শামীম ওসমানকে সর্বশ্রেষ্ঠ গডফাদার উল্লেখ করে জেলা বিএনপির সভাপতি ও সাবেক এমপি মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দিন বলেছেন, আমি অনেক আগেই বলেছি, ওই গডফাদার একজন কাপুরুষ। ২০০১ সালে আমার সঙ্গে পরাজিত হয়ে বোরখা পরে পালিয়ে গিয়েছিলেন। এবারও তিনি তার কর্মীদের রেখে পালিয়েছেন।
শনিবার (৩১ আগষ্ট) সকাল ১০ টার দিকে সিদ্ধিরগঞ্জের ওমরপুর এলাকার কলাবাগ জামে মসজিদের নির্মাণ কাজ উদ্বোধনকালে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ওই কথা বলেন তিনি। এসময় স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।
গিয়াসউদ্দিন বলেন, বিগত পনের বছর আমি ও আমার সন্তানেরাসহ আমাদের নেতাকর্মীরা কতটা নির্যাতনের শিকার হয়েছি তা আপনারা দেখেছেন। যেখানে যখন সুযোগ পেয়েছে ওই গডফাদার তার বক্তব্যে আমাকে ও আমার সন্তানদেরকে আক্রমণ করে বক্তব্য দিয়েছে। আমি তাকে কাপুরুষ বলি। আগেও বলেছি। যদি সে কাপুরুষ না হতেন তাহলে কি কর্মীদের রেখে এভাবে পালিয়ে যেতেন! তিনি তার নিরাপত্তার কথা ভেবেছেন, তার পরিবার নিয়ে ভেবেছেন। কোনো কর্মীর কথা ভাবেননি। তিনি একটা কাপুরুষ বলেই এটা করেছেন।
তিনি আরও বলেন, স্বৈরাচার সরকারের আমলে আমার নামে, আমার পরিবারের নামে এবং আমার সহকর্মীদের নামে বিভিন্ন মিথ্যা মামলা তারা দিয়েছে। ওই সরকার থাকতে পারলে কয়েকটি মামলায় আমাদের ফাঁসির রায় হতো। মহান আল্লাহ আমাকে দুই মুক্তিযুদ্ধেই অংশ নেওয়ার সুযোগ দিয়েছে। আমি জানি সিদ্ধিরগঞ্জ এলাকার অধিকাংশ মানুষ ভালো। কিছু কুলাঙ্গার সৃষ্টি হয়েছিলো, যারা সন্ত্রাস ও নৈরাজ্য সৃষ্টি করতো। এই এলাকার অর্থ-সম্পদ লুন্ঠন করার জন্য তারা পাগল হয়ে গিয়েছিলো। নারায়ণগঞ্জের সর্বশ্রেষ্ঠ গডফাদার শামীম ওসমানের ক্যাডার বাহিনী হয়ে এই এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব তৈরি করেছিলো। এতে করে আমার এলাকার মান ইজ্জত সম্মান নষ্ট হয়েছে। যারা এগুলো করেছে অব্যশ্যই তাদের বিচারের সম্মুখীন হতে হবে। তাদের বিচারের জন্য আইনকে নিজের হাতে তুলে নেওয়া যাবে না।
গিয়াসউদ্দিন আরও বলেন, সমাজের ভালো মানুষদের সম্মান করতে হবে, অসৎ মানুষকে ঘৃণা করতে হবে। মসজিদ আল্লাহর ঘর, আপনারা সবাই মন খুলে এই মসজিদ উন্নয়নের জন্য সাহায্য করবেন। মসজিদ উন্নয়নের জন্য বন্ধুদের কাছ থেকে চেয়ে আনবেন, এতে অসম্মানিত হওয়ার কিছু নাই। বরং এটা সম্মানের কাজ। আমি আমার সামর্থ অনুযায়ী সাহায্য করবো।
তিনি বলেন, ষড়যন্ত্রকারীরা এখনও থেমে নেই, সেই দিকে আপনাদের সবাইকে সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে। ওই সন্ত্রাসীরা যাতে আর এলাকায় আসতে না পারে। সিদ্ধিরগঞ্জের সবাই শান্তি প্রিয় মানুষ। দুই-একটা কুলাঙ্গারের জন্য আমরা এই এলাকার সুনাম নষ্ট করতে পারি না। কুলাঙ্গাররা অবৈধভাবে অর্থ-বিত্ত তৈরি করেছে। এমনকি এই কুলাঙ্গাররা এই এলাকার ন্যায় বিচার ধ্বংস করে দিয়েছে। তারা অন্যায়ভাবে অর্থের মাধ্যমে পক্ষপাতিত্ব করে বিচার করতো। শামীম ওসমানের ক্যাডার বাহিনী এই এলাকাকে এমনভাবে জিম্মি করে রেখেছিলো, যে মানুষ কখনো প্রতিবাদ করতে পারেনি। আপনারা লক্ষ্য রাখবেন কেউ যাতে কোথাও কোনো চাঁদাবাজি করতে না পারে। সম্পুর্ণ চাঁদাবাজমুক্ত এলাকা থাকবে নারায়ণগঞ্জ। কেউ চাঁদাবাজি করলে আপনারা ব্যবস্থা নিবেন, না পারলে আমাদের বলবেন; আমরা তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমুলক ব্যবস্থা নিবো। কিন্তু আর কোনো সন্তানকে কুলাঙ্গার হতে দেওয়া যাবে না।
গিয়াসাসউদ্দিন আরও বলেন, হোন্ডার বহর নিয়ে তারা এই এলাকায় ভীতির সৃষ্টি করেছে। আজ কোথায় তারা। তাই ক্ষমতা থাকলেই ক্ষমতা দেখাতে নাই। অন্যায় করলে আল্লাহর পক্ষ থেকে যখন শাস্তি এসে গেছে, আজ তারা পলাতক। তাদের নেত্রী শেখ হাসিনা সবাইকে রেখে পলিয় গেছে। আমি আগেও সব জায়গায় বলতাম, সর্বশ্রেষ্ঠ গডফাদার শামীম ওসমান কিন্তু ও একটা কাপুরুষ। অনেক বড় বড় কথা বলেছিল। অনেক হুঙ্কার দিয়েছিল। তার বক্তব্যের পাল্টা বক্তব্য কেউ দিত না। আমি তাকে নিয়ে বলেছি। আমি আল্লাহ ছাড়া কাউকে ভয় পাই না। আমি তখন বলেছি, ও একটা কাপুরুষ, ওকে ভয় পাবেন না। সে তো আবারো পালায় গেছে, কিন্তু সাঙ্গ পাঙ্গদের কথা তো একবারও ভাবলো না।
তিনি আরও বলেন, বিএনপি একটি সর্ববৃহৎ রাজনৈতিক দল। আন্দোলন-সংগ্রামে বিএনপির ভুমিকা কি, আপনারা সব জানেন। এই ১৫ বছরের মধ্যে অধিক সময় আমি আমার বাড়িতে থাকতে পারি নাই। আমি আপনাদের বলবো, যাদের সন্তান কুলাঙ্গার হয়ে গিয়েছিলো; তাদের সন্তানরা যাতে অনুতপ্ত হয়ে তওবা করে ওই পথ থেকে ফিরে আসে।
বাংলাদেশ সময়: ২২:৪১:১০ ৮৬ বার পঠিত