‘কুদস’ শব্দের অর্থ পবিত্র, দোষ-ক্রটি থেকে মুক্ত। এটা আল্লাহ তাআলার ‘আসমাউল হুসনা’ বা গুনবাচক নাম সমূহের একটি নাম।
যে হাদিসের মূল কথা সরাসরি আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে এসেছে, সেই হাদিসকেই ‘হাদিসে কুদসি’ বলা হয়।
আল্লাহ তাআলার যেই কথাগুলো কোরআনুল কারিমের ‘আয়াত’ হিসেবে নাযিল করা হয়নি বরং, আল্লাহ তাআলা রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে স্বপ্নের মাধ্যমে অথবা তার অন্তরে ‘ইলহাম’ করে পাঠিয়েছেন, আর রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সেই কথাগুলো আল্লাহর পক্ষ থেকে নিজ ভাষায় তার উম্মতকে জানিয়ে দিয়েছেন, সেইগুলোকে হাদিসে কুদসি বলা হয়।
যেহেতু এই হাদিসগুলো সরাসরি আল্লাহর সাথে সম্পৃক্ত, তাই এগুলোকে ‘হাদিসে কুদসি’ নামে নামকরণ করা হয়েছে।
হাদিসে কুদসির কথাগুলো আল্লাহর, কিন্তু তার ভাষা বা বর্ণনা করেছেন রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজে। কোরআনুল কারিমের আয়াতগুলোর কথা ও ভাষা সবটাই স্বয়ং আল্লাহ তাআলার।
হাদিসে কুদসিগুলো বুখারি, মুসলিম, তিরমিজি, ইবনে মাজাহসহ অন্যান্য হাদিসের কিতাবগুলোতে লিপিবদ্ধ করা হয়েছে। হাদিসে কুদসি চেনার উপায় হচ্ছে, এই হাদিসগুলোতে রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এইভাবে বলেন, আল্লাহ তাআলা বলেছেন, বলেন বা বলবেন।
অনেকে মনে করেন হাদিসে কুদসি হিসেবে যেইগুলো বর্ণিত হয়েছে, তার সবগুলোই বুঝি সহিহ! এটা ঠিক নয়। অন্য হাদিসের মতে, হাদিসে কুদসির সনদ বা রাবীর উপর নির্ভর করে হাদিসে কুদসিও সহিহ, হাসান, জয়িফ অথবা জাল হতে পারে।
একটি বিখ্যাত হাদিসে কুদসি
হযরত আবু হুরাইরা রা. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘আল্লাহ তাআলা কিয়ামতের দিন বলবেন, ‘হে আদম সন্তান! আমি অসুস্থ ছিলাম, তুমি আমাকে দেখতে আসনি।’ মানুষ তখন বলবে, ‘হে আমার পালনকর্তা! আমি কিভাবে আপনাকে দেখতে যাব, আপনি হচ্ছেন সারা জাহানের পালনকর্তা?’ তখন আল্লাহ বলবেন, ‘তুমি কি জানতে না যে, আমার অমুক বান্দা অসুস্থ ছিল? তুমি তাকে দেখতে যাওনি। তুমি কি জানতে না যে, তুমি যদি তাকে দেখতে যেতে, তাহলে অবশ্যই তুমি আমাকে তার কাছে পেতে?’
(আল্লাহ আরো বলবেন) ‘হে আদম সন্তান! আমি তোমার কাছে খাবার চেয়েছিলাম, তুমি আমাকে খাবার দাওনি।’ মানুষ তখন বলবে, ‘হে আমার পালনকর্তা! আমি কিভাবে আপনাকে খাবার দেব, আপনি তো হচ্ছেন সারা জাহানের প্রভু?’
তখন আল্লাহ বলবেন, ‘তোমার কি জানা ছিল না যে, আমার অমুক বান্দা তোমার কাছে খাবার চেয়েছিল, কিন্তু তুমি তাকে খাবার দাওনি? তোমার কি জানা ছিল না যে, যদি তাকে খাবার দিতে, তাহলে অবশ্যই তা আমার কাছে পেতে?’
(আল্লাহ আরো বলবেন) ‘হে আদম সন্তান! তোমার কাছে আমি পানি চেয়েছিলাম, কিন্তু তুমি আমাকে পান করাওনি।’ বান্দা বলবে, ‘হে আমার পালনকর্তা! আমি কিভাবে আপনাকে পানি পান করাবো, আপনি তো হচ্ছেন সমগ্র জগতের পালনকর্তা?’
তখন আল্লাহ বলবেন, ‘আমার অমুক বান্দা তোমার কাছে পানি চেয়েছিল, তুমি তাকে পান করাওনি। তুমি কি জানতে না যে, যদি তাকে পানি পান করাতে, তাহলে তা অবশ্যই আমাকে কাছে পেতে?’ (মুসলিম ২৫৬৯, মুসনাদে আহমাদ ৮৯৮৯, রিয়াদুস সালেহিন ৯০১)
হাদিসে কুদসির মর্যাদা ও মাহাত্ম্য
মুহাদ্দিস বা হাদিসবিশারদদের মতে হাদিসে কুদসির মর্যাদা, মাহাত্ম্য কোরআন ও হাদিসের মধ্যবর্তী অবস্থান। মর্যাদার বিচারে হাদিসে কুদসির অবস্থান কোরআনের পরে আর সুন্নাহর ওপরে। কেননা কোরআনে শব্দ ও বাক্য উভয়টি আল্লাহর পক্ষ থেকে। আর সুন্নাহর শব্দ ও বাক্য উভয়ই রসুলুল্লাহ সা.-এর পক্ষ থেকে। অন্যদিকে হাদিসে কুদসির শব্দ রসুলুল্লাহ সা.-এর পক্ষ আর তার অর্থ ও মর্ম মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে। (তাইসিরু মুসতালাহুল হাদিস ১২৮ পৃষ্ঠা)
কোরআন ও হাদিসে কুদসির পার্থক্য
কোরআন ও হাদিসে কুদসি উভয়ই আল্লাহর বাণী হলেও কিছু পার্থক্য রয়েছে। ১. কোরআনের শব্দ ও মর্ম উভয়ই আল্লাহর পক্ষ থেকে। আর হাদিসে কুদসির শুধু মর্ম আল্লাহর পক্ষ থেকে। ২. সম্পূর্ণ কোরআন সন্দেহাতীত সনদে ধারাবাহিক সূত্রে বর্ণিত, কিন্তু হাদিসে কুদসি এমন নয়।
৩. কোরআন আল্লাহ কর্তৃক শতভাগ সংরক্ষিত। হাদিসে কুদসিও সংরক্ষিত, তবে কোরআনের মতো নয়। ৪. নামাজে কোরআন তিলাওয়াত আবশ্যক। অন্যদিকে নামাজে কিরাতের পরিবর্তে হাদিসে কুদসি তিলাওয়াত করা বৈধ নয়। ৫. কোরআন মহানবী সা.-এর জন্য মুজিজা (অলৌকিক), কিন্তু হাদিসে কুদসি মুজিজা নয়। (হাদিসে কুদসি, পৃষ্ঠা ১-২)
বাংলাদেশ সময়: ১১:১৫:৩০ ৯৭ বার পঠিত