৯৫ মিনিটে জুড বেলিংহামের গোলে ইংল্যান্ড যখন সমতায় ফিরল তার আগে পেরিয়েছে পাক্কা ৭০ মিনিট। এইসময়ে নানা নাটকীয় মোড় নিয়েছে ম্যাচ। এরপর বেলিংহামের চোখ ধাঁধাঁনো এক বাইসাইকেল গোলে ইংল্যান্ড শুধু প্রাণেই বাচল না, টিকেও থাকল ইউরোতে।
অতিরিক্ত সময়ে গড়ানো ম্যাচে প্রথম হাফের একদম শুরুর মিনিটে হ্যারি কেইন এগিয়ে নিলেন ইংল্যান্ডকে। আর তাতেই বিপর্যস্ত ইংল্যান্ডে ফিরলো স্বস্তি। ফিফা র্যাংকিংয়ের ৪৫ নাম্বারে থাকা স্লোভাকিয়ার কাছে হারতে হারতেও খাঁদের কিনারা থেকে ফিরে এসে ২-১ ব্যবধানে শ্বাসরুদ্ধকর এক জয় নিয়ে শেষ আট নিশ্চিত করে গ্যারেথ সাউথগেটের দল।
আর একটু হলেই চলতি ইউরোয় আরও এক অঘটন দেখা যেত। মাত্র একদিন আগেই ইউরোর এবারের আসরকে বিদায় জানিয়েছে বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ইতালি। আজ একই সমীকরণের সামনে দাড়িয়ে ছিল থ্রি লায়ন্সরা। কিন্তু ভাগ্য প্রসন্ন হওয়ায় এ যাত্রায় বেঁচে গিয়ে কোয়ার্টার ফাইনালে নাম লেখাল হ্যারি কেইন-বেলিংহ্যামমরা।
এদিকে প্রথমবারের মতো বড় কোনো টুর্নামেন্টের নকআউট পর্বে জয়ের একদম দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গিয়েছিল স্লোভাকিয়া। যা ১৯৯৩ সালে স্বাধীন দেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করার পর আগে কখনোই পারেনি স্লোভাকিয়া। কিন্তু সেটার জন্য যে প্রয়োজন ছিল ভাগ্যের সহায়তাও।
তবে, এদিন স্লোভাকিয়ার ভাগ্যে হয়তো জয় ছিলনা, তা না হলে ম্যাচের অন্তিম মুহূর্তে ফ্রান্সেসকো কালযোনার দলকে চুপ করে দেয় বেলিংহ্যামের জাদুকরী এক বাইসাইকেল কিক। প্রথমার্ধের ২৫ মিনিট না যেতেই দারুণ এক গোলে লিড পাওয়া স্লোভাকিয়া সেই লিড একদম ধরে রেখেছিল ম্যাচের প্রায় শেষ পর্যন্ত। কিন্তু শেষ রক্ষা আর হয়নি।
এদিন ইংল্যান্ডের বিপক্ষে লড়াইয়ে নামার আগে গ্রুপ পর্বে বেলজিয়ামকে হারিয়ে নিজেদের সামর্থ্যের জানান দিয়েছিল স্লোভাকিয়া। এদিন ম্যাচের শুরু থেকেই দুই দলের লড়াইয়ে সেই আভাস পাওয়া যায়। মুহুর্মুহু আক্রমণের পসরা সাজাতে থাকে দুই দল। চলে আক্রমণ আর পাল্টা আক্রমণের লড়াই। যদিও, বল দখলের লড়াইয়ে প্রথমার্ধে আধিপত্য দেখায় ইংলিশরা। অপরদিকে বেশ কয়েকবার স্লোভাকিয়ার পেনাল্টি বক্সে বল নিয়ে গেলেও তেমন একটা সুবিধা করতো পারছিলনা ইংল্যান্ড। উল্টো ম্যাচের ২৫ মিনিটে স্লোভাকিয়ান অ্যাটাকিং মিড ফিল্ডার ইভান শ্রানজের গোলে লিড নেয় স্লোভাকিয়া।
এদিকে বলের দখল আর পাসিংয়ে ইংলিশদের আধিপত্য থাকলেও স্লোভাকিয়া নিজেদের উজাড় করে দেয়। এ রমাঝে জোড়াল কোন আক্রমণ করতে না পারায় বারবার ব্যার্থ হতে থাকে ইংল্যান্ড। এছাড়াও প্রথমার্ধে ইংলিশরা স্লোভাকিয়ার গোলপোস্ট বরাবর শট নিতে পারেনি একটিও। শেষ পর্যন্ত প্রথমার্ধে আর কোনোদল গোলের দেখা না পাওয়ায় ১-০ তে লিড নিয়ে বিরতিতে যায় র্যাংকিংয়ের ৪৫ নাম্বার দলটি।
এরপর দ্বিতীয়ার্ধের শুরুটা ইংল্যান্ডের জন্য ছিল স্বপ্নের মতো। যেখানে শুরুতেই গোলের দেখা পায় দলটি। কিন্তু দারুণ ভাবে এগিয়ে গেলেও অফসাইডের ফাঁদে পড়লে গোল বাতিল করেন রেফারি। অবশ্য এরপরের গল্পটা ইংলিশরা নিজদের করে নিলেও নিতে পারত। কিন্তু ভাগ্য বিধাতা বারবার গ্যারেথ সাউথগেটের দলকে বিমুখ করেছে। তানাহলে হ্যারি কেইন, বেলিংহ্যাম কিংবা ফোডেনরা বারবার কেন ব্যার্থ হবেন।
এরপর ম্যাচের বয়স যত বাড়তে থাকে পিছিয়ে পড়া ইংল্যান্ডের আক্রমণ যেন ততই বেড়ে যায়। পাল্টা আক্রমণে ম্যাচের উত্তেজনা বাড়তে থাকলেও ম্যাচে ফিরতে পারছিল না ইংলিশরা। অন্যদিকে এগিয়ে থাকলেও স্লোভাকিয়া আক্রমণাত্মক খেলা উপহার দিতেই থাকে। এই সময়ে ফ্রান্সেসকো কালযোনার দল বেশ কয়েকটা সুযোগ পেলেও তা কাজে লাগাতে পারেনি।
এরপর ম্যাচের ৮০ মিনিটে ইংল্যান্ড আবারও সুযোগ পায় কিন্তু এবারও বাধা হয়ে দাড়ায় গোলবার। কিন্তু ম্যাচের চমক যে তখনও বাকি ছিল। ম্যাচের একদম শেষ মুহূর্তে ৯৫ মিনিটে বেলিংহ্যামের ইতিহাস সৃষ্টি করা এক গোলে সমতায় ফেরে ইংল্যান্ড।
এরপর ম্যাচ গড়ায় অতিরিক্ত সময়ে। যেখানে অতিরিক্ত সময়ের প্রথম হাফের একদম শুরুর মিনিটেই ইংল্যান্ডকে লিড এনে দেন হ্যারি কেইন। এরপর ম্যাচের নির্ধারিত ৯০ মিনিট ও অতিরিক্ত ৩০ মিনিটে কোনো দল আর গোল করতে না পারায় ২-১ গোলের জয় নিয়ে কোয়ার্টার ফাইনালে চলে যায় ইংল্যান্ড আর জিততে জিততেও হেরেগিয়ে টুর্নামেন্ট থেকে বিদায় নেয় স্লোভাকিয়া।
বাংলাদেশ সময়: ১৭:০৮:০৯ ৬৮ বার পঠিত