ড্রাইভারের দেহ পুড়ে অঙ্গার হয়েছে। এই হচ্ছে নির্মমতা নিষ্ঠুরতা। তখন বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া বাইরে থেকে এগুলোর নেতৃত্ব দিয়েছেন। আর বিদেশ বসে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, আসলে যাদের জন্ম রক্তের ওপর দাঁড়িয়ে, খুনের ওপর দাঁড়িয়ে, যাদের প্রতিষ্ঠাতা হচ্ছে জিয়াউর রহমানের মতো একজন নির্মম-নিষ্ঠুর মানুষ। যিনি নাস্তা খেতে খেতে ফাঁসির আদেশে সই করতেন। তার প্রতিষ্ঠিত দল এভাবেই মানবাধিকার লঙ্ঘন করবে। বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে ২০১৩-১৫ সালে এই দেশে নির্মমতা হয়েছে, মানবাধিকারের বিরুদ্ধে অপরাধ সংগঠিত হয়েছে। রাজনীতির নামে নিরীহ মানুষকে পুড়িয়ে ফেলা এমনি এমনি হয়নি। রাজনৈতিক দাবি আদায়ের জন্য পৃথিবীর কোথাও এভাবে মানুষকে পুড়িয়ে হত্যা করা হয়নি।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, জামায়াতে ইসলামী বিএনপির প্রধান সঙ্গী। তারা ১৯৭১ সালে মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছিল, বিএনপি তাদের রাজনৈতিক দল আখ্যা দিয়ে বৈঠক করেছে। যারা মানবাধিকার নিয়ে কাজ করেন, এই মায়ের কান্নার ব্যানারে যারা কেঁদে বেড়াচ্ছেন সমগ্র দেশজুড়ে গত কয়েক বছর ধরে, আপনাদের কর্ণ প্রহরে মায়ের কান্না কেন পৌঁছে না। আপনাদের কাছে বলা হয়েছিল, তারা দেখা করতে চায়। কিন্তু আপনারা এখনো পর্যন্ত দেখা করেননি। সুতরাং মানবাধিকার এখন কিছু কিছু রাষ্ট্রে অস্ত্র হয়ে দাঁড়িয়েছে। মানবাধিকার নিয়ে ব্যবসা হওয়া, এটি দেশে-বিদেশে বন্ধ হওয়া প্রয়োজন।
জিয়াউর রহমানের মরণোত্তর বিচার চায় মায়ের কান্না
দয়া করে আমাদের গণতন্ত্র শিক্ষা দেবেন না কেউ– জানিয়ে হাছান মাহমুদ বলেন, বাংলাদেশ আজ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এগিয়ে যাচ্ছে। এই অগ্রযাত্রা অনেকের পছন্দ নয়। সেজন্য নানা ছলছুতায় প্রথমে আনে মানবাধিকার, তারপর বলে সুষ্ঠু পথে নির্বাচন হয়নি। আমাদের দেশে অবশ্যই আগামী নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও জনগণের অংশগ্রহণে আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্য একটি নির্বাচন হবে। সরকার সর্বোচ্চভাবে নির্বাচন কমিশনকে এটি করার জন্য সহযোগিতা করবে। দয়া করে আমাদেরকে গণতন্ত্র শিক্ষা দেবেন না কেউ।
তিনি বলেন, আমাদের পার্লামেন্ট ভবনে ঘেরাও করে কেউ হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়নি। আমাদের দেশে পরাজিত প্রার্থীরা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে পরাজয় মেনে নেয়। কিন্তু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ডোনাল্ড ট্রাম্প এখনো পরাজয় মেনে নেয়নি। যারা গণতন্ত্র শিক্ষা দিতে চান, তাদের অনেকের দেশেই গণতন্ত্র নেই।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বলেন, দেশে খালেদা জিয়ার যেন সর্বোচ্চ চিকিৎসা নিশ্চিত হয়, সেজন্য সরকার যা কিছু করার তা করেছে এবং ভবিষ্যতেও করবে। কিন্তু বেগম জিয়ার স্বাস্থ্য নিয়ে আপনার রাজনীতি করবেন, সেটা তো করতে দেওয়া যায় না। বিএনপি খালেদা জিয়াকে রাজনীতির দাবার গুটি বানিয়েছে। এতে করে মনে হয়েছে, তারা চায় না বেগম খালেদা জিয়ার সুস্থ হোক। তারা চায় খালেদা জিয়া আরও অসুস্থ হয়ে থাকুক। তাহলে তারা রাজনীতিটা করতে পারে খালেদা জিয়াকে নিয়ে। খালেদা জিয়া দেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী হওয়ায় সরকার তার জন্য সর্বোচ্চ ব্যবস্থা করেছে। কিন্তু বিদেশ যাওয়ার ব্যাপারটা আদালতের। আদালতের অনুমতি ছাড়া তো তিনি বিদেশ যেতে পারবেন না। এ নিয়ে দয়া করে রাজনীতি করবেন না।
হাছান মাহমুদ বলেন, দেশে আবার সন্ত্রাস করার পরিকল্পনা করা হয়েছে। কারণ তারা বুঝতে পেরেছে এভাবে আন্দোলন করে বা হামাগুড়ি দিয়ে, কয়দিন হাঁটা কর্মসূচি বা বসা কর্মসূচি কয়দিন দাঁড়ানো কর্মসূচি– এসব কর্মসূচি দিয়ে মানুষকে যে সম্পৃক্ত করা যায়নি সেটা তারা বুঝতে পেরেছে। তাই এখন দেশকে অস্থিতিশীল করার জন্য, দেশে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করার জন্য, বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে বিশ্ব থেকে যেন ফায়দা লুটতে পারে সেজন্য তারা সন্ত্রাসের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। আপনাদের বলে দিতে চাই, আওয়ামী লীগ রাজপথে আছে এবং রাজপথে থাকবে। কাউকে আর ২০১৩-১৫ সালের মতো বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে দেওয়া হবে না। তাদের কঠোরভাবে দমন করা হবে।
মায়ের কান্না সংগঠনের আহ্বায়ক কামরুজ্জামান মিয়া লেলিনের সভাপতিত্বে মানববন্ধনে আরও বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও সাবেক ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম প্রমুখ।
বাংলাদেশ সময়: ১৬:২৭:১২ ১১৪ বার পঠিত