পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বলেছেন, ‘আমরা যুক্তরাষ্ট্রে ছিলাম। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ, একজনও বলে নাই যে (মার্কিন) ঝড় আসবে।’
সফররত মার্কিন প্রাক-নির্বাচন পর্যবেক্ষক দলের সঙ্গে রবিবার (৮ অক্টোবর) ঢাকায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।
মন্ত্রী বলেন, ‘পত্রপত্রিকায় একটু বেশি বাড়িয়ে বলে।
আমরা যুক্তরাষ্ট্রে ছিলাম। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ। একজনও বলে নাই যে ঝড় আসবে। আপনারা (গণমাধ্যম) এগুলো বানান।
আপনাদের মাথা-মগজের মধ্যে কিছু গণ্ডগোল আছে।’
যুক্তরাষ্ট্রের প্রত্যাশার বিষয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘তারা চায় একটা অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন। এর চেয়ে বেশি কিছু তারা চায় না। তারা কেউ বলে নাই, মার্কিন ঝড় আসবে।
বাংলাদেশের কিছু ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে গণমাধ্যমের প্রকাশিত তথ্যের বিষয়ে জানতে চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘এগুলো তো আপনারা ডেকে আনছেন। আপনারা কি নিষেধাজ্ঞা চান? আপনারা বোধ হয় চান। সে জন্য ডেকে আনছেন। তারা শুধু একটা ভিসানীতি করেছে। তারা একটা স্বাধীন এবং সার্বভৌম সরকার।
এসব ব্যাপারে তারা সিদ্ধান্ত নিতে পারে। আমরাও স্বাধীন ও সার্বভৌম দেশ। আমরাও সিদ্ধান্ত নিতে পারি নিজের ইচ্ছামতো।’
বাংলাদেশের নির্বাচন বিষয়ে সম্প্রতি অস্ট্রেলিয়ার ১৫ জন সংসদ সদস্য দেশটির সরকারপ্রধানের কাছে একটি চিঠি দিয়েছেন। এ ব্যাপারে বাংলাদেশ সরকারের অবস্থান জানতে চাইলে মোমেন বলেন, ‘আপনারা ওসব নিয়ে অত চিন্তিত কেন? দুনিয়ার অনেক জায়গায় আমরা টাকা দিয়ে কথা বলাতে পারি। টাকা দিলে গান গাইবে। ছয়জন কংগ্রেসম্যান একটা চিঠি দিয়েছে। পরে জানা গেল, তারা না জেনে করেছে। যেটা ছিল লজ্জাজনক। আমরা অস্ট্রেলিয়াকে বিষয়টা জানাব, তাদের তথ্য ঠিক না। তখন তারা হয়তো বুঝতে পারবে, এটা ঠিক না।’
মার্কিন সিনেটর বব মেনেনদেজের দুর্নীতির প্রসঙ্গ টেনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমেরিকার তিনবারের সিনেটর, শক্তিশালী। সে নাকি টাকা খেয়ে উল্টাপাল্টা কাজ করেছে। এগুলো দুনিয়াতে হয়। সে সিনেটর হলে, কংগ্রেসম্যান হলে, এমপি হলে টাকা খায় না, এটার তো গ্যারান্টি আমরা কেউ দিতে পারি না।’
নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে মার্কিন পর্যবেক্ষক দলের সঙ্গে আলোচনা হয়নি
এদিকে নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে মার্কিন প্রাক-নির্বাচন পর্যবেক্ষক দলের সঙ্গে কোনো আলোচনা হয়নি বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন। তিনি বলেছেন, ‘দেশের শাসনতন্ত্র মেনেই নির্বাচন হবে। শাসনতন্ত্র মেনে, আমরা সেভাবে নির্বাচন করব। আমাদের শাসনতন্ত্রে নির্বাচনকালীন সরকার বলতে কিছু নেই।’
পর্যবেক্ষক দলের সঙ্গে আলোচনার প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, ‘এরা সবাই অত্যন্ত পরিপক্ব লোক। তারা আসছেন একটা অবাধ নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করতে। তারা জানতে আসছেন, একটা অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন করার ক্ষেত্রে আমরা কী কী কাজ করেছি। তাদের নিজেদের কোনো মতামত নেই। তারা শুধু জানতে চেয়েছেন, কিভাবে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হবে। আমরা বলেছি, আমাদের এ সমস্ত দেশে বেশ সংঘাত হয়। নির্বাচন হইলে সংঘাত হয়।’
মোমেন বলেন, ‘আমরা একটা অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহযোগ্য নির্বাচন করব। আমরা একটা উদাহরণ সৃষ্টি করতে চাই।’
পর্যবেক্ষক দল সব দলের অংশগ্রহণ নিয়ে কোনো বার্তা দিয়েছে কি না―জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, ‘কিছু বলেনি। এ সম্পর্কে কোনো আলোচনা করিনি। তবে আমরা চাই, সবাই নির্বাচনে অংশ নিক। কিন্তু আমরা জোর করে কাউকে বলি না, নির্বাচনে অংশ নাও।’
সব দলকে ভোটে নিয়ে আসতে সরকার কোনো উদ্যোগ নেবে কি না―এমন প্রশ্নের জবাবে মোমেন বলেন, ‘যারা নির্বাচন করতে চায় তাদের আমাদের দিক থেকে স্বাগত। আসা না আসা তাদের সিদ্ধান্ত এবং মাধাব্যথা।’
ভোট কারচুপি নিয়ে এবং বেচাকেনা নিয়ে সরকার সতর্ক অবস্থানে থাকবে উল্লেখ করে মোমেন বলেন, ‘আমরা কাউকে জোর করে ভোট দেওয়াই না বা কোনো দলের পক্ষে ভোট দেওয়ার জন্য জোর করব না। আমরা চাই, তারা ইচ্ছেমতো ভোট দেবে। এ রকম ব্যবস্থা আমরা করেছি। আমরা বলেছি, নির্বাচনী প্রচারণায় যেন কোনো সহিংসতা না হয়।’
বাংলাদেশ সময়: ২২:৩১:৫৮ ১২৯ বার পঠিত