ইসরায়েলে স্থানীয় সময় মঙ্গলবার রাত ৮টায় (বাংলাদেশ সময় রাত ১২টা) দেশটির পূর্ণ মন্ত্রিসভার বৈঠক বসবে বলে দেশটির প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় জানিয়েছে। হামাসের হাতে জিম্মিদের মুক্তির আলোকে এ বৈঠক হবে।
একাধিক গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরায়েলি কর্মকর্তারা হামাসের সঙ্গে জিম্মি মুক্তির চুক্তিতে চূড়ান্ত অনুমোদন দিতে বৈঠক করছেন। রাত ৮টার বৈঠকের আগে যুদ্ধকালীন মন্ত্রিপরিষদ ও নিরাপত্তাসংক্রান্ত মন্ত্রিসভাও চুক্তিটি ঠিক করতে বৈঠক করবে।
এর আগে দক্ষিণ ইসরায়েলে সংরক্ষিত সেনাদের সঙ্গে বৈঠকে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, ‘আমরা একটি চুক্তির দিকে অগ্রসর হচ্ছি। আমি মনে করি না যে আমার এখনই খুব বেশি বলা উচিত। তবে আমি আশা করি শিগগিরই আমাদের কাছে সুসংবাদ আসবে।’
এর আগে চ্যানেল ১২ নিউজের প্রতিবেদনে একজন জ্যেষ্ঠ ইসরায়েলি কর্মকর্তাকে উদ্ধৃত করে বলা হয়েছে, ‘আমরা একটি চুক্তির খুব কাছাকাছি।
এখনো প্রযুক্তিগত সমস্যাগুলো সমাধান করা বাকি রয়েছে উল্লেখ করে ওই কর্মকর্তা বলেছেন, কমপক্ষে ৫০ জনকে মুক্ত করতে একটি চুক্তি হতে পারে। প্রাথমিকভাবে কয়েক দিনের পরিকল্পিত যুদ্ধবিরতি বাড়ানোর বিনিময়ে আরো কয়েক ডজন জিম্মিকে মুক্তি দেওয়া হতে পারে।
প্রতিবেদন অনুসারে, কয়েক দিনের মধ্যে পর্যায়ক্রমে ৪০ শিশু ও তাদের মা এবং অন্য নারীদের মুক্তি দেওয়া হবে বলে আশা করা হচ্ছে। বিনিময়ে ইসরায়েল প্রায় ৩০০ ফিলিস্তিনিকে মুক্ত করবে বলে জানা গেছে, তাদের মধ্যে নারী ও নাবালক থাকবে।
এ বিনিময় এগিয়ে যাওয়ার সঙ্গে যুদ্ধে একটি বিরতি হবে বলেও জানা গেছে।
কিছু প্রতিবেদন অনুসারে, যুদ্ধবিরতির সময় ইসরায়েল দিনে কয়েক ঘণ্টার জন্য গাজার আংশিক বা পুরো অংশ পর্যবেক্ষণ করতে ড্রোন ব্যবহার বন্ধ রাখবে।
ইসরায়েল ডেমোক্রেসি ইনস্টিটিউটের মোরান ক্যান্ডেলশটাইন-হাইনার মতে, ফিলিস্তিনি বন্দিদের মুক্ত করাসহ যেকোনো জিম্মি মুক্তি চুক্তি অনুমোদনের জন্য বৃহত্তর মন্ত্রিসভার সমর্থন প্রয়োজন।
অন্যদিকে হামাস ও ইসলামিক জিহাদের সূত্র নাম প্রকাশ না করার শর্তে এএফপিকে বলেছে, অস্থায়ী চুক্তিতে জিম্মি ও ফিলিস্তিনি বন্দিদের বিনিময় এবং পাঁচ দিনের যুদ্ধবিরতি অন্তর্ভুক্ত থাকবে।
নেতানিয়াহু অবশ্য তার মন্তব্যে যুদ্ধবিরতির কোনো উল্লেখ করেননি, ‘আমরা নিরাপত্তা পুনরুদ্ধার করতে চাই, আমরা কাজ করব এবং দক্ষিণ ও উত্তর (গাজা)—উভয় ক্ষেত্রেই নিরাপত্তা ফিরিয়ে আনব।
ইসরায়েল-লেবানন সীমান্তে সেনাদের উদ্দেশে নেতানিয়াহু বলেন, ‘আমি আপনাদের অভিনন্দন জানাতে চাই এবং আপনাদের বলতে চাই, আমরা বিজয় না হওয়া পর্যন্ত (যুদ্ধ) চালিয়ে যাব।’
এ ছাড়া কাতার বলেছে, তারা জিম্মিদের মুক্তির জন্য চুক্তি চূড়ান্ত করার বিষয়ে ‘খুব আশাবাদী’।
কাতারি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ড. মাজেদ আল আনসারি এক্সে একটি পোস্টে বলেছেন, ‘আমরা একটি চুক্তি নিয়ে কাজ করছি এবং আমরা এখন পর্যন্ত পৌঁছনো এবং একটি চুক্তির সবচেয়ে কাছাকাছি অবস্থানে আছি। আমরা খুব আশাবাদী। তবে আমরা একটি মানবিক যুদ্ধবিরতিতে পৌঁছতে এই মধ্যস্থতার জন্য খুব আগ্রহী।’
তবে চুক্তির বিস্তারিত বিষয়ে আনসারি আর কোনো মন্তব্য করতে পারবেন না জানিয়ে বলেছেন, একটি চূড়ান্ত চুক্তির জন্য তিনি অপেক্ষা করছেন।
৭ অক্টোবর হামাসের শত শত যোদ্ধার আন্তঃসীমান্ত হামলার প্রতিক্রিয়ায় ইসরায়েল গাজায় একটি বড় সামরিক অভিযান শুরু করে। সেই হামলায় প্রায় এক হাজার ২০০ মানুষ নিহত হয় এবং প্রায় ২৪০ জন জিম্মি হয় বলে তেল আবিব জানিয়েছে। অন্যদিকে হামাস শাসিত গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলছে, ইসরায়েল তার প্রতিশোধমূলক অভিযান শুরু করার পর থেকে ওই অঞ্চলে অন্তত ১৩ হাজার মানুষ নিহত হয়েছে।
সূত্র : টাইমস অব ইসরায়েল, এএফপি
বাংলাদেশ সময়: ২২:৫১:২৩ ৮৩ বার পঠিত