কোরবানি এলেই পশুর হাটে গিয়ে পছন্দসই গরু-মহিষ বা ছাগল কেনার ধুম পড়ে যায়। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পাল্টাতে শুরু করেছে এ রীতি। ব্যস্ততা ও পশু রাখার জায়গার সংকটে মানুষ এখন পশু কিনছেন সরাসরি খামার বা অনলাইনে।
কোরবানির ঈদের বাকি আর মাত্র দুদিন। এরইমধ্যে জমে উঠেছে খোলা মাঠের পশুর হাট। সেইসঙ্গে পাল্লা দিয়ে প্রায় সমান তালে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে ডিজিটাল পশুর হাট।
অনলাইনে পশু বিক্রির সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চলতি বছর অনলাইনে জমে উঠেছে পশু বেচাকেনা। অধিকাংশ ফার্মে এরইমধ্যে বিক্রি হচ্ছে বেশিরভাগ পশু। অনলাইনে পশু ক্রয়ে আগ্রহ বেড়েছে ক্রেতাদের।
অনলাইনে গরু বিক্রি করা প্রতিষ্ঠান আব্দুল মালেক অ্যাগ্রো ফার্মের কর্ণধার সম্রাট মৃধা বলেন, একটা সময় ছিল, যখন মানুষ হাটে গিয়ে কোরবানির পশু কিনতে পছন্দ করত। এখন দিন বদলে গেছে; মানুষের ব্যস্ততাও বেড়েছে। কাজেই সবাই ডিজিটাল যুগের সুযোগ-সুবিধা গ্রহণের চেষ্টা করছেন। কোরবানির পশুও তারা কিনছেন অনলাইনে।
অনলাইনে গরু বিক্রি করা আরেক প্রতিষ্ঠান ইভোক ফার্মের কর্ণধার মারুফ বলেন, গত বছরের তুলনায় এ বছর অনলাইনে গরু বেচাকেনা খুবই ভালো চলছে। মূলত সশরীরে ফার্মে এসে গরু যাচাই করে দেখে নিতে পারেন ক্রেতারা। এরপর ঈদের আগের দিন সকালে বা রাতের দিকে গরু তাদের বাসায় পৌঁছে দেয়া হয়। তাই কোনো ঝামেলা পোহাতে হয় না বিধায়, মানুষ এখন এদিকে বেশি ঝুঁকছে।
ফার্মগুলো থেকে অনলাইনে গরু কিনলে প্রতারিত হওয়ার কোনো আশঙ্কা নেই জানিয়ে তিনি আরও বলেন, ফার্ম থেকে অনলাইনের মাধ্যমে কেনা গরুগুলো ক্রেতারা যাচাই করে দেখে নেয়ার সুযোগ পান। তবে ওয়েবসাইটগুলোর মাধ্যমে কিনতে গিয়ে প্রায়ই প্রতারিত হন ভোক্তারা। কারণ, সেখানে গরু যাচাই করে নেয়ার সুযোগ খুব একটা নেই।
অনলাইনে গরু কেনায় ক্রেতাদের আগ্রহী করা প্রসঙ্গে মারুফ জানান, ক্রেতাদের অনলাইনে আগ্রহী করতে ব্যাপক প্রচারণা চালাতে হবে। পাশাপাশি কমাতে হবে অসাধু ব্যবসায়ীর দৌরাত্ম্য।
বাংলাদেশ ডেইরি ফার্মারস অ্যাসোসিয়েশনের (বিডিএফএ) সভাপতি ও ‘সাদেক অ্যাগ্রো’র মালিক ইমরান হোসেন বলেন, করোনার সময় অনলাইন হাট যে পরিমাণে সাড়া ফেলেছিল, কয়েকটি অনলাইন প্ল্যাটফর্মের দুর্নীতির কারণে সেটি এখন অনেকটা কমে গেছে। তবে এখনও আশানুরূপ পর্যায়ে আছে বেচাবিক্রি। সরকারের উচিত অনলাইন হাটকে মানুষের বিশ্বাসযোগ্য হিসেবে গড়ে তোলা। তাহলে গ্রামের একজন প্রান্তিক খামারিও সহজেই মধ্যস্বত্বভোগী ছাড়া সরাসরি ক্রেতার কাছে কোরবানির পশু বিক্রি করতে পারবেন।
আর পশুর হাট সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অনলাইনে যতোই গরু বেচাকেনা হোক, হাটের তুলনায় সেটি খুবই কম। মানুষ এখনও সরাসরি হাটে এসে দরদাম করেই গরু কিনতে পছন্দ করে।
কেরানীগঞ্জের আমবাগিচা হাটে ফরিদপুর থেকে গরু নিয়ে আসা ফরিদ জানান, মানুষ এখন খামার বা অনলাইন থেকে গরু আগেই কিনে রাখে। তবে এতে হাটের বেচাকেনাতে ভাটা পড়েনি। মানুষ আগের মতো স্বতঃস্ফূর্তভাবে হাটে এসে দরদাম করে পশু কিনছেন।
আবার অনেকে অনলাইন থেকে পশু কিনলেও হাটে ঘুরতে আসছেন জানিয়ে ফরিদ বলেন, অনকেই হাটে ঘুরতে আসছেন। দরদাম করে দেখছেন আগেভাগে খামার থেকে গরু কিনে ঠকলেন কি না। আবার অনেকেই ছবি তুলছেন বড় আকারের গরু-ছাগলের।
এদিকে কেরানীগঞ্জের আমবাগিচা হাটের ইজারাদার কমিটির সদস্য মো. শাওন জানান, ট্রলারে ও ট্রাকে করে বিভিন্ন জেলা থেকে গরু আসছে। বেচাকেনা এখনও তেমন জমে না উঠলে শুক্রবার বিকেলের পর থেকে ভিড় বাড়বে।
বাংলাদেশ সময়: ১৬:৫৬:১০ ৯৬ বার পঠিত