সৌদি আরবের একটি বেসরকারি গবেষণা সংস্থার বিশেষজ্ঞ টিম মদিনায় অবস্থিত হযরত উসমান রা. এর কূপ পরীক্ষা করে দেখেছে, কূপের পানি এখনও প্রবহমান। এরপরই সৌদি সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় হযরত উসমান বিন আফফান রা.-এর কূপ পুনরুদ্ধারের জন্য একটি ব্যাপক পুনরুদ্ধার
মহানবী সা.-এর সময়ে হযরত উসমান রা. এক ইহুদির কাছ থেকে ওই কূপটি ক্রয় করে সর্বসাধারণের জন্য ওয়াকফ করে দেন। সৌদি কৃষি মন্ত্রণালয়ের অধীনে থাকা ওই কূপের চারপাশে গড়ে ওঠা খেজুরবাগানে আজও কূপের পানি দিয়েই সেচকার্য সমাধা করা হয়।
প্রবেশাধিকার সংরক্ষিত থাকা হযরত উসমানের রা. এই কূপের আসল নাম ‘বিরেরুমা’ বা রুমা কূপ। কূপটির মালিক রুমা নামক এক ব্যক্তির নামানুসারে এটাকে রুমা কূপ বলা হতো। হযরত উসমান রা. ৩৫ হাজার দিরহামের বিনিময়ে কূপটি ক্রয় করে রসুলকে সা. বলেন, আমি কূপটি কিনে নিয়েছি। আজ থেকে কিয়ামত পর্যন্ত এই কূপের পানি সমস্ত মুসলমানের জন্য উন্মুক্ত করে দিলাম।
আল্লাহও তার এ দানকে চিরদিনের জন্য কবুল করে নিয়েছেন। দেড় হাজার বছরেও এ কূপের পানি শুখিয়ে যায়নি। এখনো আগের মত স্রোতে বহমান আছে তার স্বচ্ছ শীতল পানি।
ঐতিহাসিক রুমা কূপের দীর্ঘ ঘটনা রয়েছে। কাফেরদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে মুসলিমরা মদিনায় হিজরত করার পর সেখানে খাবার পানির সংকটে পড়ে। মদিনায় এক ইহুদির একটি কূপ ছিল।
সে মুসলিমদের কাছে চড়া মূল্যে পানি বিক্রি করত। কূপটির নাম ছিল রুমা। মহানবী সা. বিষয়টি জানতে পেরে ঘোষণা দিলেন, ‘তোমাদের মধ্যে এমন কেউ আছে যে এই কূপটি কিনে মুসলিমদের জন্য ওয়াকফ করে দেবে? এটা যে করবে আল্লাহ তাকে জান্নাতে একটি ঝরনা দান করবেন।
ঘোষণা শুনে হযরত উসমান রা. ইহুদির কাছে কূপ বিক্রয়ের প্রস্তাব দিলেন। কিন্তু ইহুদি বিক্রিতে অস্বীকৃতি জানাল। কোনোভাবেই বিক্রি করতে চাইল না। হযরত উসমান রা. অর্ধেক কূপ বিক্রির প্রস্তাব করলেন; এভাবে যে কূপ থেকে একদিন ইহুদি পানি নেবে অন্যদিন তিনি পানি নিবেন। ইহুদি ব্যক্তি এতে সম্মত হলো।
হযরত উসমান রা. কূপ কেনার পর বিনা মূল্যে পানি বিতরণ শুরু করেন, এতে ইহুদির পানির ব্যবসা বন্ধ হয়ে গেলো। অপারগ হয়ে পুরো কূপ বিক্রি করে দিলেন। ৩৫ হাজার দিরহামের বিনিময়ে উসমান রা. পুরো কূপের মালিকানা লাভ করেন। কূপের মালিক হয়েই তিনি ঘোষণা করলেন, মুসলিমদের জন্য এ কূপের পানি কিয়ামত পর্যন্ত ওয়াকফ থাকবে। তা থেকে মুসলমানরা বিনা মূল্যেই পানি পান করবে। কূপের আশপাশের জায়গাও কূপের অন্তর্ভুক্ত ছিল। কিছুকাল পরে সেখানে বেশ কিছু খেজুরগাছ বড় হয়ে উঠল।
পরে একসময় এসব গাছ থেকে বিপুল পরিমাণ খেজুর উৎপন্ন হয়। উসমানি সুলতান ও সৌদি শাসকদের পরিচর্যায় এখন এখানে প্রায় ১৬ শর মতো খেজুরগাছ আছে। সৌদি আরব প্রতিষ্ঠার পরে কূপ ও এ বাগান কৃষি মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হচ্ছে। প্রতিবছর বাগান থেকে উৎপাদিত খেজুর বিক্রি করে যে অর্থ উপার্জিত হয়, তার অর্ধেক এতিম-গরিবদের দান করা হয়। অর্ধেক হযরত উসমান রা.-এর নামে একটি ব্যাংক অ্যাকাউন্টে জমা হতে থাকে। অ্যাকাউন্টটি পরিচালনা করে ধর্ম মন্ত্রণালয়।
এভাবে ব্যাংকে এত বিপুল পরিমাণ অর্থ জমা হয় যে তা দিয়ে মসজিদ-ই-নববী সা.-এর পাশেই আকর্ষণীয় একটি জায়গা কিনে সেখানে একটি পাঁচ তারকা হোটেল নির্মাণ করা হয়, যার নেমপ্লেটে লেখা আছে ‘মালিক সাইয়্যিদুনা উসমান রা.। যেহেতু তার ওয়াকফকৃত সম্পত্তি থেকে অর্জিত অর্থে এটি নির্মিত, তাই মালিক হিসেবে তার নামই উল্লেখ করা হয়েছে।
২০১৪-১৫ সালে হোটেলটির নির্মাণকাজ সমাপ্ত হয়েছে। হোটেলের আয়ও উসমান রা.-এর অন্য সম্পদের মতো একভাগ এতিম-মিসকিনদের দান করা হয় এবং আরেক ভাগ তার নামে চলিত অ্যাকাউন্টে জমা রাখা হয়। এভাবেই কিয়ামত পর্যন্ত তার দান করা কূপের ঝরনা প্রবাহিত হয়ে চলছে, সদকায়ে জারিয়াও চলমান রয়েছে। সূত্র: ইসলামিক ইনফরমেশন
বাংলাদেশ সময়: ১২:৩২:২০ ৯৬ বার পঠিত