ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ২০১৯ সালে ব্যাংকিং অ্যান্ড ইনস্যুরেন্স বিভাগ থেকে ডক্টর অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (ডিবিএ) ডিগ্রি অর্জন করেন পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদ। অথচ এই ডক্টরেট ডিগ্রি নেওয়ার প্রোগ্রামে ভর্তির যোগ্যতাই ছিল না তার। শর্ত শিথিল করে তাকে ভর্তির সুযোগ দেওয়া হয়েছিল।
জানা গেছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের ডক্টর অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (ডিবিএ) প্রোগ্রামে ভর্তির জন্য স্নাতক ডিগ্রির প্রয়োজন হয়। একই সঙ্গে শিক্ষাজীবনের সব পাবলিক পরীক্ষায় কমপক্ষে ৫০ শতাংশ নম্বর পেতে হয়। তবে বেনজীরের সে যোগ্যতা ছিল না। ভর্তি ও ডিগ্রি পাওয়ার সময় বেনজীর ছিলেন র্যাবের মহাপরিচালক। ভর্তির শর্ত শিথিলের ক্ষেত্রে বেনজীরের পদ বিবেচনায় নেওয়া হয়েছিল। শিক্ষা অনুষদের তৎকালীন ডিন অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলামের সুপারিশে বেনজীরের ভর্তির ক্ষেত্রে মৌলিক শর্তগুলো শিথিল করা হয়েছিল। শিবলীই ছিলেন বেনজীরের ‘ডক্টরেট’ প্রোগ্রামের তত্ত্বাবধায়ক।
বেনজীর আহমেদের ডিবিএ ডিগ্রির আবেদন অনুযায়ী, ১৯৭৮ সালে তিনি গোপালগঞ্জের এস এম মডেল উচ্চবিদ্যালয় থেকে দ্বিতীয় শ্রেণি পেয়ে এখনকার এসএসসি সমমানের পরীক্ষায় পাস করেন। ১৯৮০ সালে সরকারি জগন্নাথ কলেজ থেকে দ্বিতীয় শ্রেণি পেয়ে এখনকার এইচএসসি সমমানের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন।
১৯৯২ সালে বেনজীরের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএ (পাস) ডিগ্রি আছে। বিএ (পাস) সনদ অনুযায়ী, বেনজীর মোট ১ হাজার ১০০ নম্বরের মধ্যে ৫১৭ পেয়েছেন (৪৭ শতাংশ)। অর্থাৎ, তিনি ৫০ শতাংশ নম্বর পাননি। কিন্তু ডিবিএ প্রোগ্রামে ভর্তির আবেদনে তিনি উল্লেখ করেছেন, তিনি ডিগ্রি বা সমমানের পরীক্ষায় মোট ৫০০ নম্বরের মধ্যে ৩০১ নম্বর (৬০ শতাংশ) পেয়েছেন। তার বিএ (পাস) সনদে সাল উল্লেখ করা হয় ১৯৮২। ডিবিএর আবেদনে সাল বলা হয়েছে ১৯৮৩। এই সালের সঙ্গে মিলিয়ে কোনো সনদ জমা দেননি তিনি।
বেনজীর ১৯৮৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি পান। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের সনদ অনুযায়ী, বেনজীর ১৯৮৪ সালে ৫০০ নম্বরের মধ্যে ২২৯ পেয়ে (প্রায় ৪৬ শতাংশ) দ্বিতীয় শ্রেণি পেয়ে স্নাতকোত্তরে উত্তীর্ণ হন। অর্থাৎ তিনি ৫০ শতাংশ নম্বর পাননি। ভর্তির আবেদনে তিনি স্নাতকোত্তরে মোট নম্বর দেখিয়েছেন ৫০০-এর পরিবর্তে ৪০০। মানে হলো, পরীক্ষার মোট নম্বর কম দেখিয়ে তিনি ডক্টরেট প্রোগ্রামে ভর্তির শর্ত পূরণের চেষ্টা করেছিলেন।
অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম বলেন, ‘৪০ বছর আগে যারা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তেন, তারা কম নম্বর পেতেন। তারা এখন বিভিন্ন জায়গায় উচ্চ পদে রয়েছেন। বেনজীরের ক্ষেত্রেও এমনই হয়েছে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক এ এস এম মাকসুদ কামাল বেনজীরের বিষয়টি নিয়ে জানান, ‘ঘটনাটি যে সময়ে ঘটেছে, তখন তিনি উপাচার্যের দায়িত্বে ছিলেন না। তাই বিষয়টি সম্পর্কে তার জানা নেই। সাধারণভাবে শর্ত পূরণের বিষয়ে তিনি বলেন, ডক্টরেট প্রোগ্রামে ন্যূনতম নম্বর এবং স্নাতক ডিগ্রি থাকার বাধ্যবাধকতাসহ কিছু মৌলিক শর্ত রয়েছে, যেগুলো শিথিলযোগ্য নয়।’
বাংলাদেশ সময়: ২২:৩৩:৩৩ ৭৪ বার পঠিত