গাজা সংকট নিরসন চেষ্টায় কাতারে একত্রিত হয়েছে পারস্য উপসাগরীয় ছয় আরব দেশ বাহরাইন, সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই), সৌদি আরব, ওমান এবং কুয়েত ও কাতার। ফিলিস্তিনের জন্য আন্তর্জাতিক পদক্ষেপ আরও জোরালো করার প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে ৪৪তম এই গালফ বৈঠকে যুক্ত হয়েছেন তুর্কিয়ে প্রেসিডেন্ট রিসেপ তায়্যিপ এরদোগানও।
মঙ্গলবার কাতারের রাজধানী দোহায় উপসাগরীয় সহযোগিতা পরিষদের (জিসিসি) শীর্ষ সম্মেলনে উদ্বোধনী বক্তব্য দেন কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানি।
কাতারের আমির বলেন, গাজায় নারী ও শিশুসহ নিরপরাধ বেসামরিক নাগরিকদের পরিকল্পিত এবং উদ্দেশ্যমূলক হত্যা অব্যাহত রয়েছে। দুই মাসেরও বেশি সময় ধরে ইসরায়েল কর্তৃক এই গণহত্যা চলতে দেওয়া আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের জন্য লজ্জাজনক। ফিলিস্তিনি বেসামরিক নারী ও শিশুদের হত্যাকাণ্ড থেকে মুখ ফিরিয়ে নেওয়াকে আন্তর্জাতিক শক্তিগুলোর দ্বৈত মানবাধিকার নীতি বলে কটাক্ষও করেন তামিম আল থানি।
সাময়িক যুদ্ধ বিরতি যথেষ্ট নয় উল্লেখ্য করে তিনি দ্রুত গাজায় দ্রুত স্থায়ী যুদ্ধ বিরতির আহ্বান জানান এবং কাতার এখনো পুনরায় যুদ্ধ বিরতির প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বলে উল্লেখ করেন।
সম্মেলনে তুর্কিয়ে প্রেসিডেন্ট রিসেপ তায়্যিপ এরদোগান বলেন, এই মুহূর্তে গাজায় স্থায়ী যুদ্ধবিরতি কার্যকর ও মানবিক সহায়তা প্রেরণ নিশ্চিত করা জরুরি। ইসরায়েলের যুদ্ধাপরাধ ও গাজায় মানবতাবিরোধী হত্যাকাণ্ডের বিরুদ্ধে আমাদের যৌথভাবে কথা বলা উচিত।
ফিলিস্তিনের প্রতিরোধ যুদ্ধকে তিনি জাতীয় সংগ্রাম আখ্যা দিয়ে বলেন, ইসরায়েলি দখলদারিত্ব এবং এই দখলদারিত্বের অধীনে থাকা ফিলিস্তিনি জনগণের মধ্যে একটি জাতীয় সংগ্রাম। সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে চলা এই লড়াইয়ে ইসরায়েলি দখলদারিত্বের অবসান ঘটানোই সমাধান।
জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের প্রতি ইসরায়েলকে আন্তর্জাতিক আইন ও দ্বিরাষ্ট্র সমাধানে জাতিসংঘের নির্দেশনা মেনে চলতে বাধ্য করার আহ্বান জানান তুর্কিয়ে প্রেসিডেন্ট এরদোগান।
এর আগে গত সোমবার ইস্তাম্বুলে ওআইসির অর্থনৈতিক ফোরামের স্থায়ী কমিটির ৩৯তম অধিবেশনে দেয়া ভাষণে তুর্কিয়ে প্রেসিডেন্ট এরদোগান বলেন, গাজা এবং ফিলিস্তিনকে রক্ষা করার অর্থ জেরুজালেম, মক্কা, মদিনা, ইস্তাম্বুল, দামেস্ক, বৈরুত, বাগদাদ এবং অন্যান্য মুসলিম অঞ্চলকে রক্ষা করা। মুসলিম বিশ্ব হিসেবে আমাদের কর্তব্য হল গাজার এক ইঞ্চি জমিও ইসরায়েলকে আক্রমণ করার জন্য ছেড়ে না দেওয়া। এটা শুধু আমাদের গাজান, ফিলিস্তিনি ভাই-বোনদের জন্য নয়, আমাদের নিজেদের নিরাপত্তা ও আঞ্চলিক অখণ্ডতার জন্য।
মুসলিম বিশ্বকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ফিলিস্তিনের মানুষের বাঁচার অধিকার ও ভূখণ্ডের অধিকার আদায়ে বিশ্বমঞ্চে আমাদের কণ্ঠ সব সময় জোরালো রাখব। ‘খুনি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াকে যুদ্ধাপরাধের দায়ে বিচারের মুখোমুখি দাঁড় করাতে আমরা দৃঢ় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ’ যোগ করেন এরদোগান।
এদিকে গত ৭ অক্টোবর থেকে এ পর্যন্ত গাজায় অন্তত ১৫ হাজার ৮৯৯ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। সরকারিভাবে প্রায় ১১ শ ইসরায়েলি নাগরিকের মৃত্যুর কথা জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
উল্লেখ্য, গাজা সংকটের শুরুর দিকে আরব দেশগুলো নিজেদের করণীয় ঠিক করতে মিশরে মিলিত হয়েও কার্যকর কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছতে পারেনি আরব নেতারা। পরে সৌদি যুবরাজের আমন্ত্রণে রিয়াদে পুনরায় বৈঠকে বসে আরব ও ওআইসিভুক্ত মুসিলশ দেশগুলোর নেতারা। রিয়াদে তুর্কিয়ে প্রেসিডেন্ট ইসরায়েলের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করাসহ শক্ত পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানান। কিন্তু সংযুক্ত আরব আমিরাত, বাহরাইন এবং মরক্কোর বাধার কারণে সম্মিলিত সিদ্ধান্তে পৌঁছানো সম্ভব হয়নি। ধারণা করা হচ্ছে ফিলিস্তিনিদের স্বার্থ রক্ষায় অগ্রধিকার দিতে এবারের গালফ সম্মেলনে হাজির হয়েছেন এরদোগান।
বাংলাদেশ সময়: ২৩:২৩:০৫ ১২১ বার পঠিত