শেষ ষোলর দ্বিতীয় লেগে আর লিপজিগের সাথে ১-১ গোলে ড্র করেও দুই লেগ মিলিয়ে ২-১ ব্যবধানে এগিয়ে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের কোয়ার্টার ফাইনাল নিশ্চিত করেছে রিয়াল মাদ্রিদ।
রেকর্ড ১৪ বারের বিজয়ী মাদ্রিদ তাদের নিজেদের সেরা খেলার থেকে কাল অনেকটাই দুরে ছিল। কিন্তু বুন্দেসলিগা প্রতিপক্ষকে দুই লেগ মিলিয়ে পিছনে ফেলতে সমস্যা পড়তে হয়নি।
কাল ম্যাচের প্রায় পুরোটাই লিপজিগের আধিপত্য থাকলেও ৬৫ মিনিটে ভিনিসিয়াস জুনিয়রের গোলে মাদ্রিদই এগিয়ে যায়। জুড বেলিংহামের এ্যাসিস্টে ভিনি ডেডলক ভাঙ্গেন। মাদ্রিদ অবশ্য খুব বেশীক্ষন এই লিড ধরে রাখতে পারেনি। উইলি ওরবানের গোলে সফরকারীরা তিন মিনিটের মধ্যেই সমতায় ফিরে। কিন্তু সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে দ্বিতীয় গোলের দেখা না পাওয়ায় ম্যাচটি আর অতিরিক্ত সময়ে গড়ায়নি।
এাদ্রিদ কোচ কার্লো আনচেলত্তি বলেছেন তার দল সমস্যায় পড়েছিল, মানসিক ভাবে খেলোয়াড়রা নিজেদের এগিয়ে নিতে পারেনি, ‘আমরা আজ খারাপ খেলেছি। আমাদের মধ্যে ম্যাচের আবহ বুঝতে সমস্যা হয়েছে। আমরা এমন একটি দলের বিপক্ষে মাঠে নেমেছিলাম যারা খুবই ভাল মানের একটি দল। তাদের হারানোর কিছু ছিলনা, সে কারনেই নির্ভার হয়ে খেলেছে। শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত তারা ম্যাচ ধরে রেখেছিল। কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে আমরা কোয়ার্টার ফাইনালে খেলার যোগ্যতা অর্জণ করেছি।’
এই ম্যাচের আগে আনচেলত্তি খেলোয়াড়দের সতর্ক করে বলেছিলেন সামনে এগিয়ে যেতে হলে নিজেদের সেরাটাই দিতে হবে। বেলিংহাম ও ভিনিসিয়াসের পিছনে সতর্কতা হিসেবে চারজন মিডফিল্ডার নিয়ে কাল মাঠে নেমেছিলেন আনচেলত্তি। অরেলিয়েল টিচুয়ামেনিকে ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডে রেখে এডুয়ার্ডো কামভিনগা, ফেডে ভালভার্দে ও টনি ক্রুসকে কিছুটা সামনে এগিয়ে নিয়ে এসেছিলেন। প্রথম লেগের ১-০ গোলের জয় আনচেলত্তিকে মোটেই স্বস্তি দিচ্ছিল না।
মাদ্রিদ অধিনায়ক নাচো ফার্নান্দেজ বলেছেন, ‘এটা আমাদের সেরা দিন ছিলনা। কিন্তু আমরা খুশী। কারন আমাদের লক্ষ্য পূরণ হয়েছে। পরিকল্পনা মত ম্যাচে খেলতে না পারলে লড়াই শুরু হয়। আজকের ম্যাচ থেকে আমরা অনেক কিছুই শিখেছি।’
প্রথমার্ধে জার্মান দল মাদ্রিদের থেকে ভাল খেলেছে। যদিও বিরতির আগে তেমন কোন সুযোগ তৈরী করতে পারেনি। পিএসজি থেকে ধারে খেলতে আসা জাভি সিমন্সের শট কোনমতে রুখে দেন মাদ্রিদ গোলরক্ষক আন্দ্রি লুনিন। লোয়িস ওপেনডার শট সাইড নেটে লেগে বাইরে চলে যায়।
দ্বিতীয়ার্ধে নিয়মিত সেট-আপ নিয়ে মাঠে নামেন আনচেলত্তি। কামভিনগার স্থানে বদলী বেঞ্চ থেকে নিয়ে আসেন রডরিগোকে। এই অর্ধে উভয় দলের জন্যই ম্যাচটি উন্মুক্ত হয়ে যায়। প্রথমার্ধে কিছুটা নিশ্চুপ ভিনিসিয়াস নিজেকে প্রমানে ব্যস্ত হয়ে উঠেন। ওরবানকে পিছন থেকে বাঁধা দেয়া ব্রাজিলিয়ান এই তরুনকে হলুদ কার্ড দেখতে হয়েছে। যদিও দ্রুতই গোলের দেখা পান ভিনি। কাউন্টার এ্যাটাক থেকে বেলিংহামের দারুন এক পাসে কোনাকুনি শটে মাদ্রিদকে এগিয়ে দেন ভিনিসিয়াস জুনিয়র। যদিও মাদ্রিদের এই গোল উদযাপন খুব একটা বেশীক্ষন স্থায়ী হয়নি। তিন মিনিটের মধ্যে ওরবান লিপজিগকে সমতায় ফেরান। হাঙ্গেরিয়ান এই ডিফেন্ডার ডেভিড রওমার ক্রসে দারুন এক হেডে বল জালে জড়ান। ম্যাচ শেষের পাঁচ মিনিট আগে বেলিংহামের পরিবর্তে মাঠে নামা স্ট্রাইকার জোসেলু লিপজিগ গোলরক্ষক পিটার গুলাসিকে বিপদে ফেলেছিলেন। ডানি ওলমোর শট পোস্টে লেগে ফেরত আসলে লিপজিগকে হতাশ হতে হয়। বার্সেলোনার সাবেক এই যুব খেলোয়াড়ের লব ক্রসবারে লাগলে সান্তিয়াগোর হাজারো সমর্থক হাঁফ ছেড়ে বাঁচে।
মার্কো রোসের দলের বিপক্ষে ইউরোপের সবচেয়ে সফল দলটি শেষ পর্যন্ত আর কোন অঘটন হতে দেয়নি। লিপজিগ ডিফেন্ডার বেঞ্জামিন হেরনিকস বলেছেন, আজ আমাদের অনেক ভাল সুযোগ ছিল। আমি জানি না আজ মাদ্রিদ কিভাবে গোল পেল। আমরা আজ এক ভাল খেলেছি, কিন্তু শেষ পর্যন্ত আর পেরে উঠিনি, আমাদের বিদায় নিতে হয়েছে।’
বাংলাদেশ সময়: ২২:৪৯:৪৮ ৬০ বার পঠিত