টুর্নামেন্টে সবচেয়ে সুন্দর ফুটবল খেলা দল বনাম সবচেয়ে কম গোল করে সেমিফাইনালে পা রাখা দলের লড়াই- ইউরোর প্রথম সেমিফাইনালে স্পেন-ফ্রান্স ম্যাচটিকে চাইলে এভাবেও আখ্যায়িত করা যায়। ইউরোয় এবার ফেবারিটদের তালিকায় ছিল না স্পেনের নাম। কিন্তু তরুণদের নিয়ে গড়া দল নিয়েই বাজিমাত করছেন লুইস ডে লা ফুয়েন্তে। অন্যদিকে হট ফেবারিট হিসেবে টুর্নামেন্ট খেলতে এসে বলতে গেলে ভাগ্যের জোরেই সেমিফাইনালে উঠেছে ফ্রান্স।
ইতালি, ক্রোয়েশিয়া এবং আলবেনিয়াকে নিয়ে গড়া গ্রুপ অব ডেথ থেকে স্পেন যে এতো সহজেই বেরিয়ে আসবে তা কেউই আশা করেনি। কিন্তু ডে লা ফুয়েন্তের দল গ্রুপ পর্বের তিন ম্যাচেই সহজ জয় পেয়েছে। গ্রুপ পর্বে সবচেয়ে ভালো গোলগড় নিয়ে নকআউট পর্বে পা রেখেছে তারা। গ্রুপ পর্বে একটা গোলও হজম করেনি লা রোজারা।
শেষ ষোলোয় জর্জিয়াকে সহজেই হারালেও কোয়ার্টার ফাইনালে প্রতিপক্ষ হিসেবে পেয়েছিল জার্মানিকে। স্বাগতিক জার্মানির বিপক্ষে স্নায়ুচাপকে জয় করেছে স্পেনের তরুণ তুর্কিরা। এবার ফাইনালের আগে আরেক ফাইনাল খেলতে নামছে স্প্যানিশরা।
এবারের আসরে সব কয়টি ম্যাচেই জয় পাওয়া স্পেন অবশ্য ফ্রান্সের বিপক্ষে মাঠে নামার আগে ইনজুরি ও সাসপেনশনে বেশ বেকায়দায়। কোয়ার্টার ফাইনালে জার্মানির বিপক্ষে ইনজুরিতে পড়ে টুর্নামেন্ট শেষ হয়ে গেছে কাতালান তারকা পেদ্রির। আর কার্ডজনিত নিষেধাজ্ঞায় কাটা পড়েছেন সেন্টারব্যাক রবিন লা নরম্যান্ড ও রাইটব্যাক দানি কার্ভাহাল।
তবে সতর্ক থেকে পরিকল্পনামাফিক খেললে দলের জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী স্পেনের লেফটব্যাক মার্ক কুকুরেয়া, ‘ফ্রান্সের বিপক্ষে সবসময়ই আমরা সতর্ক থাকবো। বিশেষ করে যখন আক্রমণে যাবো, তখন আমাদের অনেক বেশি সতর্ক থাকতে হবে। প্রতিপক্ষের অনেক দ্রুততম খেলোয়াড় রয়েছে এবং তারা এটা কাজে লাগাতে চাইবে। তাই আমি মনে করি, পুরো ৯০ মিনিট যদি আমরা পরিকল্পনা অনুযায়ী খেলতে পারি তাহলে তারা সুযোগ কাজে লাগাতে পারবে না। তাই আমাদের সতর্কতার বিকল্প নেই। যখন আমরা বল হারাবো তখন তা দ্রুত পুনরুদ্ধার করতে হবে। তাহলে আমাদের জন্য অনেক সুযোগ তৈরি হবে। দল হিসেবে আমরা অনেক ভালো ফুটবল খেলি। আশা করি সব কিছু ভালো যাবে।’
টুর্নামেন্টে এখন পর্যন্ত স্বরূপে আবির্ভূত হতে পারেনি তারকায় ঠাঁসা ফ্রান্স। দলের সবচেয়ে বড় তারকা কিলিয়ান এমবাপ্পে ভাঙা নাক নিয়ে ভুগছেন মাঠে। পুরো টুর্নামেন্টে ওপেনপ্লে থেকে মাত্র ১টি গোল করার লজ্জাজনক রেকর্ড নিয়ে সেমিফাইনালে উঠেছে দিদিয়ের দেশমের দল। এমবাপ্পে এখন পর্যন্ত ৪ ম্যাচে ২০টি অ্যাটেম্পট নিয়েছেন। যার মধ্যে ৮টা শট ছিলো অন টার্গেটে। তারপরও গোল পেয়েছেন মাত্র একটি। দলের বাজে পারফরম্যান্সের কারণে চাপে আছেন কোচ দেশম।
তবে সেমিফাইনালে দল জ্বলে উঠবে বলে আশাবাদী ফ্রান্সের কোচ দেশম। আর মিডফিল্ডার আদ্রিয়েন রাবিওট তো স্প্যানিশ তারকা লামিনে ইয়ামালকে চ্যালেঞ্জই ছুড়ে দিয়েছেন। তার দাবি, ইয়ামাল স্পেনকে সেমিফাইনালে তুলতে যা করেছেন, ফাইনালে ওঠাতে তার চেয়ে আরও অনেক বেশি কিছু করতে হবে। এই মুহূর্তে ক্লাবহীন থাকা সাবেক য়্যুভেন্তাস তারকা বলেন, ‘এতো বড় একটা টুর্নামেন্টের সেমিফাইনালে নৈপুণ্য দেখানো তার জন্য কঠিন হতে যাচ্ছে। এবং ইউরোর ফাইনালে পৌঁছাতে হলে তাকে আরও অনেক বেশি কিছু করতে হবে, এতদিন যা করেছেন তার চেয়ে অনেক বেশি কিছু।’
মুখোমুখি লড়াইয়ে দুই দলই বলতে গেলে সমানে সমান। এখন পর্যন্ত ৩৬বার মুখোমুখি হয়ে কিছুটা এগিয়ে স্পেন। ১৬ বার জয় পেয়েছে লা রোজারা। অন্যদিকে ১৩ ম্যাচে জয় পেয়েছে ব্লুরা। বাকি ৭ ম্যাচে জয় পায়নি কেউই। সাম্প্রতিককালেও এগিয়ে স্পেন। সবশেষ আট দেখায় পাঁচবার জয় পেয়েছে তিনবারের ইউরো চ্যাম্পিয়নরা।
বাংলাদেশ সময়: ১৬:০৬:৫৫ ৫৪ বার পঠিত