দেশের অপ্রচলিত একটি খেলা উশু। জনপ্রিয়তায় কম থাকলেও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে অন্য অনেক খেলার চেয়ে অবশ্য খুব পিছিয়ে নেই উশু। চীনের জিয়াংশুতে আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে দুই রৌপ্য ও ৪ ব্রোঞ্জ জেতার পর বাংলাদেশের উশুকারা মেলবোর্নের সান্দা বিশ্বকাপে অংশগ্রহণ নিশ্চিত করেছেন।
উশু বিশ্বকাপ নিশ্চিত করা খেলোয়াড়দের আজ (শনিবার) সম্মাননা জানাতে এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে উশু ফেডারেশন। সেই অনুষ্ঠানে ক্রেস্ট ও মেডেলের পাশাপাশি খেলোয়াড়দের ১০০ ডলার করে আর্থিক প্রণোদনা প্রদান করা হয়। যেখানে কর্মকর্তারা পেয়েছেন ২০০ ডলার করে।
জাতীয়–আন্তর্জাতিক ক্রীড়াঙ্গনে দলীয়/ব্যক্তিগত যেকোনো সাফল্যে খেলোয়াড়রাই বেশি সম্মানী/বোনাস পেয়ে থাকেন। কর্মকর্তা/কোচিং স্টাফরা সাধারণত কম, আবার অনেক ক্ষেত্রে সমানও পান। কিন্তু খেলোয়াড়দের কম কিন্তু কর্মকর্তার বেশি– এটা একেবারেই অপ্রচলিত। সেই অপ্রচলিত ঘটনাই ঘটিয়েছে উশু ফেডারেশনে।
খেলোয়াড়দের চেয়ে কর্মকর্তার আর্থিক প্রণোদনা বেশি। এতে ক্ষোভ ফুটে উঠেছে খেলোয়াড়দের কণ্ঠেও, ‘এটা তো একটু বৈষম্য হয়ই। এটা ফেডারেশনই ভালো ব্যাখ্যা দিতে পারবে।’ উশু ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক দুলাল হোসেন খেলোয়াড়-কর্মকর্তা সম্মানীতে তারতম্যের কারণ সম্পর্কে বলেন, ‘কর্মকর্তার একটা দাবি ছিল খেলোয়াড়দের চেয়ে বেশি সম্মানী। তারাও অনেক পরিশ্রম করে।’
দলীয় সাফল্যে খেলোয়াড়দের চেয়ে কর্মকর্তার বেশি সম্মানী পাওয়া একেবারেই অযৌক্তিক। সাংবাদিকদের কাছ থেকে এমন তথ্য পাওয়ার পর অবশ্য পরক্ষণেই নিজেদের ভুল স্বীকার করে নিয়েছেন সাধারণ সম্পাদক, ‘আপনারা সবাই যেহেতু বলছেন তাহলে ভুল স্বীকার করে নেওয়াই ভালো। ভুল হলে সেটা অবশ্যই স্বীকার করা উচিত।’
বাংলাদেশ উশু ফেডারেশনের অন্যতম সহযোগী ঢাকাস্থ চায়না দূতাবাস। খেলার সরঞ্জামাদি দিয়ে তারা উশু ফেডারেশনকে সহায়তা করেছে। এবার কোচ দিয়েও তারা সহায়তা করবে বলে জানিয়েছেন ফেডারেশনের সভাপতি আব্দুস সোবহান গোলাপ, ‘বিশ্বকাপের প্রস্তুতির জন্য চায়না থেকে দুই জন কোচ আসবে। চায়না দূতাবাসের মাধ্যমে আমরা এই সহায়তা পাচ্ছি।’
উশু ফেডারেশনের নিজস্ব কোনো অনুীশলনের ভেন্যু নেই। ফেডারেশনের কার্যালয়েই সীমিত পরিসরে অনুশীলন করে। মাঝে-মধ্যে দেশের বাইরে থেকে পদক আনলেও দেশীয় কোনো পৃষ্ঠপোষক এই খেলায় আগ্রহী হয় না। ২০১৫ সাল থেকে ফেডারেশনের সভাপতি সাবেক সংসদ সদস্য ও প্রভাবশালী রাজনীতিবিদ আব্দুস সোবহান গোলাপ। পৃষ্ঠপোষকতা নিয়ে তার মন্তব্য, ‘এটাতে আসলে সত্যিকার অর্থে আমাদের বেসরকারি পৃষ্ঠপোষক/স্পন্সর নেই। অনুরোধ মেনে দুয়েকটি প্রতিষ্ঠান আসলেও স্থায়ীভাবে ছিল না। আপনাদের মাধ্যমে অনুরোধ জানাই যেন আমাদের পৃষ্ঠপোষক দাঁড়ায়।’
চীনে পদকজয়ী খেলোয়াড়দের মধ্যে রয়েছেন কচি রাণী মন্ডল। যিনি জাতীয় কাবাডি দলেও খেলেছেন। কাবাডি থেকে উশুতে এসে পদক পেয়ে বেশ উচ্ছ্বসিত তিনি, ‘২০১০ সালে জাতীয় কাবাডি দলে খেলেছি। ২০১২ সালে কুস্তি খেলতে গিয়ে ঘাড়ে ব্যথা পাই। ডাক্তার বলেছিল খেলাধুলা না করতে, ডাক্তারের কথা ডাক্তার বলেছে, আমার খেলা আমি খেলে যাচ্ছি! এখন আমি উশুই বেশি খেলি।’ দুই সন্তানের এই জননী যতদিন সুস্থ আছেন ততদিনই উশু খেলতে চান।
বাংলাদেশ সময়: ২০:১৩:২৬ ১১৫ বার পঠিত