বিশ্ব রেকর্ড প্রথমবারের মতো প্রাক-শিল্প যুগের তুলনায় ১২ মাসের তাপমাত্রা ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়িয়েছে। ইউরোপের জলবায়ু পর্যবেক্ষক বৃহস্পতিবার এ কথা জানিয়েছে। বিজ্ঞানীরা এটিকে ‘মানবতার জন্য সতর্কবার্তা’ বলে উল্লেখ করেছেন।
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ঝড়, খরা এবং আগুন এই গ্রহটিকে আঘাত করছে। প্রাকৃতিকভাবে ঘটে যাওয়া এল নিনোর প্রভাবে জলবায়ুর চরম বৈরি পরিস্থিতি সৃষ্টি হচ্ছে। যা ২০২৩ সালে রেকর্ড উষ্ণতা বৃদ্ধি করেছে। এটিকে ১ লাখ বছরের মধ্যে সবচেয়ে উষ্ণতা বলে মনে করা হচ্ছে।
কোপার্নিকাস ক্লাইমেট চেঞ্জ সার্ভিস (সি৩এস) বলেছে, উষ্ণতা বৃদ্ধির এই চরম অবস্থা ২০২৪ পর্যন্ত অব্যাহত ছিল। এতে ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে ২০২৪ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত ১৯ শতকের বেঞ্চমার্কের চেয়ে ১.৫২ ডিগ্রি সেলসিয়াস উষ্ণতা বৃদ্ধি পেয়েছে।
বিজ্ঞানীরা বলেছেন, এটি প্যারিস জলবায়ু চুক্তির গুরুত্বপূর্ণ ১.৫ ডিগ্রি উষ্ণতার গুরুতর হুমকির একটি পূর্বাভাস। তবে এটি এই উষ্ণতার সীমার স্থায়ী লঙ্ঘনের সংকেত দেয় না, যা কয়েক দশক ধরে পরিমাপ করা হয়।
পটসডাম ইনস্টিটিউট ফর ক্লাইমেট ইমপ্যাক্ট রিসার্চের জোহান রকস্ট্রম বলেছেন, ‘আমরা ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস স্পর্শ করছি এবং সামাজিক এবং অর্থনৈতিক ক্ষতি দেখতে পাচ্ছি।’
বিজ্ঞানীরা বলেছেন, ‘১.৫ ডিগ্রি তাপমাত্রা একটি খুব বড় সংখ্যা এবং তাপ প্রবাহ, খরা, বন্যা, ঝড় এবং গোটা বিশ্ব জুড়ে পানির ঘাটতির পরিপ্রেক্ষিতে এটি আমাদেরকে সত্যিই খারাপভাবে আঘাত করে। এটাই ২০২৩ সালে আমাদের শিখিয়েছে।’
সাম্প্রতিক মাসগুলোতে আমাজন অববাহিকায় বিধ্বংসী খরা, দক্ষিণ ইউরোপের কিছু অংশে শীতের তাপমাত্রা, দক্ষিণ আমেরিকায় মারাত্মক দাবানল এবং ক্যালিফোর্নিয়ায় রেকর্ড বৃষ্টিপাতসহ গ্রহ জুড়ে চরম বিপর্যয় দেখা গেছে।
‘এটি স্পষ্টতই মানবতার জন্য একটি সতর্কতা যে আমরা ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের সীমার দিকে আমরা প্রত্যাশার চেয়ে দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছি।’ রকস্ট্রম এএফপি’কে বলেন, এল নিনো শেষ হওয়ার পরে তাপমাত্রা কিছুটা কমতে পারে।
কোপার্নিকাস ক্লাইমেট চেঞ্জ সার্ভিস বলেছে, ‘গত জানুয়ারি মাসটি রেকর্ডে সবচেয়ে উষ্ণ ছিল, যা সামগ্রিকভাবে ১৮৫০-১৯০০ সালের জানুয়ারির প্রাক-শিল্প যুগের ঐতিহাসিক উচ্চ মাসিক গড় ১.৬৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রার তুলনায় অষ্টম মাস।’
গ্রহের-তাপীকরণ নির্গমন, প্রধানত জীবাশ্ম জ্বালানী পোড়ানো থেকে, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে উষ্ণতা ক্রমাগত বৃদ্ধি পেয়েছে। জাতিসংঘের আইপিসিসি জলবায়ু প্যানেল সতর্ক করেছে যে, বিশ্ব সম্ভবত ২০৩০ এর দশকের প্রথম দিকে ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস অতিক্রম করবে। ইম্পেরিয়াল কলেজ লন্ডনের ক্লাইমেট সায়েন্স অ্যান্ড পলিসি বিভাগের অধ্যাপক জোয়েরি রোজেলজ এএফপি’কে বলেন, ‘খুব গরম বছরের ধারাবাহিকতা এবং যারা এই চরম বছরের প্রভাব অনুভব করছেন তাদের জন্য এটি খারাপ খবর।’
তিনি বলেন, ‘যদি না বিশ্বব্যাপী নির্গমন দ্রুত শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনা হয়, পৃথিবী শীঘ্রই প্যারিস জলবায়ু চুক্তিতে নির্ধারিত নিরাপত্তা সীমা অতিক্রম করবে।’
বাংলাদেশ সময়: ১৬:০৪:১৮ ৮০ বার পঠিত