রাশিয়ার কাছ থেকে ইউরেনিয়াম প্ল্যান্টের প্রধান জ্বালানি ও জ্বালানি সরবরাহের সার্টিফিকেট গ্রহন এবং জ্বালানি মজুতের মডেল পাওয়ার মাধ্যমে বাংলাদেশ পারমাণবিক শক্তি উৎপাদনকারীদেও অভিজাত ক্লাবে পা রেখেছে।
পাবনার ঈশ্বরদীতে আরএনপিপি প্রাঙ্গনে এক অনুষ্ঠানে বহুল আলোচিত রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র (আরএনপিপি) পরিচালনার জন্য প্রথম ব্যাচের জ্বালানি গ্রহন করা হয়।
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে রোসাটমের প্রতিনিধি পারমাণবিক জ্বালানির সনদ ও মডেল হস্তান্তর করেন। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এতে ভার্চ্যুয়ালি যোগ দেন।
পাবনার ঈশ্বরদীর আরএনপিপি প্রঙ্গনে রোসাটমের মহাপরিচালক অ্যালেক্সি লিখাচেভ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমানের কাছে জ্বালানি এসেমব্লি মডেলটি হস্তান্তর করেন।
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন অনুষ্ঠানে ভাষণ দেন।
ইয়াফেস ওসমান বলেন, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের মাধ্যমে বাংলাদেশ বিশ্বের ৩৩তম পারমাণবিক বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী দেশে পরিণত হয়েছে।
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী আশা প্রকাশ করেন, এই প্রকল্প দেশের তুলনামূলকভাবে প্রান্তিক উত্তরাঞ্চলে শিল্পায়ন ত্বরান্বিত করবে।
তিনি আরও বলেন, ‘পরমাণু বিদ্যুতের লেভেলাইজড খরচ অন্যান্য বিদ্যমান জীবাশ্ম জ্বালানি-চালিত বিদ্যুতের তুলনায় সস্তা হবে।’
আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থার (আইএইএ) মহাপরিচালক রাফায়েল মারিনো গ্রসি তার বক্তৃতায় বলেন, বাংলাদেশ আইএইএ নির্দেশিকা অনুসরণ করে পারমাণবিক প্ল্যান্ট বাস্তবায়ন করছে এবং আন্তর্জাতিক নিয়ম অনুযায়ী নিরাপত্তা ও সুরক্ষা বজায় রেখেছে।
অ্যালেক্সি লিখাচেভ বলেন, অন্তত ২ হাজার বাংলাদেশি এখানে চাকরির সুযোগ পাবেন।
তিনি বলেন, ‘আমরা ১ হাজার বাংলাদেশী প্রকৌশলীকে প্রশিক্ষণ দিয়েছি এবং তাদের আরএনপিপি পরিচালনার জন্য বিশ্বমানের প্রশিক্ষণ দিয়েছি।’
তিনি আরও বলেন, পরিবেশবান্ধব প্রকল্প পরিচালনার জন্য পরবর্তী প্রজন্মের প্রকৌশলী এবং প্রযুক্তিবিদদের প্রশিক্ষণের জন্য প্ল্যান্ট সাইটে একটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে।
অ্যালেক্সি লিখাচেভ নির্ধারিত সময়ের আগে এই বিশাল কাজটি সম্পন্ন করতে নিঃশর্ত সমর্থনের জন্য বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানান। গত সাত বছরে ৩০ হাজার লোক এ প্রকল্পে চব্বিশ ঘন্টা ধরে কাজ করেছে।
তিনি আরও বলেন, ‘একজন বিশ্বস্ত বন্ধু হিসাবে আমরা প্রযুক্তি এবং জ্বালানি সরবরাহের মাধ্যমে আরএনপিপির কার্যক্রম চালিয়ে যেতে বাংলাদেশকে সমর্থন করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
প্রকল্পের বিবরণ অনুযায়ী, রাশিয়ান সফট লোন এবং রাশিয়ান স্টেট অ্যাটমিক এনার্জি কর্পোরেশন রোসাটমের প্রযুক্তি সহায়তায় বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশন প্রতিটি ১,২০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার মোট ২,৪০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার প্রকল্পের দুটি ইউনিট নির্মাণ করছে।
রাশিয়ান ফেডারেশনের পারমাণবিক জ্বলানি সরঞ্জাম ও পরিষেবা এবং রোসাটমের অন্যতম অংশীদার সংস্থা অ্যাটমস্ট্রয়এক্সপোর্ট এ প্রকল্পের সাধারণ ঠিকাদার।
কর্তৃপক্ষ ২০২৫ সালের প্রথম দিকে এ প্লান্টের উৎপাদন শুরু করার পরিকল্পনা করছে।
কনস্ট্রাকশন অব রূপপুর এনপিপি প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক ড. মো. শওকত আকবর গণমাধ্যমকে জানান, ইতোমধ্যে ১ম ইউনিটের প্রায় ৯০ শতাংশ এবং ২য় ইউনিটের ৭০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে।
সাধারণ চুক্তি অনুযায়ী, রোসাটম প্রথম তিন বছরের অপারেশনের জন্য জ্বালানি সরবরাহ করবে।
শওকত আকবর গণমাধ্যমকে বলেন, রাশিয়ার সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী বিক্রেতা দেশ বর্জ্য জ্বালানি ফেরত নেবে।
তিনি বলেন, ভারত ও চীনের মতো ক্রমবর্ধমান অর্থনীতির সঙ্গে বাংলাদেশের জ্বালানি সংমিশ্রণের তুলনা করুন।
প্রকল্পের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে তিনি বলেন, এই পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি বাংলাদেশকে ২০৩০ ও ২০৪১ সালের লক্ষ্য অনুযায়ী কার্বন নিঃসরণ মোকাবেলায় সহায়তা করবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিউক্লিয়ার ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের একজন বিশেষজ্ঞ বলেছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত এবং ব্যয়বহুল বাংলাদেশ পরিচ্ছন্ন ও সাশ্রয়ী মুল্যে বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে সক্ষম হবে।
মন্ত্রণালয়ের অধীনে পরমাণু শক্তি কমিশন রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। রাশিয়ার ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান অ্যাটমস্ট্রয়এক্সপোর্ট এই প্রকল্পের অধীনে প্রতিটি ১২০০ মেগাওয়াটের দুটি ইউনিট নির্মাণ করছে।
পারমাণবিক জ্বালানি রোসাটমের সহযোগী কোম্পানি টিভিইএল ফুয়েল তৈরি করছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ তাদের কাছ থেকে পারমাণবিক জ্বালানি ক্রয় করে।
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০১৩ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রাশিয়া সফরের সময় রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের জন্য একটি ঋণ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।
বাংলাদেশ সময়: ২১:৪০:৫৫ ১৫২ বার পঠিত