অবশেষে জয়, বহুল কাঙ্ক্ষিত জয় ধরা দিলো বাংলাদেশ দলের হাতে। এর আগে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে দুইবার শ্রীলঙ্কার মুখোমুখি হয়ে টাইগাররা জয়ের দেখা পায়নি। দু’দলের সর্বশেষ সিরিজও ২-১ ব্যবধানে গেছে লঙ্কানদের পকেটে। তার ওপর বাংলাদেশ সাম্প্রতিক সময়ে আইসিসির সহযোগী দেশ যুক্তরাষ্ট্রের কাছে সিরিজ হেরে কিছুটা ব্যাকফুটে ছিল।
আজও লঙ্কানদের বিপক্ষে ম্যাচটা কঠিন করে তোলেন টপ অর্ডাররা। পরে হৃদয়ের ঝোড়ো ব্যাটিংয়ে জয়ের দিশা পায় টাইগাররা। তারপরও শেষদিকে একের পর এক অহেতুক উইকেট বিসর্জন দিয়ে প্রায় হারতে বসেছিল। ঠান্ডা মাথার মাহমুদউল্লাহ শেষ পর্যন্ত ক্রিজে থাকায় এ যাত্রা রক্ষা হলো। ধুঁকতে ধুঁকতে পেল ২ উইকেটের জয়।
ডালাসের গ্র্যান্ড প্রেইরি স্টেডিয়ামে আগে ব্যাট করা শ্রীলঙ্কাকে দারুণ চাপে ফেলেন মুস্তাফিজুর রহমান ও রিশাদ হোসেন। নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ের পাশাপাশি দুজনই তিনটি করে উইকেট নেন। ৯ উইকেটে মাত্র ১২৪ রানের পুঁজি দাঁড় করায় ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গার দল। সেই রানের চাপও শুরুতে নিতে পারেননি টপ অর্ডারে নামা সৌম্য সরকার, তানজিদ হাসান তামিম ও অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত।
৩০ রানে তিন উইকেট হারানো বাংলাদেশ পথ খুঁজে পায় তাওহীদ হৃদয়ের কল্যাণে। তিনি যখন ফিরছেন তখন জয় পেতে আর ৫০ বলে ৩৪ রান দরকার। সেই ম্যাচটাই কিনা কঠিন বানিয়ে ফেলেন সাকিব আল হাসান ও রিশাদ হোসেনরা। আবারও সেই নুয়ান থুসারা জুজু। বাংলাদেশের মাটিতে হওয়া শ্রীলঙ্কার সর্বশেষ সফরে দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতে তার ইয়র্কারে নাকানিচুবানি খেয়েছিল স্বাগতিকরা। এই ম্যাচও যেন সেদিকেই মোড় নিচ্ছিল। তবে শেষ সম্বল মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ‘পুলসিরাত’ পার করলেন ১ ওভার হাতে রেখে।
এর আগে ছোট পুঁজির সামনে যেভাবে আত্মবিশ্বাস নিয়ে খেলার কথা, সেটি হতে দিলেন না টাইগার ওপেনাররা। ক্রিজে বাংলাদেশের দুই বাঁ-হাতি ওপেনার, সে কারণে পার্টটাইমার ধনাঞ্জয়া ডি সিলভাকে দিয়ে আক্রমণ শুরু লঙ্কানদের। তাকে প্রথম বলে স্লগ সুইপ করতে গিয়ে ব্যর্থ হন সৌম্য সরকার। তবে তিনি ধীরস্থির থাকতে পারলেন না, মিড অনে উড়িয়ে মারার চেষ্টায় ক্যাচ দিয়ে বসেন ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গার হাতে। রানের খাতাই খুলতে পারেননি সৌম্য। এরপর দ্বিতীয় ওভারে নুয়ান থুসারার ফুললেংথের বলে ব্যাট চালান তানজিদ তামিম (৩)। বলের লাইন মিস করে তিনি বোল্ড হয়ে যান।
মাত্র ৬ রানেই ২ উইকেট হারানোর চাপ কমানোর কথা ছিল অধিনায়ক শান্তর। উল্টো ১৪ বলে ৭ রানের ধীরগতির ইনিংস খেলে তিনি ফেরেন ক্যাচ দিয়ে। তাকেও ফেরালেন থুসারা, বেশ বাইরের ফুল লেংথের বল শর্টে থাকা ফিল্ডারের হাতে ক্যাচ দিয়েছেন। ৩০ রানেই ৩ উইকেট হারিয়ে বিপর্যয় ঘনীভূত হয় টাইগারদের। পাওয়ার প্লেতে তারা মাত্র ৩৩ রান তুলতে সক্ষম হয়। এমন অবস্থায় দরকার ছিল বড় পার্টনারশিপের। সময়ের চাহিদা পূরণ করে লিটন দাসকে সঙ্গে নিয়ে ৬৩ রানের জুটি গড়েন হৃদয়।
মিডল অর্ডারে টাইগারদের ভরসা হৃদয় হাসারাঙ্গার বলে এলবিডব্লু হওয়ার আগের তিন বলে ছক্কার হ্যাটট্রিক করেন। প্রথমটি ফুললেংথের বলে স্লগ সুইপ, পরের বলও একই সীমানায়, তৃতীয় ছক্কাটি এল অফ সাইডে। দুর্দান্ত তিন ছয়ের পর ২০ বলে ৪০ রানে থামেন এই ডানহাতি ব্যাটার।
যে হাসির উত্থান ঘটিয়েছিলেন হৃদয়, তার বিদায়ে সেটি হতাশার ঘন মেঘে পরিণত হয়। আরেকটি নাটকের পথে এগোচ্ছিল ম্যাচটি। ১৪ বলে ৮ রান করে ফেরেন সাকিব। তার আগে ধীরগতির হলেও স্বস্তি জোগানো ৩৬ রান আসে লিটনের ব্যাটে। থুসারার পরপর দুই বলে আউট রিশাদ–তাসকিনও।
শেষ পর্যন্ত মাহমুদউল্লাহর স্নায়ু ধরে রাখা ব্যাটিং বাংলাদেশকে উদ্ধার করেছে। ১৩ বলে ১৬ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলেন তিনি। ১৯তম ওভারে জয়ের বন্দরে পৌঁছে যায় বাংলাদেশ। লঙ্কানদের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে এটি টাইগারদের প্রথম জয়।
শ্রীলঙ্কার হয়ে সর্বোচ্চ ৪টি উইকেট নিয়েছেন থুসারা। এ ছাড়া হাসারাঙ্গা দুটি এবং মাথিশা পাথিরানা ও ধনাঞ্জয়া একটি করে শিকার ধরেন।
ম্যাচটিতে প্রথমে ব্যাট করা শ্রীলঙ্কাকে বল হাতে নাজেহাল করেন রিশাদ, মুস্তাফিজ ও তাসকিনরা। নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ের পাশাপাশি রিশাদ-ফিজ তিনটি করে উইকেট নিয়েছেন। জোড়া উইকেট নেন তাসকিনও। লঙ্কানদের হয়ে সর্বোচ্চ ৪৭ রান করেছেন ওপেনার পাথুম নিশাঙ্কা।
বাংলাদেশ সময়: ১৫:৫৯:৫৮ ১০৩ বার পঠিত