প্রথম ইনিংসে পাকিস্তানি ব্যাটারদের ভুগিয়েছিলেন নেদারল্যান্ডসের বোলাররা। এরপর ব্যাটিংয়ে নেমে ডাচ ব্যাটাররাও একই তালে দাপট দেখাতে শুরু করেন। যা শোচনীয় কোনো ফলাফলের শঙ্কায়ও ফেলে দিচ্ছিল বাবর আজমের দলকে। তবে ডাচ ব্যাটারদের ঠিক ‘গলার কাঁটা’ হয়ে উঠতে দেননি হারিস রউফ ও হাসান আলীরা। পাকিস্তানের দেওয়া ২৮৭ রানের জবাবে নেদারল্যান্ডস ২০৫ রানেই গুটিয়ে গেছে। ফলে বিশ্বকাপ যাত্রার শুরুতেই ৮১ রানের বড় জয় পেয়েছে পাকিস্তান।
যদিও ম্যাচের শেষদিকে পাকিস্তানের জয়ের অপেক্ষা বাড়িয়েছেন টেল-এন্ডার ব্যাটার লোগান ভ্যান বিক। তবে ওভার শেষে পল ভ্যান মিকেরান স্ট্রাইকে যেতেই তাকে বোল্ড করে নেদারল্যান্ডসের ইনিংসের সমাপ্তি টানেন হারিস রউফ। পাকিস্তানের হয়ে তিনি সর্বোচ্চ ৩টি উইকেট নিয়েছেন।
নেদারল্যান্ডসের হয়ে এদিন ব্যক্তিগত অর্ধশতকের দেখা পেয়েছেন ওপেনার ভিক্রমজিত সিং ও বাস ডি লিড। বল হাতে চারটি উইকেট নিয়ে এর আগে ডি লিড পাকিস্তানের ব্যাটিং লাইনআপকে ধসিয়ে দিয়েছিলেন। এরপর ব্যাট হাতেও দারুণ প্রভাবশালী ছিলেন তিনি। বিপরীতে ডাচ ব্যাটারদের বিপক্ষে মিতব্যয়ী বোলিংয়ে ক্রমাগত চাপ প্রয়োগ করে গেছেন পেসার হাসান আলী। অথচ তার বিশ্বকাপই খেলার কথা ছিল না, নাসিম শাহের ইঞ্জুরি তার বিশ্বকাপে খেলার পথ খুলে দেয়। এছাড়া হারিস রউফ, শাহিন আফ্রিদি ও মোহাম্মদ নেওয়াজরাও প্রতিপক্ষকে নিয়ন্ত্রণে রেখেই বল করেছেন।
পাকিস্তানের দেওয়া বড় লক্ষ্যের জবাবে শুরুটা অবশ্য খারাপ হয়নি নেদারল্যান্ডসের। তবে নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারিয়ে তারা ম্যাচের মোমেন্টাম ধরে রাখতে পারেনি। স্বাভাবিক গতিতে রান তোলার মাঝে ষষ্ঠ ওভারে ফাইন লেগে উড়িয়ে মারতে গিয়ে ক্যাচ আউট হন ম্যাক্স ও’ডাউড। হাসান আলীর করা বলটি কিছুটা বাউন্স থাকায় ব্যাটে ঠিকঠাক মতো হয়নি, ফলে মাত্র ৫ রান করেই বিদায় নেন ডাচ ওপেনার। এরপর দলীয় ৫০ রানে দ্বিতীয় উইকেট হারায় দলটি। এবার স্পিন অলরাউন্ডার ইফতিখার আহমেদের শিকার ডাচদের নির্ভরযোগ্য ব্যাটার কোলিন অ্যাকারম্যান। বোল্ড হওয়ার আগে তার ব্যাট থেকে ১৭ রান আসে।
এরপর বাস ডি লিড ও ভিক্রমজিত মিলে জুটি বাধেন ৭০ রানের। ধীরে ধীরে পাকিস্তানের সঙ্গে তাদের রানের ব্যবধানও প্রায় নাগালে চলে আসছিল। তবে তাদের সেই ছন্দে বিঘ্ন ঘটান লেগ-স্পিনার শাদাব খান। তার গুগলিতে ভিক্রমজিতের ব্যাট থেকে বল ডিপ মিড উইকেটে উড়ে যায়। দৌড়ে গিয়ে সেটি তালুবন্দি করেন ফখর জামান। চারটি চার ও এক ছক্কায় ৫২ রান (৬৭ বল) করেন এই ডাচ ওপেনার। তার পরপরই তিন বলের ব্যবধানে দুবার আঘাত করেন রউফ। ৫ রানে তেজা নিদামানুরু এবং শূন্য রানেই ডাচ অধিনায়ক স্কট এডওয়ার্ড আউট হয়ে দলকে খাদের মুখে ফেলে দেন।
পরবর্তীতে নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারিয়েছে নেদারল্যান্ডস। ক্রিজে স্যাটেল ব্যাটার ডি লিড থাকলেও তাকে সঙ্গ দেওয়ার মতো কেউ ছিল না। শেষ উইকেটে ভ্যান বিক তিনটি চার ও এক ছয়ে ২৮ করে ম্যাচের স্থায়িত্ব বাড়ান। তবে দলের হার ঠেকানোর জন্য সেটি যথেষ্ট ছিল না। ডি লিড এর আগে ৬টি চার ও দুই ছক্কায় সর্বোচ্চ ৬৭ রানের (৬৮ বল) ইনিংস খেলেছেন।
পাকিস্তানের হয়ে রউফ ৩টি, হাসান আলী ২টি এবং শাহিন আফ্রিদি, নেওয়াজ, শাদাব ও ইফতিখার উইকেট নেন একটি করে।
এর আগে হায়দরাবাদের রাজিব গান্ধী স্টেডিয়ামে টস হেরে ব্যাট করতে নেমে মাত্র ৩০ রানের মাথায় তিন উইকেট হারায় বাবর আজমের দল। দারুণ নৈপুণ্য দেখিয়ে বিশ্বকাপে পা রাখা ডাচরা যেন ভিন্ন কিছুরই ইঙ্গিত দিচ্ছিল। সেখান থেকে মোহাম্মদ রিজওয়ান ও সৌদ শাকিল পাকিস্তানকে টেনে তোলেন। সমান ৬৮ রানের ইনিংস খেলেছেন দুজনই। এছাড়া শেষদিকে মোহাম্মদ নেওয়াজ ও শাদাব খানের ত্রিশ পেরোনো ইনিংসে বাবররা জয়ের ভিত পায়। পাকিস্তানের এমন ব্যাটিং দৈন্যতায় বড় ভূমিকা রেখেছেন ডাচ পেসার বাস ডি লিড। তিনি একাই চার উইকেট নিয়েছেন।
সাম্প্রতিক সময়ে রানখরায় ভুগছিলেন ফখর জামান। সেইসঙ্গে ইমাম-উল-হকও ছিলেন ব্যাট হাতে অধারাবাহিক। বিশ্বকাপ যাত্রাতেই তাদের রানে ফেরার দারুণ সুযোগ ছিল। দুজনেই ফিরেছেন যথাক্রমে ১২ ও ১৫ রান করে। হোঁচট খাওয়ার শুরুটা হয়েছিল ইনিংসের চতুর্থ ওভারে। বল ঠিকমতো ব্যাটে আসার আগেই শট খেলতে চেয়েছিলেন ফখর, আক্রমণে থাকা লোগান ভ্যান বিকের হাতেই তিনি ক্যাচ তুলে দেন। এরপর ম্যাচে দায়িত্ব নেওয়ার দায় ছিল অধিনায়ক বাবরের ওপর। তবে দুটি প্রস্তুতি ম্যাচেই ৮০-উর্ধ্ব রান পাওয়া এই তারকা ব্যাটার এদিন ক্রিজে রান পেতে বেশ হিমশিম খেয়েছেন।
১৭ বল খেলে বাবরের ব্যাটে আসে মাত্র ৫ রান। সে কারণে হয়তো বাউন্ডারি খেলার চাপে পড়েন তিনি। অফ-ব্রেক স্পিনার কোলিন অ্যাকারম্যানের শর্ট লেংথের বল কিছুটা জায়গা নিয়ে পাক অধিনায়ক পুল শট খেলেন। কিন্তু সেই বলটি বাউন্ডারিতে পৌঁছানোর আগেই সাকিব জুলফিকারের তালুবন্দী হয়ে যায়। তার পরপরই বিপদ বাড়িয়ে ফেরেন ওপেনার ইমামও। ১৯ বলে ১৫ রান করে তিনি ভ্যান মিকেরানের বলে ক্যাচ দিয়ে বিদায় নেন।
মাত্র ৩৮ রানেই তিন উইকেট হারিয়ে পাকিস্তান দারুণ বিপর্যয়ে পড়ে। তাদের খাদের কিনারা থেকে টেনে তুলতে অভিজ্ঞ ব্যাটার রিজওয়ান সঙ্গী বানান তরুণ বাঁ-হাতি সৌদ শাকিলকে। দুজনে ধীরে চাপে ফেলতে থাকেন ডাচ বোলারদের ওপর। তাদের জুটিতে ১৯৯২-এর বিশ্বচ্যাম্পিয়নরা ১২০ রানের শক্ত ভিত পায়। ডি লিডের বলে আউট হওয়ার আগে শাকিল আক্রমণাত্মক মেজাজে ব্যাট চালিয়েছেন। ৫২ বলে ৯টি চার ও এক ছক্কায় ৬৮ রান করে স্পিনার আয়ান দত্তের বলে ক্যাচ দেন তিনি। অনেক্ষণ তার সঙ্গে বোঝাপড়া দেখানো রিজওয়ানও এরপর ফেরেন একই ফিগারের ইনিংস খেলে। ডি লিডের বলে স্টাম্প হারানোর আগে তার ইনিংসটি সাজান ৭৫ বলে ৮টি চারের বাউন্ডারিতে।
ডাচদের বিপক্ষে ব্যাট হাতে আলো ছড়াতে পারেননি সাম্প্রতিক সময়ে বেশ ফর্মে থাকা ব্যাটার ইফতিখার আহমেদ। তিনি মাত্র ৯ রানে ফিরেছেন। এরপর টেল এন্ডারে মোহাম্মদ নেওয়াজ ও শাদাব খান ৬৪ রানের জুটি গড়েন। কিন্তু ক্রিজে থিতু হয়েও তাদের কেউই ইনিংস বড় করতে পারেননি। নেওয়াজ ৩৯ (৪৩ বল) এবং শাদাব ফেরেন ৩২ রান (৩৪ বল) করে। শেষদিকে পাকিস্তানের পুঁজি কিছুটা বাড়িয়েছেন হারিস রউফ ও শাহিন শাহ আফ্রিদি। শাহিন ১৩ ও রউফ করেন ১৯ রান। রউফ স্টাম্পিং হতেই এক ওভার বাকি থাকতে গুটিয়ে যায় পাকিস্তানের ইনিংস।
নেদারল্যান্ডসের হয়ে ডি লিডের চারটি ছাড়াও দুটি উইকেট নিয়েছেন অ্যাকারম্যান। এছাড়া আয়ান, ভ্যান বিক ও মিকেরান একটি করে শিকার করেন।
বাংলাদেশ সময়: ২২:৩২:৫৪ ১৪৭ বার পঠিত