গাজায় যুদ্ধবিরতির দাবি এবং ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের বেসামরিক লোকজনকে লক্ষ্য করে চালানো সহিংসতার নিন্দা জানিয়ে জাতিসংঘের প্রভাবশালী সংস্থা নিরাপত্তা পরিষদে প্রস্তাব উত্থাপনের চূড়ান্ত প্রস্তুতি নিচ্ছে রাশিয়া।
সবকিছু ঠিক থাকলে সোমবার নিরাপত্তা পরিষদে এ প্রস্তাব উত্থাপন ও এটির ওপর ভোটগ্রহণ হবে বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে রয়টার্স।
জাতিসংঘে নিযুক্ত রাশিয়ার উপপ্রতিনিধি দিমিত্রি পোলিয়ানস্কি শনিবার রয়টার্সকে জানিয়েছেন, আগের দিন শুক্রবার প্রস্তাবের খসড়া অনুলিপি নিরাপত্তা পরিষদের ১৫ সদস্যের প্রতিনিধিদের সামনে উপস্থাপন করা হয়েছে। সোমবার নিউইয়র্কের স্থানীয় সময় বেলা ৩ টার দিকে প্রস্তাবটির ওপর ভোটগ্রহণ হবে।
এক পৃষ্ঠার সেই লিখিত প্রস্তাবে গাজায় যুদ্ধবিরতি এবং ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনে বেসামরিক লোকজনকে হত্যার নিন্দা জ্ঞাপনের পাশাপাশি হামাসের হাতে জিম্মি ইসরায়েল ও অন্যান্য দেশের নাগরিকদের মুক্তি, মানবিক সহায়তা করিডোর গঠন এবং বেসামরিকদের নিরাপদে সরে যাওয়ার জন্য সেফ প্যাসেজের দাবিও যুক্ত করা হয়েছে।
রাশিয়ার প্রস্তাবে ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের নাম উল্লেখ থাকলেও গাজা ভূখণ্ডের নিয়ন্ত্রণকারী গোষ্ঠী হামাসের নাম সরাসরি নেওয়া হয়নি।
জাতিসংঘের নিয়ম অনুযায়ী, নিরাপত্তা পরিষদের ৫ স্থায়ী ও ১০ অস্থায়ী সদস্যরাষ্ট্রের মধ্যে ন্যূনতম ৯ সদস্যরাষ্ট্র যদি প্রস্তাবটির পক্ষে ভোট দেয় এবং যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স এবং চীন যদি ভেটো বা আপত্তি না জানায়, সেক্ষেত্রে প্রস্তাবটি আগামীকালই পাস হয়ে যাবে।
প্রায় দুই বছর ধরে পরিকল্পনা ও প্রস্তুতি নেওয়ার পর গত ৭ অক্টোবর ভোররাতে গাজা উপত্যকা থেকে ইসরায়েলের বিভিন্ন সামরিক-বেসামরিক স্থাপনা লক্ষ্য করে একের পর এক রকেট ছোড়া শুরু করে হামাস এবং সূর্যের আলো ফোটার আগেই ইসরায়েলের দক্ষিণাংশের সীমান্ত বেড়া বুলডোজার দিয়ে ভেঙে ওই ভূখণ্ডে প্রবেশ করে শত শত সশস্ত্র হামাস যোদ্ধা।
হামাসের হামলায় প্রথম দিনই ইসরায়েলে নিহত হয়েছেন কয়েকশ ইসরায়েলি ও অন্যান্য দেশের নাগরিক, যাদের অধিকাংশই বেসামরিক। এছাড়াও দেড় শতাধিক মানুষকে এদিন জিম্মি হিসেবে ধরে নিয়ে গেছে হামাস। এই জিম্মিদের ভাগ্যে কী ঘটেছে— তা এখনও অজানা।
এদিকে প্রাথমিক গোয়েন্দা তথ্য ও প্রস্তুতির অভাবে হামলার শুরুর দিকে খানিকটা অপ্রস্তুত থাকলেও অল্প সময়ের মধ্যে তা কাটিয়ে পূর্ণ শক্তিতে যুদ্ধের ময়দানে নামে ইসরায়েল এবং প্রথম দিন থেকেই গাজায় বিমান হামলা শুরু করে, যা এখনও অব্যাহত রয়েছে।
তবে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী আইডিএফ জানিয়েছে, শিগগিরই বিমান অভিযান বন্ধ করে স্থল অভিযান শুরু হবে গাজা উপত্যকায়। সেই অভিযানের চুড়ান্ত প্রস্তুতির কাজও শেষ হয়ে এসেছে।
স্থল অভিযান পরিচালনার জন্য গাজার সাধারণ বেসামরিক লোকজনকে উপত্যকার দক্ষিণ দিকে মিসর সীমান্তে চলে যাওয়ার নির্দেশনও দিয়েছে আইডিএফ।
ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় রোববার এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ইসরায়েলের বিমানবাহিনীর গত এক সপ্তাহের অভিযানে ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় নিহতের সংখ্যা পৌঁছেছে ২ হাজার ৩২৯ জনে এবং এ পর্যন্ত আহত হয়েছেন ৮ হাজার ৭১৪ জন। এই নিহত এবং আহতদের মধ্যে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক শিশু ও নারী রয়েছেন।
গাজার পাশাপাশি পশ্চিম তীরেও ফিলিস্তিনিদের সঙ্গে সংঘাত হচ্ছে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনীর। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুসারে, ইসরায়েলি সশস্ত্র বাহিনীর হাতে পশ্চিম তীরে এ পর্যন্ত নিহত হয়েচেন ৫৪ জন ফিলিস্তিনি, আহত হয়েছেন আরও প্রায় ১ হাজার ১০০ জন।
বাংলাদেশ সময়: ১৫:৩৫:৩১ ১৩৬ বার পঠিত