ফরিদপুরের মধুখালী উপজেলার ডুমাইন ইউনিয়নের কৃষ্ণনগর গ্রামের পঞ্চপল্লী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সংলগ্ন সর্বজনীন কালী মন্দিরে অগ্নিকাণ্ড হয়। এই আগুন দেওয়ার অভিযোগে ওই স্কুলে দ্বিতলবিশিষ্ট ওয়াশ ব্লক নির্মাণে নিয়োজিত শ্রমিকদের ওপর হামলা চালান স্থানীয়রা। এ সময় উত্তেজিত জনতার গণপিটুনিতে ঘটনাস্থলেই দুইজন নির্মাণ শ্রমিক নিহত হন, পাশাপাশি মধুখালী থানার ওসিসহ সাতজন আহত হয়েছেন। এ সময় জনতা পঞ্চপল্লী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে হামলা করে ব্যাপক ভাঙচুর চালায়।
হামলার ঘটনায় নিহত দুই ভাই উপজেলার নওপাড়া ইউনিয়নের চোপের ঘাট গ্রামের শাহজাহান খানের ছেলে আশরাফুল খান (১৭) ও আসাদুল খান (১৫)। আহতদের মধ্যে মধুখালী থানা পুলিশের একাধিক সদস্য রয়েছেন।
জানা যায়, কয়েক দিন ধরে স্থানীয় কালী মন্দির সংলগ্ন পঞ্চপল্লী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টির ওয়াশ ব্লক নির্মাণের কাজ চলছিল। হিন্দু অধ্যুষিত পঞ্চপল্লী কালী মন্দিরে বৃহস্পতিবার (১৮ এপ্রিল) সন্ধ্যা ৭টার দিকে অগ্নিকাণ্ড হয়।
মন্দিরের পূজারি তপতী মণ্ডল বলেন, পূজা শেষে লাকড়ি নিয়ে বাড়ি ফেরার পথে তিনি দেখেন শ্রমিকরা মন্দিরের পাশে নসিমন থেকে মালামাল নামাচ্ছেন। এর কিছুক্ষণ পরেই তারা মন্দিরে আগুন লেগেছে বলে চিৎকার করতে থাকেন।
এর পরপরই বিক্ষুব্ধ জনতা সংস্কারকাজে নিয়োজিত শ্রমিকদের ওপর হামলা চালায়। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যায় মধুখালী থানা পুলিশ।
তারা আহত শ্রমিকদের উদ্ধারের সময় উত্তেজিত জনতা পুলিশের ওপরও হামলার চেষ্টা চালায় বলে জানিয়েছে পুলিশ।
সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ডুমাইন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান তপন সাংবাদিকদের জানান, মাগরিবের নামাজ শেষে ১ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার অজিত বাবুর ফোন পেয়ে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে দেখতে পান হাজার হাজার জনতা। তিনি জনগণকে শান্ত করার চেষ্টা করেন, কিন্তু পরিস্থিতি বেগতিক থাকায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ প্রশাসনকে ফোনে অবহিত করেন। পরবর্তীতে তারা এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।
রাত ১১টার দিকে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, পুরো এলাকা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা ঘিরে রেখেছেন।
সেখানে মধুখালী থানা পুলিশের পাশাপাশি বালিয়াকান্দি থানা পুলিশ, ফরিদপুর জেলা পুলিশ, রাজবাড়ী জেলা পুলিশ, র্যাব-১০, বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থাসহ জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের সংবাদকর্মীরা রয়েছেন। তবে স্থানীয় লোকজনকে খুব একটা দেখা যায়নি। পুলিশ কিছুক্ষণ পর পর ফাঁকা গুলি ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করছে।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রাথমিক অবস্থায় ঘটনাস্থলে আসা পুলিশ সদস্য, প্রশাসনের লোকজন ও সাংবাদিকরাও জনতার বাধার মুখে পড়ে। পরবর্তী সময়ে জেলা পুলিশের বড় বহর এসে তাদের উদ্ধার করে।
জেলার সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি-মধুখালী সার্কেল) মিজানুর রহমান বলেন, ‘একটি মন্দিরে কে বা কারা আগুন দিয়েছে। বিক্ষুব্ধ লোকজন নির্মাণ শ্রমিকদের ওপর হামলা করেছে, মারপিট করেছে।’
জেলা প্রশাসক কামরুল হাসান তালুকদার জানান, তিন প্লাটুন বিজিবি মোতায়েনের জন্য বলা হয়েছে। তারা শুক্রবার সকাল থেকে দায়িত্ব পালন করবেন। আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতেই বিজিবি মোতায়েন করা হচ্ছে।
মধুখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. মিরাজ হোসেন বলেন, মন্দিরে আগুনের খবর পেয়ে অতিরিক্ত পুলিশসহ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে স্কুলের ভেতর থেকে অচেতন অবস্থায় চার শ্রমিককে উদ্ধার করে ফরিদপুর শেখ মুজিব মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক দুজনকে মৃত ঘোষণা করেন। এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৫:৫৬:৩৩ ১২০ বার পঠিত