জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে (আইসিজে) গাজায় গণহত্যার অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে ইসরাইল। শুক্রবার (১২ জানুয়ারি) নেদারল্যান্ডসের হেগে দক্ষিণ আফ্রিকার দায়ের করা মামলার শুনানির দ্বিতীয় ও শেষ দিন গণহত্যার অভিযোগকে ‘অতি বিকৃত অভিযোগ’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন ইসরাইলের আইনজীবী।
জাতিসংঘের শীর্ষ আদালতে ইসরাইলের বিরুদ্ধে মামলাটি করেছে দক্ষিণ আফ্রিকা। গত বৃহস্পতিবার (১১ জানুয়ারি) মামলার শুনানি শুরু হয়। শুনানিতে দক্ষিণ আফ্রিকার আইনজীবীরা বলেন, গাজায় ইসরাইলের সামরিক অভিযান একটি রাষ্ট্র-পরিচালিত গণহত্যার অভিযান। ইসরাইলের এই অভিযানের লক্ষ্য ফিলিস্তিনি জনগণকে নিশ্চিহ্ন করা।
শুনানির দ্বিতীয় ও শেষদিন শুক্রবার (১২ জানুয়ারি) পাল্টা বক্তব্য ও যুক্তি উপস্থাপন করে ইসরাইল। বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদন মতে, গাজায় সামরিক অভিযান বন্ধে দক্ষিণ আফ্রিকার অনুরোধ খারিজ করার জন্য বিচারকদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে ইসরাইল। তাদের দাবি, অভিযান বন্ধ হলে গাজাবাসী ‘নিরাপত্তাহীন হয়ে পড়বে’।
এছাড়া গণহত্যা কনভেনশনের অধীনে গাজা উপত্যকায় সামরিক অভিযান বন্ধের আদেশ দেয়ার এখতিয়ার আইসিজের নেই বলেও মন্তব্য করেছেন ইসরাইলি আইনজীবী।
আদালতে ইসরাইলের পক্ষে শুনানিতে অংশ নেয়া আইনজীবী টাল বেকার বলেছেন, ‘ঘটনার যে ব্যাখ্যা দক্ষিণ আফ্রিকা তুলে ধরছে তা অতি বিকৃত। যদি কোনও গণহত্যার ঘটনা ঘটে থাকে তাহলে তা ইসরাইলের বিরুদ্ধে হয়েছে। হামাস ইসরাইলের বিরুদ্ধে গণহত্যা পরিচালনা করতে চায়।’
ইসরাইলি আইনজীবী দাবি করেছেন, ‘হামাসের কৌশলের কারণে ফিলিস্তিনি বেসামরিক নাগরিকদের দুর্ভোগ হচ্ছে। ইসরাইলের নিজেকে রক্ষার অধিকার রয়েছে।’
টাল বেকার আরও দাবি করেছেন, ‘হামাসের বিরুদ্ধে প্রতিরক্ষা যুদ্ধ করছে ইসরাইল; ফিলিস্তিনি জনগণের বিরুদ্ধে নয়। ইসরাইল চায় হামাস যাতে সফল না হয়। গণহত্যার একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হলো জনগোষ্ঠীকে আংশিক বা পুরোপুরি ধ্বংস করার অভিপ্রায়, যা ইসরাইলের এই অভিযানে নেই।’
গত বছরের ৭ অক্টোবর ইসরাইলের দক্ষিণাঞ্চলে হামলা চালায় হামাস যোদ্ধারা। ইসরাইলের দাবি, এতে তাদের ১ হাজার ১৩৯ জন নিহত হয়েছে। ওইদিন ২৪০ জনকে জিম্মি করে নিয়ে যায় হামাস যা গোষ্ঠীটি স্বীকারও করেছে। তবে অস্থায়ী যুদ্ধবিরতির অংশ হিসেবে ১০৫ জিম্মিকে মুক্তি দেয়া হয়েছে।
হামাসের ওই হামলার পর গাজায় সর্বাত্মক আগ্রাসন শুরু করে ইসরাইল। যার অংশ হিসেবে তিন মাসেরও বেশি সময় ধরে বিমান হামলা ও স্থল অভিযান চালাচ্ছে দেশটির সেনাবাহিনী।
এতে গাজা উপত্যকা কার্যত ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। এছাড়া এখন পর্যন্ত ২৩ হাজারেরও বেশি নিরীহ ফিলিস্তিনি নিহত ও প্রায় ৬০ হাজার আহত হয়েছে। উদ্বাস্তু হয়েছে প্রায় ১৯ লাখ মানুষ।
বাংলাদেশ সময়: ২০:১০:২৫ ৮২ বার পঠিত