আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রচারণার শেষ মূহুর্তে শ্লোগান-মিছিলে জমে উঠেছে ফরিদপুর-১ আসনে (বোয়ালমারী-মধুখালী-আলফাডাঙ্গা) নির্বাচনী এলাকা। ভোটের মাঠে বিএনপি-জামায়াত না থাকলেও ভোটের মাঠ মাতিয়ে রেখেছেন আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী, বিএনএম ও স্বতন্ত্র প্রার্থী। তবে এ আসনে ৫ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলেও মাঠ সরগরম করছেন সামনের সারিতে থাকা তিন প্রার্থী। কয়েকদিন ধরে ঈগলের উপরে উপরে ডাক থাকলেও শেষ মূহুর্তে বড় বড় শ্লোগান-মিছিলে নৌকার পালে হাওয়া লেগেছে।
তবে এই আসনটি স্বাধীনতা পর থেকে আওয়ামী লীগের ঘাঁটি হিসেবে রাজনৈতিক অঙ্গনে পরিচিত।
বৃহস্পতিবার বিকেল থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত মধুখালী, বোয়ালমারী ও আলফাডাঙ্গার বিভিন্ন এলাকায় নৌকার সমর্থকদের সভা সমাবেশ ও মিছিলে মিছিলে মুখর হয়ে ওঠে নির্বাচনী এলাকা।
আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, ফরিদপুর-১ আসনে নবম ও দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে টানা দুইবার সংসদ সদস্য ছিলেন বর্তমান আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম মেম্বার বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রহমান। দুইবার এমপি হয়ে এলাকায় ব্যাপক উন্নয়ন করে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন চুড়ান্ত হওয়ার আগে আলোচনায় ছিলেন তিনি।
তবে একাদশ সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন থেকে বাদ পড়েন আব্দুর রহমান। ওই নির্বাচনে মনোনয়ন পেয়ে এ আসনে দলীয় প্রতীক নৌকা নিয়ে সংসদে যান সাবেক এলজিআরডি সচিব মনজুর হোসেন। তিনি এলাকায় বেশি থাকেন না বলে রাজনৈতিক নেতাদের জনপ্রতিনিধি হিসেবে জোরেসোরেই দ্বাদশ আসেন কয়েকজন রাজনৈতিক নেতা। তাদের মধ্যে সর্বোচ্চ স্থানে জায়গা করে নেওয়া কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক দুইবারের আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম মেম্বার বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রহমান দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন পান।
তিনি ২০০৮ সালে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ১ লাখ ৫ হাজারের বেশি ভোট পেয়েছিলেন। সেই সময় বর্তমান বিএনএমের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান শাহ মোহাম্মদ আবু জাফর প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আসেন। ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সাবেক দুইবারের আরেক সংসদ সদস্য (১৯৯৬ ও ২০০১) কাজী সিরাজুল ইসলাম ২৫ হাজার ভোট পেয়ে জামানত হারান। আব্দুর রহমান দশম সংসদ নির্বাচনে দ্বিতীয়বার বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন।
গত কয়েক বছর আব্দুর রহমান নিজের দক্ষতায় নির্বাচনী এলাকায় দলকে সাংগঠনিকভাবে একতাবদ্ধ রেখেছেন।
যার ফলে এ আসনের আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ৭৫ ভাগ নেতাকর্মীরাই তার সমর্থক। তাই নির্বাচনকে সামনে রেখে নেতাকর্মীরা এক হয়ে নৌকা মার্কার বিজয় নিশ্চিত করতে মাঠে নেমেছেন। দলের সিনিয়র নেতারা প্রতিনিয়ত আসনটির বিভিন্ন এলাকা, পাড়া মহল্লায় নির্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছেন জোরেশোরে। বিভিন্ন স্থানে সভা সমাবেশে উঠান বৈঠকসহ নানামুখী প্রচারণায় মাঠ কাঁপাচ্ছেন নৌকা প্রতীকের সমর্থকরা। এ আসনে স্বাধীনতার পর থেকে আওয়ামী লীগের আসন হিসেবে ফরিদপুর-১ আসনটি পরিচিত। বৃহস্পতিবার বিকেল থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত মধুখালী, বোয়ালমারী ও আলফাডাঙ্গার বিভিন্ন এলাকায় নৌকার সমর্থকদের সভা সমাবেশ ও মিছিলে মিছিলে মুখর হয়ে ওঠে নির্বাচনী এলাকা।
অন্যদিকে তার প্রতিদ্বন্দ্বী বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের (বিএনএম) প্রার্থী দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ৪ বারের বিভিন্ন দল থেকে সাবেক সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা শাহ্ মোহাম্মদ আবু জাফর লড়ছেন নোঙর প্রতীক নিয়ে। নির্বাচনের আগে বিএনপি ছেড়ে তিনি বিএনএম নামে নতুন দল গঠন করেন। তার সাথে তিন উপজেলার বিএনপির অধিকাংশ ছোটপদের নেতাকর্মীরা মাঠে নেমে নির্বাচন করছেন। তবে বিএনপির পদধারী নেতাকর্মীরা ভোটের মাঠে যাচ্ছেন না বলে অনেকের সাথে কথা বলে জানা গেছে।
এদিকে রাজনৈতিক দুই নেতার মাঝখানে ফরিদপুর-১ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ঈগল প্রতীক নিয়ে মাঠে লড়ছেন সাংবাদিক আরিফুর রহমান দোলন। কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বী দুই প্রার্থীর চেয়ে প্রচার প্রচারণায় পিছিয়ে নেই তিনি। সভা সমাবেশ, শোডাউনে করে নির্বাচনী মাঠ সরগরম করে তুলেছেন দোলন। শেষ মুহূর্তে তিনিও সভা সমাবেশে ব্যস্ত ছিলেন তিনিসহ সমর্থকরা।
ব্যানার পোস্টার ও প্রচার প্রচারণায় পৌর শহর থেকে শুরু করে গ্রাম, পাড়া মহল্লার চায়ের দোকানেও নির্বাচনি হাওয়া বইছে। কোথাও কোথাও ঘটছে দলীয় ও স্বতন্ত্র কর্মীদের রেশারেশি। তবে নির্বাচনী মাঠ সুষ্ঠু স্বাভাবিক রাখতে তৎপর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। ইতিমধ্যেই গত ২৯ ডিসেম্বর থেকে মাঠে নেমেছেন বিজিবি এবং বাংলাদেশ সেনাবাহিনী গত ৩ জানুয়ারি থেকে নির্বাচনী এলাকায় রয়েছে।
এ আসনে আরো জাতীয় পার্টির আখতারুজ্জামান খান (লাঙ্গল), বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টির নুর ইসলাম শিকদার (একতারা) নিয়ে নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন। তবে ভোটের মাঠে তাদের তেমন পদচারণা দেখা যাচ্ছে না।
বোয়ালমারী সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ফরিদপুর-১ (বোয়ালমারী-মধুখালী-কালুখালীআলফাডাঙ্গা) আসনে ভোট ভোটার সংখ্যা-৪ লাখ ৭৮ হাজার ৯৬৫ জন। ১৯৬ টি কেন্দ্রে ভোটাররা তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন।
বাংলাদেশ সময়: ২৩:৪৫:২৩ ১১৩ বার পঠিত #নির্বাচন ২০২৪