লোহিত সাগরে নিরাপত্তা রক্ষায় যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন জোট বাহিনীতে যোগ দিচ্ছে অস্ট্রেলিয়া। অস্ট্রেলীয় প্রতিরক্ষামন্ত্রী এই তথ্য জানিয়েছেন। এদিকে এই জোট বাহিনীতে যোগ দেওয়ার বিষয়টি খতিয়ে দেখার কথা জানিয়েছে জার্মানি।
এর আগে লোহিত সাগরে ইয়েমেনের সশস্ত্র বিদ্রোহীগোষ্ঠী হুথিদের হামলা মোকাবিলায় সম্প্রতি ১০ দেশের জোট গঠন করে যুক্তরাষ্ট্র। বৃহস্পতিবার (২১ ডিসেম্বর) পৃথক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা ও বার্তাসংস্থা আনাদোলু।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অস্ট্রেলিয়া মার্কিন নেতৃত্বাধীন লোহিত সাগর বাহিনীতে যোগ দেবে বলে জানিয়েছেন অস্ট্রেলীয় প্রতিরক্ষামন্ত্রী রিচার্ড মার্লেস। তিনি বলেছেন, লোহিত সাগরে মার্কিন নেতৃত্বাধীন প্রোসপারিটি গার্ডিয়ান অভিযানের অংশ হিসাবে অস্ট্রেলিয়া সেখানে ‘অতিরিক্ত ছয়’ অস্ট্রেলিয়ান সৈন্য পাঠাবে।
সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে তিনি বলেছেন, ‘অস্ট্রেলীয় সরকার মধ্যপ্রাচ্য এবং আশপাশের অঞ্চলে আন্তর্জাতিক শৃঙ্খলা রক্ষায় সহায়তা করতে যুক্তরাষ্ট্র এবং অন্যান্য অংশীদারদের সাথে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।’
মূলত লোহিত সাগরে বিভিন্ন জাহাজে একের পর এক হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইয়েমেনের সশস্ত্র বিদ্রোহীগোষ্ঠী হুথি। ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের অব্যাহত বোমাবর্ষণের প্রতিবাদে এসব হামলা চালানোর দাবি করেছে তারা।
এতে করে ওই অঞ্চলে বাণিজ্যিক জাহাজ চলাচল বেশ ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। এই পরিস্থিতিতে লোহিত সাগরে হুথি বিদ্রোহীদের হামলা মোকাবিলায় সম্প্রতি ১০ দেশের জোট গঠনের ঘোষণা দেয় যুক্তরাষ্ট্র। হুথিদের হামলা ঠেকাতে এসব দেশ সমন্বিতভাবে কাজ করবে।
এই জোটে যোগ দেওয়া দেশগুলো হচ্ছে- যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, বাহরাইন, কানাডা, ফ্রান্স, ইতালি, নেদারল্যান্ডস, নরওয়ে, সিসিলিস এবং স্পেন। অস্ট্রেলিয়া এখন এই জোট বাহিনীতে যোগ দেওয়ার কথা জানালেও প্রাথমিক ১০ দেশের তালিকায় দেশটির নাম ছিল না।
এদিকে পৃথক প্রতিবেদনে আনাদোলু বলেছে, লোহিত সাগরে চলাচলকারী জাহাজগুলোর সুরক্ষায় মার্কিন নেতৃত্বাধীন নৌবাহিনীতে যোগ দেওয়ার জন্য সামরিক বিষয়াদি এবং আইনি দিকগুলো জার্মানি পরীক্ষা করছে বলে বুধবার দেশটির এক সরকারি মুখপাত্র জানিয়েছেন।
বার্লিনে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে স্টেফেন হেবেস্ট্রেট বলেন, বেসামরিক জাহাজকে লক্ষ্য করে হামলা এবং লোহিত সাগরে সামুদ্রিক বাণিজ্যে বিঘ্ন ঘটানো গ্রহণযোগ্য নয়। তিনি বলেছেন, জার্মানির এই মিশনে অংশগ্রহণের কোনও সুযোগ আছে কি না আমরা এখন পরীক্ষা করছি। এর মধ্যে আইনি কাঠামো, লজিস্টিক সমস্যা এবং সামরিক বিষয়গুলো নিয়েও আলোচনা চলছে।
তিনি আরও বলেন, ‘জার্মান সেনাবাহিনী একটি সংসদীয় সেনাবাহিনী। তার মানে এই ধরনের মিশনে অংশগ্রহণের জন্য সংসদের ম্যান্ডেট প্রয়োজন। চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত সংসদই নেবে।’
একই ব্রিফিংয়ে জার্মান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ক্রিশ্চিয়ান ওয়াগনার বলেন, বর্তমানে ন্যাটো মিত্র ও ইউরোপীয় অংশীদারদের মধ্যে এ বিষয়ে আলোচনা চলছে। তিনি বলেন, ‘আমরা আমাদের ইউরোপীয় এবং মার্কিন অংশীদারদের সাথে আলোচনা করছি কিভাবে এসব আক্রমণকে ব্যর্থ করা যায় এবং এর মধ্যে এই অপারেশনে আমাদের সম্ভাব্য অংশগ্রহণের বিষয়টিও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘কিন্তু বর্তমানে এ বিষয়ে অভ্যন্তরীণ আলোচনা চলছে। এই পর্যায়ে, আমি সম্ভাব্য ফলাফল সম্পর্কেও আগাম বলতে পারব না।’
উল্লেখ্য, ইরান-সমর্থিত হুথি বিদ্রোহীরা লোহিত সাগরে ট্যাংকার, মালবাহী জাহাজসহ অন্যান্য জাহাজের ওপর সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে হামলা বাড়িয়েছে। বৈশ্বিক বাণিজ্যের প্রায় ১২ শতাংশ এই লোহিত সাগর রুট দিয়েই হয়ে থাকে। আর হুথিদের হামলা এই ট্রানজিট রুটকে বাধাগ্রস্ত করছে।
মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিন বলেছেন, ‘সকল দেশের জন্য ন্যাভিগেশনের স্বাধীনতা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে এবং আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও সমৃদ্ধি জোরদার করার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করবে এই নিরাপত্তা জোট।’
বাংলাদেশ সময়: ১১:৩৫:২২ ৯১ বার পঠিত