ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে ফিটনেসবিহীন গাড়িতে দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন লাইসেন্সবিহীন অদক্ষ চালক। এই দুইয়ে মিলে মহাসড়ক অনিরাপদ করে তুলেছে। এতে প্রায়ই ঘটছে প্রাণহানি; মৃত্যুফাঁদে পরিণত হয়েছে এই মহাসড়কটি।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ঢাকা-ময়মনসিংহ ৪ লেনের মহাসড়কের পাশে অসংখ্য মিল ফ্যাক্টরি। এসব ফ্যাক্টরির শ্রমিকরা প্রতিদিন ঝুঁকি নিয়ে বিশৃঙ্খলভাবে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক পার হন। কারখানার অপর প্রান্তে অবৈধভাবে পার্কিং করে রাখা হয় কারখানার স্টাফ বাস। এসব বাসে পরিবহন করা হয় ধারণ ক্ষমতার অতিরিক্ত শ্রমিক। বিভিন্ন সময় এসব বাস নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ঘটছে প্রাণহানি। এছাড়া মহাসড়কে অপ্রাপ্ত বয়স আর লাইসেন্সবিহীন অদক্ষ চালক দিয়ে চলানো হয় ফিটনেসবিহীন এসব বাস।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, বিভিন্ন কারখানার শ্রমিক পরিবহনে মহাসড়কে অবৈধভাবে সারিবদ্ধ বাস পার্কিং ও অতিরিক্ত যাত্রী পরিবহন করা হলেও হাইওয়ে পুলিশের নেই কোনো পদক্ষেপ। গাড়ি ও লোকবল সংকটের কারণে দায়সারাভাবেই চলছে হাইওয়ে পুলিশের কার্যক্রম।
এ বিষয়ে হাইওয়ে পুলিশের ভরাডোবা থানার ইনচার্জ উৎপল কুমার দাস সময় সংবাদকে জানান, মাত্র একটি গাড়ি দিয়ে চলছে তার থানার কার্যক্রম। এছাড়া জনবল পর্যাপ্ত না থাকায় ঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করতে পারছেন না তারা।
তিনি বলেন, গত ১১ অক্টোবর ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলার চেলেরঘাট এলাকায় অতিরিক্ত গার্মেন্ট শ্রমিক বহন করে যাওয়ার সময় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে দুর্ঘটনায় নিহত হয় ছয়জন। দুর্ঘটনার শিকার বাসের চালকের ছিল না কোনো লাইসেন্স। এছাড়া বাসটির ২০২০ সালের পর কোনো চালানোর ফিটনেস ছিল না। প্রায়ই এমন অনিয়ম আর ফিটনেসবিহীন যান চলাচল করায় ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে বাড়ছে দুর্ঘটনা।
এ বিষয়ে সুমনা আক্তার নামে এক পোশাক শ্রমিক জানান, অতিরিক্ত যাত্রী পরিবহন করা হয় বিভিন্ন কারখানার স্টাফ বাসে। দুই বাসের যাত্রীদের এক বাসে করে পরিবহন করায় সর্বদা ঝুঁকি নিয়েই তাদের চলাচল করতে হয়। খরচ বাঁচাতে কারখানার পক্ষ থেকে অতিরিক্ত শ্রমিক পরিবহন করা হয় স্টাফ বাসে। এছাড়া বিভিন্ন বাসের চালকদের বয়স একেবারেই কম। তাদের অনেকেরই লাইসেন্স নেই, ঠিকভাবে বাস চালাতে জানে না। তবে, কম বেতনে তাদের দিয়ে বাস চালানো যায় বলেই পরিবহন বিভাগ থেকে এমনটি করা হয়।
সড়ক পরিবহন আইন অমান্য করে এমন যান চলাচলে কর্তৃপক্ষের নেই তেমন কোনা পদক্ষেপ জানিয়ে জেলা নাগরিক আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক নুরুল আমিন কালাম সময় সংবাদকে জানান, হাইওয়ে পুলিশের কোনো কার্যক্রম না থাকায় এভাবে নিয়ম বহির্ভূতভাবে চলছে যানবাহন। মহাসড়কে এতো দুর্ঘটনার পেছনে হাইওয়ে পুলিশের নিষ্ক্রিয়তাকেই দায়ী করছেন তিনি।
ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে সড়ক পরিবহন আইন লঙ্ঘন ও বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগে গত এক মাসে বিভিন্ন পরিবহনের বিরুদ্ধে ৪ শতাধিক মামলা দিয়েছে হাইওয়ে পুলিশ। এছাড়া পুলিশের হিসেব মতে গত ২ বছর মহাসড়কে দুর্ঘটনায় শতাধিক মানুষ প্রাণ হারান। সড়ক দুর্ঘটনা এড়াতে সড়ক আইন মানার বিকল্প নেই বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
এ বছরের ১ জুন বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) ওয়েবসাইটে হালনাগাদ করা তথ্য অনুযায়ী, মে মাস পর্যন্ত দেশে নিবন্ধিত যানবাহনের সংখ্যা ৫৭ লাখ ৪১ হাজার ৮৬৩টি। যা ২০১০ সালে ছিল ১৪ লাখ ২৭ হাজার ৩৬৮টি। হিসেব অনুযায়ী, গত এক যুগে (২০১০-২২) নিবন্ধিত যানবাহন বেড়েছে ৪৩ রাখ ১৪ হাজার ৪৯৫টি। তবে বর্তমানে সারা দেশে ফিটনেসবিহীন যানবাহনের সংখ্যা প্রায় ছয় লাখ।
বাংলাদেশ সময়: ১১:০৮:৪২ ১৩০ বার পঠিত