দ্বিতীয়ার্ধের দুই গোলে পিছিয়ে পড়েও দারুন লড়াই শেষে তুরষ্ককে ২-১ ব্যবধানে পরাজিত করে ২০ বছর পর প্রথমবারের মত ইউরো চ্যাম্পিয়নশীপের সেমিফাইনালে উঠেছে নেদারল্যান্ডস। ২০০৪ সালে সর্বশেষ ইউরোপীয়ান আসরের শেষ চারে খেলেছিল ডাচরা।
প্রথমার্ধে সামেট আকায়দিনের গোলে এগিয়ে যায় তুরষ্ক। স্টিভান ডি ভ্রিজের গোলে সমতায় ফিরে নেদারল্যান্ডস। ৭৬ মিনিটে কোডি গাকপোর চাপে পড়ে মুরাত মুলডারের আত্মঘাতি গোলে নেদারল্যান্ডসের জয় নিশ্চিত হয়।
শেষ ষোলর ম্যাচে অস্ট্রিয়ার বিপক্ষে বিতর্কিত স্যালুট দিয়ে তুরষ্কের মূল তারকা মেরিহ ডেমিরাল দুই ম্যাচ নিষিদ্ধ হবার প্রভাব কালকের ম্যাচে পড়েছে। বার্লিনে কালকের কোয়ার্টার ফাইনালের ম্যাচকে ঘিড়ে তুরষ্ক ও জার্মানির মধ্যকার রাজনৈতিক অস্থিরতার একটি প্রভাব পড়ার আশঙ্কা ছিল। কাল ম্যাচটি উপভোগ করতে অলিম্পিয়াস্টেডিওনে উপস্থিত ছিলেন তুরষ্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইপি। সাথে ছিল হাজারো লাল জার্সধারী টার্কিশ সমর্থক। যাদের উচ্ছসিত উল্লাসে প্রায়শই ডাচ খেলোয়াড়দের থমকে যেতে হয়েছে। কিন্তু এই চাপ সামলে মাঠে লড়াইয়ে তুরষ্কের উজ্জীবিত দলটির বিপক্ষে ঠিকই নিজেদের এগিয়ে নিয়ে গেছে নতুন প্রজন্মের ডাচ খেলোয়াড়রা।
নেদারল্যান্ডসের অধিনায়ক ভার্জিল ফন ডাইক বলেছেন, ‘আজ আমরা ম্যাচের আবহ বুঝে বেশ গভীরে গিয়ে খেলার চেষ্টা করেছি। এই দলটিকে নিয়ে আমি দারুন গর্বিত। ম্যাচের শুরুটাও আমরা ভাল করেছিলাম। যদিও মাঝে খেই হারিয়ে ফেলি। বিপদজনক মুহূর্তে বলের পজিশন হারিয়েছি। এরপর চেষ্টা করেছি শান্ত থাকতে, ধৈর্য্য ধরে আস্তে আস্তে ম্যাচের নিয়ন্ত্রন নিজেদের করে নিয়েছি। এভাবে গোলের দেখা পেয়েছি। আমরা নিজেদের ও দেশের সকলের স্বপ্ন পূরণ করতে চাই। আমরা আরো একধাপ এগিয়ে গেছি।’
তুরষ্কের কোচ ভিনসেনজো মনটেলা ডাচ আক্রমনভাগকে আটকাতে পাঁচজন ডিফেন্ডার নিয়ে মাঠে নেমেছিলেন। ডাচদের কাউন্টার এ্যাটাক থেকে আটকানোর আশা তিনি নিজের তরুণ দলটির কাছে করেছিলেন। ১৯৮৮ ইউরো চ্যাম্পিয়নদের প্রথম সুযোগটি আসে গাকপো ও মেমফিস ডিপের মাধ্যমে। কিন্তু ডিপে সুযোগটি শেষ পর্যন্ত হাতছাড়া করেন। ৩৬ বছর আগে রোনাল্ড কোম্যানের নেতৃত্বে নেদারল্যান্ডস ইউরোর শিরোপা জিতেছিল। সেই কোম্যানের অধীনে এবার মাঠে নেমেছে ডাচ বাহিনী। শেষ ষোলতে রোমানিয়াকে ৩-০ গোলে উড়িয়ে দিয়ে তারা কোয়ার্টার ফাইনালে খেলতে আসে। অথচ গ্রুপ পর্বে তৃতীয় স্থান নিয়ে তারা নক আউট পর্বে উঠেছিল। এখন শিরোপা জয়ে তাদেরও অন্যতম দাবীদার হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।
প্রথমার্ধের মাঝামাঝি থেকে নিজেদের কিছুটা আগোছালো করে ফেলে কোম্যানের দল। সেই সুযোগটি কাজে লাগিয়েছে তুরষ্ক। সেট পিস থেকে মনটেলার দল নেদারল্যান্ডসের রক্ষনভাগকে বিপদে ফেলা শুরু করে। তারই ধারাবাহিকতায় ৩৫ মিনিটে আরদা গুলারের কর্ণার প্রথমে ক্লিয়ার হয়। কিন্তু পরমুহূর্তে রিয়াল মাডদ্রদের ১৯ বছর বয়সী এই প্লেমেকারের ডানদিকের ক্রস থেকে আকায়ডিনের শক্তিশালী হেড ধরার সাধ্য ছিলনা ডাচ গোলরক্ষক বার্ট ভারব্রাগেনের। নিষিদ্ধ ডেমিরালের পরিবর্তে এক ম্যাচ নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে মাঠে ফিরেছিলেন আকায়ডিন।
বিরতির পর কোম্যান দলে পরিবর্তন এনে স্টিভেনে বার্গুইনের স্থানে পোল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচ বাঁচানো ওট উইগর্স্টকে মাঠে নামান। বার্নলির এই স্ট্রাইকার মাঠে নামার পরই ম্যাচের চেহারা পাল্টে যায়। নেদারল্যান্ডসের আক্রমনভাগে গতি আনে উইগর্স্ট। অন্যদিকে গুলারও নিজেকে থামিয়ে রাখেননি। নাথান এ্যাকের বিপক্ষে আদায় করা ফাউল থেকে তার নেয়া ফ্রি-কিক ভারব্রাগেনসেক পরাস্ত করলেও পোস্টকে টপকাতে পারেনি। ২০০৮ সালের পর প্রথমবারের মত বড় কোন টুর্ণামেন্টের কোয়ার্টার ফাইনালে খেলতে আসা তুরষ্ক ব্যবধান প্রায় দ্বিগুন করেই ফেলেছিলেন। কিন্তু কেনান ইয়েলডিজের শট দারুন দক্ষতায় রুখে দেন ভারব্রাগেন। উইগর্স্টকে রুখে দেন তুরষ্কের গোলরক্ষক মেরেত গুনোক। কিন্তু ৭০ মিনিটে আর শেষ রক্ষা হয়নি। শর্ট কর্নার থেকে মেমফিস ডিপের নিখুঁত ক্রসে ইন্টার মিলান ডিফেন্ডার ডি ভ্রিজ তুরষ্কের রক্ষনভাগকে ফাঁকি দিয়ে দারুন হেডে দলকে সমতায় ফেরান। ছয় মিনিট পর ডেনজেল ড্রামফ্রাইসের একটি বিপদজনক লো বলে মুলডার গাকপোকে আটকাতে গিয়ে নিজের জালে বল জড়ান। এনিয়ে এবারের টুর্নামেন্টে ১০ম আত্মঘাতি গোলের ঘটনা ঘটলো।
উইগর্স্ট শেষ পর্যন্ত কোন গোলের দেখা না পেলেও তার উপস্থিতি তুরষ্কের রক্ষনভাগকে পুরো এলোমেলো করে দিয়েছে।
ম্যাচের একেবারে শেষ মুহূর্তে অশোভন আচরনের জন্য তুরষ্কের বদলী বেঞ্চে থাকা বারটাগ ইয়েলডিরিমকে লাল কার্ড দেখানো হয়। এবারের আসরে সব মিলিয়ে ১৯টি হলুদ কার্ড ও একটি লাল কার্ড নিয়ে বাড়ি ফিরেছে তুরষ্ক। ১৯৯৬ সালে চেক প্রজাতন্ত্রের সাথে ইউরোর ইতিহাসে সবচেয়ে বাড়ে উচ্ছৃঙ্খল দলের তকমা এর মাধ্যমে তাদের গায়ে লেগে গেছে।
আগামী বুধবার ডর্টমুন্ডে সেমিফাইনালে ইংল্যান্ডের মুখোমুখি হবে নেদারল্যান্ডস।
বাংলাদেশ সময়: ১৬:৩৩:১০ ৬০ বার পঠিত