জয়পুরহাটে খুচরা বাজারে আবারো বেড়েছে আলুর দাম। এতে বিপাকে পড়েছেন ক্রেতা সাধারণ। তবে ট্রাক সেল বন্ধ হওয়ায় এমনটা হতে পারে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
হিমাগার কর্তৃপক্ষ জানান, প্রতি কেজি আলুর পাইকারি মূল্য ৩০-৩১ টাকা হলেও খুচরা বাজারে মনিটরিং না থাকায় ৪৫-৫৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, জয়পুরহাটে আলু সংরক্ষণের জন্য রয়েছে ১৯টি হিমাগার। এসব হিমাগারে মৌসুমের শুরুতেই কৃষক ও ব্যবসায়ীরা এক লাখ ৬৫ হাজার ১০৪ মেট্রিক টন আলু সংরক্ষণ করেছিলেন। এরপরও বিগত বছরগুলোর তুলনায় সব রেকর্ড ভেঙে এবার প্রতি মণ স্টিক আলু দুই হাজার টাকা এবং গুটি আলু ২ হাজার ৮০০ অর্থাৎ ৫০ টাকা ও ৭০ টাকা কেজি দরে বেচাকেনা হয়।
সংরক্ষণের পর প্রায় দুই মাস পর্যন্ত যখন আলুর ঊর্ধ্বগতির বাজার কিছুতেই কমানো যাচ্ছিল না, ঠিক সেই সময়ে সারা দেশের ন্যায় উত্তরের জেলা জয়পুরহাটেও ট্রাক সেলে ৩৬ টাকা কেজি দরে আলু বিক্রির ব্যবস্থা করেন জেলা প্রশাসন। এতে করে কিছুটা স্বস্তিও পান ক্রেতা সাধারণ। কিন্তু হঠাৎ করেই সেটি বন্ধ হওয়ায় আবারো খুচরা বাজারে আলুর মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে। এ অবস্থায় চরম বিপাকে পড়েছেন ক্রেতারা।
জয়পুরহাট শহরের নতুন হাটে বাজার করতে আসা আব্দুর রাজ্জাক ও মোহসিনা বেগম জানান, আলু উৎপাদনের জেলা জয়পুরহাটেই আলুর দাম কমছে না। বিগত দুই আড়াই মাস থেকে আলুর মূল্য বৃদ্ধি। তবে মাঝখানে কয়েক দিন ট্রাক সেলে আলু পেয়েছিলাম ৩৬ টাকা কেজি দরে। সেই প্রভাব অবশ্য আমরা খুচরা বাজারেও পেয়েছিলাম।
জয়পুরহাটের কালাই উপজেলার এম ইশরাত হিমাগারের ব্যবস্থাপক রায়হান আলম বলেন, বর্তমানে হিমাগারে প্রতি কেজি আলু দাম ৩০-৩১ টাকার বেশি নয়। এ ছাড়াও ট্রাক সেলের জন্য ২৭ টাকা কেজি দরে পাইকারি বেচাকেনা হয়। তবে কেন খুচরা বাজারে বেশি দামে আলু বিক্রি হচ্ছে সেটা আমার জানা নেই।
ওই উপজেলার পুনট কোল্ড স্টোরেজের হিসাবরক্ষক এনামুল হক জানান, ইদানিং প্রত্যেক দিন প্রতি বস্তা আলুতে ১০০ থেকে ২০০ টাকা দাম কমে যাচ্ছে। অথচ খুচরা বাজারে এর প্রভাব পড়ছে না। এজন্য বাজার মনিটরিং আরও জোরদার করা প্রয়োজন।
এ বিষয়ে জেলা জেলা বাজার বিপণন কর্মকর্তা রতন কুমার রায় বলেন, বাজার সহনীয় অবস্থায় আনতে জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় ট্রাক সেলে আলু বিক্রির উদ্যোগ গ্রহণ করি। ২ নভেম্বর থেকে ১১ নভেম্বর পর্যন্ত পরিচালনাও করেছি। কিন্তু দেখা গেছে, খুব একটা বিক্রি হয় না। যে কারণে আমরা ট্রাক সেল বন্ধ করতে বাধ্য হই। তবে ইদানিং খেয়াল করছি- আবারো আলুর মূল্য লাগামহীন হয়েছে।
এ বিষয়ে জয়পুরহাটের জেলা প্রশাসক সালেহীন তানভীর গাজী বলেন, আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, খুব শিগগিরই আবারো ট্রাক সেলে আলু বিক্রি শুরু করবো।
জেলা কৃষি বিপণন কার্যালয়ের হিসাব অনুযায়ী, জয়পুরহাটের ৫টি উপজেলায় পরিচালিত ১৯টি হিমাগারে বর্তমানে খাবার আলু রয়েছে ৬ হাজার ২২৫ মেট্রিক টন ও বীজ আলু রয়েছে ৬ হাজার ৬৮ মেট্রিক টন। (শতকরা হিসেবে: খাবার আলু রয়েছে মাত্র ৪ % এবং বীজ আলু রয়েছে ১৬ %) জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের তথ্য মতে: ২০২২-২৩ মৌসুমে ৩৮ হাজার ৩৬৫ হেক্টর জমিতে আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধার্য করা হয়। তবে চাষ হয়েছিল ৩৮ হাজার ৩৬৮ হেক্টর জমিতে; আর উৎপাদন হয় ৯ লাখ ২৩ হাজার ২০০ মেট্রিক টন আলু।
বাংলাদেশ সময়: ১৩:০১:২৪ ৯৪ বার পঠিত