জামালপুর প্রতিনিধি : জামালপুরে সরিষাবাড়ীতে কালভার্টের মুখ বন্ধ করে পুকুর খনন করায় প্রায় ৩০০ হেক্টর আবাদি জমি আগামী মৌসুমে এক পাশে জলাবদ্ধতা আরেকপাশে পানি সংকটে পড়বে বলে শঙ্কা করছেন কৃষকরা। তারা বলছেন, যদি সময় মতো চাষাবাদ না করতে পারেন, তাহলে কয়েক কোটি টাকার ফসল উৎপাদন হতে বঞ্চিত হবেন তারা।
কৃষকদের এমন অভিযোগের ভিত্তিতে সোমবার (১৫ জানুয়ারি) সকালে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার ডোয়াইল ইউনিয়নের চাপারকোনো উত্তর পাড়া এলাকায় এলজিইডির অর্থায়নে নির্মিত একটি বক্স কালভার্টের মুখ মাটি দিয়ে ভরাট করে ফেলেছে ওই এলাকার নূরুল ইসলাম নামে এক প্রভাবশালী ব্যক্তি। সে কালভার্টের মুখ বন্ধ করে সেখানে পুকুর খনন করছে।
দেখা গেছে, ওই কালভার্টের দুই পাশে প্রায় ৩০০ হেক্টর আবাদি জমি রয়েছে। যে জমিগুলো আগামী বর্ষা মৌসুমে বন্যার পলিমাটি থেকে বঞ্চিত হবে এবং অতিমাত্রা বর্ষণের ফলে পানি নিষ্কাশনের রুদ্ধতায় জলবদ্ধতা সৃষ্টি হবে। এতে এলাকার কৃষকরা সময়মতো চাষাবাদ করতে পারবেন না বলে সংশয়ের অভিযোগ তুলেছেন।
পুকুর খননকারী চাপারকোনো গ্রামের আব্দুল হাকিমের ছেলে নূরুল ইসলাম বলেন, কালভার্টের সঙ্গে জমিটি আমাদের। আমরা এ জমিতে আমি পুকুর কাটছি এতে কার কী ? আমাদের জমিতে আমরা যা ইচ্ছে তাই করতে পারি। জমিতে ফসলাদি ঠিকমতো হয় না। তাই আমি পুকুর বানাচ্ছি। আমি কালভার্টের মুখ বন্ধ করছি না। একপাশ দিয়ে খোলা রাখবো।
এদিকে এলাকার কৃষক আব্দুস সাত্তার জানান, এ ফসলের মাঠে প্রায় ৩০০ হতে ৪০০ একর জমি আছে। বর্ষাকালে এই জমিগুলোর সমস্ত পানি এই কালভার্ট দিয়ে নদীতে চলে যায় এবং বন্যার পানি এসেও জমিতে পলিমাটি পড়ে। এতে আমাদের ফসলি জমিগুলো আরো উর্বর হয় এবং ফসল ভালো হয়। যদি সে কালভার্টের মুখ বন্ধ করে পুকুর খনন করে, তাহলে আমরা আগামী মৌসুমে বৃষ্টির পানির জলাবদ্ধতার কারণে আর চাষাবাদ করতে পারব না। এতে আমরা একটি ফসল থেকে বঞ্চিত এবং ক্ষতিগ্রস্ত হব।
এ বিষয়ে উপজেলা এলজিইডি কর্মকর্তা জাহিদুল ইসলাম বলেন, সরকারি অর্থায়নে নির্মিত কালভার্ট কেউ বন্ধ করে দিতে পারে না। আর ওই কালভার্টটি এলাকার কৃষি ও কৃষকদের সুবিধার্থে তৈরি করা হয়েছে। এটা যদি কেউ বন্ধ করার চেষ্টা করে আমি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলে ব্যবস্থা নেব।
এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ অনুপ সিংহ কালবেলাকে বলেন, কালভার্টের মুখ বন্ধ করে দিলে পানি নিষ্কাশন রোধে জলবদ্ধতা সৃষ্টি হবে। এতে চাষাবাদে ব্যাঘাত হবে এবং কৃষকেরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এটি যিনি করছেন তিনি ভালো কাজ করেননি। আমরা বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সাথে কথা বলে এর যথাযথ ব্যবস্থা নেব।
এ বিষয়ে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) সাদ্দাম হোসেন কালবেলাকে বলেন, ফসলি জমিতে পুকুর খনন করা অপরাধ। এতে জমির শ্রেণি পরিবর্তন হয়। যদি কেউ জমির শ্রেণি পরিবর্তন করতে চায়। তাহলে তাকে জেলা প্রশাসক বরাবর আবেদন করে জমির শ্রেণি পরিবর্তন করতে হবে। তা না হলে সরকারি আইন উপেক্ষা করার অপরাধে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের বিধান রয়েছে ভূমি নীতিমালায়।
তিনি আরো বলেন, কালভার্টের মুখ বন্ধ করে কেন পুকুর খনন করা হচ্ছে। এ বিষয়টি সরেজমিনে গিয়ে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বাংলাদেশ সময়: ২২:৩০:০৮ ৭৯ বার পঠিত