সাজ সকালে অফিসের উদ্দেশে বেরিয়ে বাসার গেটেই থমকে যান মো. সুজন আলী। বাসার সামনের রাস্তা যেন ঢেউ খেলানো নদী! অনেকক্ষণ অপেক্ষার পর একটা রিকশার দেখা পেয়ে স্বস্তির নিশ্বাস ফেললেও ভাড়া শুনেই সব আশা সড়কে জমা নোংরা পানিতে মিশে যায়!
মঙ্গলবার (২৮ মে) সকাল ৯টার দিকে রাজধানীর টিকাটুলি এলাকায় পানিতে তলিয়ে থাকা রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে কথা হয় সুজন আলীর সঙ্গে। তার ঘাড়ে ব্যাগ, এক হাতে ছাতা আরেক হাতে জুতা। প্যান্ট হাঁটু পর্যন্ত ভাজ করেও বাঁচাতে পারছেন না। রাস্তা দিয়ে একটু ভারি যানবাহন গেলে ঢেউয়ে উরু পর্যন্ত ভিজে যাচ্ছে।
অফিস তো এতকিছু বুঝতে চাইবে না। যেতে তো হবেই। মাত্র পাঁচ মিনিটের পথ অথচ রিকশায় ভাড়া চাইল ১০০ টাকা! মাসের শেষে এসে একশ টাকা রিকশা ভাড়া দেয়ার সাহসই পেলাম না!
বলছিলেন সুজন।
সুজন আলীর মতো অনেকেই একইভাবে গন্তব্যে ছুটছেন। কেউ কেউ নিরুপায় হয়ে কয়েকগুণ রিকশা ভাড়া দিচ্ছেন।
রাজধানীতে টানা বৃষ্টি হলে জলাবদ্ধতা খুবই পরিচিত ঘটনা। এমন পরিস্থিতি তৈরি হলেই রিকশা ভাড়া বেড়ে যায়। কিন্তু নগরবাসীর অভিযোগ, দুর্যোগের সুযোগ নিয়ে এক প্রকার জিম্মি করে চার পাঁচ গুণ অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করছেন রিকশাচালকরা।
তবে রিকশাচালকরা বলছেন, তারা যে ভাড়া নিচ্ছেন তা যৌক্তিক।
ইত্তেফাক মোড়ে সবুজ মিয়া নামে একজন রিকশাচালক বলেন,
আমার দিকে ভালো করে চেয়ে দেখেন, সকাল ছয়টা থেকে সারা শরীর ভেজা। পানির ভেতর রিকশা চালানো কঠিন, যেখানে সেখানে খানাখণ্দে পড়ে যাওয়ার ভয় থাকে। এতে রিকশারও ক্ষতি হয়। এখন আমি যদি অসুস্থ হয়ে ঘরে পড়ে থাকি তাহলে কে দেখবে! জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আমরা রিকশা চালাচ্ছি, ভাড়া তো একটু বেশি হবেই।
ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে রোববার (২৬ মে) রাত থেকে শুরু হয় বৃষ্টি। এরপর সোমবার (২৭ মে) সারা দিনের বৃষ্টির পর আশা ছিল রাতে কমবে তীব্রতা। হয়েছে হিতে বিপরীত। প্রচণ্ড বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতা বেড়ে হয় দ্বিগুণ। বাড়ে ভোগান্তিও। রাজধানীর মূল সড়ক থেকে অপেক্ষাকৃত নিচু এলাকার বাসাবাড়িতে ঢুকে পড়েছে পানি। পানিবন্দি হয়ে পড়েন হাজারো মানুষ।
নাজমুল হোসেন নামে এক ভুক্তভোগী বলেন, ‘ঘরে পানি প্রবেশ করেছে। রাতে ঘুমাতে পারিনি। গ্যাসের চুলার মধ্যেও পানি ঢুকেছে। খাওয়া-দাওয়াও বন্ধ হয়ে আছে।’
সড়কেও ছিল একই চিত্র। বৃষ্টির পানিতে রাস্তার মোড়ে মোড়ে বিকল হয়ে যায় অসংখ্য যানবাহন। অপেক্ষাকৃত ছোট যানবাহনের অবস্থা আরও করুণ।
কবির হোসেন নামে এক সিএনজিচালিত অটোরিকশাচালক বলেন, ইঞ্জিনে পানি ঢুকে স্টার্ট বন্ধ হয়ে গেছে। অনেক কষ্টে টেনে কোনও রকম পাশে নিয়ে এসেছি। আর চোখের সামনে দেখলাম একটি প্রাইভেটকারের ওপর গাছ পড়ে গাড়িটি চ্যাপ্টা হয়ে গেছে।
সারা রাত বৃষ্টির সঙ্গে বাতাসের তীব্রতায় রাজধানীজুড়ে ভেঙ্গে পড়েছে অসংখ্য গাছ। কোনও কোনওটি আবার আছড়ে পড়েছে সড়কের চলন্ত যানবাহনের ওপরও।
এদিকে রাতের অন্ধকারের সঙ্গে ঝড়ো বাতাসের দাপটে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার বৈদ্যুতিক সংযোগ হয়ে উঠে মৃত্যুফাঁদ। এক রাতেই বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে যাত্রাবাড়ী, বাড্ডা, খিলগাঁওয়ের বিভিন্ন এলাকায় মারা যান চারজন।
বছরের পর বছর ধরে নগরজুড়ে চলা এত ভোগান্তি থেকে মুক্তি চান সাধারণ মানুষ। তাদের দাবি সমন্বিত এবং পরিকল্পিত উদ্যোগের।
বাংলাদেশ সময়: ১২:৩৭:৪৫ ৫৮ বার পঠিত