সালমান শাহের মৃত্যুর দিন যা ঘটেছিল

প্রথম পাতা » ছবি গ্যালারী » সালমান শাহের মৃত্যুর দিন যা ঘটেছিল
শুক্রবার, ৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪



সালমান শাহের মৃত্যুর দিন যা ঘটেছিল

ভালো আছি ভালো থেকো, আকাশের ঠিকানায় চিঠি লেখো’-এই গান শোনেননি, এমন শ্রোতা খুঁজে পাওয়া যাবে না। আর এই গান যখন কানে বাজে তখন আনমনেই চোখের কোণে ভেসে ওঠে একজন সুদর্শন নায়কের মুখ। তিনি সালমান শাহ। বাংলা চলচ্চিত্রের নক্ষত্র ছিলেন তিনি। ১৯৯৬ সালের ৬ই সেপ্টেম্বর ইস্কাটনের বাসা থেকে তার লাশ উদ্ধার করা হয়েছিল। শুক্রবার (৬ই সেপ্টেম্বর) তার ২৮ তম মৃত্যুবার্ষিকী।

সেদিনের ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে সালমান শাহ’র মা নীলা চৌধুরী বলেন, ‘সালমানের বাবা সকালে তার বায় যায়। কিন্তু বাসার নিচে দারোয়ান সালমান শাহ’র বাবাকে তার ছেলের বাসায় যেতে দিচ্ছিল না। স্যার এখনতো উপরে যেতে পারবেন না। কিছু প্রবলেম আছে। আগে ম্যাডামকে (সালমান শাহ’র স্ত্রীকে) জিজ্ঞেস করতে হবে। এক পর্যায়ে উনি (সালমান শাহ’র বাবা) জোর করে উপরে গেছেন। কলিং বেল দেবার পর দরজা খুললো সামিরা (সালমান শাহ’র স্ত্রী)।’

উনি (সালমান শাহ’র বাবা ) সামিরাকে বললেন ইমনের (সালমান শাহ’র ডাক নাম) সাথে কাজ আছে, ইনকাম ট্যাক্সের সই করাতে হবে। ওকে ডাকো। তখন সামিরা বললো, আব্বা ওতো ঘুমে। তখন উনি বললেন, ঠিক আছে আমি বেডরুমে গিয়ে সই করিয়ে আনি। কিন্তু যেতে দেয় নাই। আমার হাজব্যান্ড প্রায় ঘণ্টা দেড়েক বসে ছিল ওখানে।”

বেলা এগারোটার দিকে একটি ফোন আসে সালমান শাহ’র মা নীলা চৌধুরীর বাসায়। ঐ টেলিফোনে বলা হলো, সালমান শাহকে দেখতে হলে তখনই যেতে হবে।

টেলিফোন পেয়ে নীলা চৌধুরী দ্রুত ছেলে সালমান শাহ’র বাসার দিকে রওনা হয়েছিলেন। সালমানের ইস্কাটনের বাসায় গিয়ে ছেলে সালমান শাহকে বিছানার ওপর দেখতে পান নীলা চৌধুরী।

নীলা চৌধুরী বলেন, ‘খাটের মধ্যে যেদিকে মাথা দেবার কথা সেদিকে পা। আর যেদিকে পা দেবার কথা সেদিকে মাথা। পাশেই সামিরার (সালমান শাহ’র স্ত্রী) এক আত্মীয়ের একটি পার্লার ছিল। সে পার্লারের কিছু মেয়ে ইমনের হাতে-পায়ে সর্ষের তেল দিচ্ছে। আমি তো ভাবছি ফিট হয়ে গেছে। আমি দেখলাম আমার ছেলের হাতে পায়ের নখগুলো নীল। তখন আমি আমার হাজব্যান্ডকে বলেছি, আমার ছেলে তো মরে যাচ্ছে।’

ইস্কাটনের বাসা থেকে সালমান শাহকে হলি ফ্যামিলি হাসপাতালে নেয়া হলে সেখানকার ডাক্তাররা তাকে মৃত ঘোষণা করে। এরপর ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে ময়না তদন্ত শেষে বলা হয় সালমান শাহ আত্মহত্যা করেছে।

১৯৮৬ সালের দিকে হানিফ সংকেতের গ্রন্থনায় ‘কথার কথা’ নামের একটি ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান প্রচার হতো। এর কোনও একটি পর্বে ‘নামটি ছিল তার অপূর্ব’ নামের একটি গানের মিউজিক ভিডিও পরিবেশিত হয়। হানিফ সংকেতের কণ্ঠে গাওয়া এই মিউজিক ভিডিওতে মডেল হওয়ার মাধ্যমেই সালমান শাহ মিডিয়াতে প্রথম সবার নজর কাড়েন।

তখন অবশ্য তিনি ইমন নামেই পরিচিত ছিলেন। প্রয়াত নাট্যজন আব্দুল্লাহ আল মামুনের প্রযোজনায় ‘পাথর সময়’ ধারাবাহিক নাটকে একটি ছোট চরিত্র এবং কয়েকটি বিজ্ঞাপনচিত্রেও কাজ করেছিলেন।

গায়ক হিসেবেও সালমানের পরিচিতি ছিল। ছোট বেলা থেকেই শিল্প-সংস্কৃতির প্রতি দারুণ আগ্রহ ছিল তার। বন্ধু মহলে সবাই তাকে কণ্ঠশিল্পী হিসেবে চিনতেন। ১৯৮৬ সালে ছায়ানট থেকে পল্লী গীতিতে উত্তীর্ণ হয়েছিলেন তিনি। চলচ্চিত্রে অভিনয়ে আসার আগেই ১৯৯২ সালের ১২ আগস্ট সাবেক ক্রিকেটার শফিকুল হক হিরার কন্যা সামিরার সঙ্গে বিয়ে হয় সালমানের।

রূপালি পর্দায় সালমান সাম্রাজ্যের সূচনা হয় নব্বই দশকের শুরুর দিকে সোহানুর রহমান সোহানের ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’ সিনেমার মধ্য দিয়ে। মাত্র চার বছরে ২৭টি সিনেমা করেন তিনি।

সব শ্রেণির দর্শক-সমালোচকদের মন জয় করে তারকা হওয়ার জন্য সময়টা যথেষ্ট নয়। এর মধ্যে প্রায় দশটি অসমাপ্ত সিনেমা। প্রথম সিনেমা ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’ ১৯৯৩ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত একটি বাংলাদেশি চলচ্চিত্র। সিনেমাটি পরিচালনা করেছেন সোহানুর রহমান সোহান। এটি আমির খান-জুহি চাওলা জুটির সুপারহিট হিন্দি চলচ্চিত্র ‘কেয়ামত সে কেয়ামত তক’-এর অফিসিয়াল পুনর্নির্মাণ।

হিন্দি চলচ্চিত্রের কাহিনি লিখেছেন নাসির হোসেন খান, যার বাংলা চিত্রনাট্য লিখেছেন সোহানুর রহমান সোহান ও সংলাপ লিখেছেন আশীষ কুমার লোহ। চলচ্চিত্রটির প্রযোজক সুকুমার রঞ্জন ঘোষ এবং প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান আনন্দমেলা সিনেমা লিমিটেড। এতে প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেন মৌসুমী, সালমান শাহ, রাজিব, আহমেদ শরীফ, আবুল হায়াত প্রমুখ। এটি মৌসুমী ও সালমান শাহ অভিনীত প্রথম চলচ্চিত্র।

এই সিনেমায় আরও অভিষেক হয় কণ্ঠশিল্পী আগুনের। এতটা জায়গা নায়করাজ রাজ্জাক-পরবর্তী সময়ে কেউ নিতে পারেননি। হয়ত অল্প সময়ের জন্য এসেছিলেন বলেই এত দ্যুতি ছড়াতে পেরেছিলেন, কেটে গেছেন দাগ। যে দাগটা তার প্রস্থানের টানা ২৭ বছর পরেও এতটা জ্বলজ্বলে। তার অনুপস্থিতি আর অকাল প্রস্থান আজও পোড়াচ্ছে অগুনতি মানুষের মন।

মৃত্যু ১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর। মাত্র ২৫ বছরের জীবন। ক্ষণজন্মা অথচ কী বিস্তৃত প্রভাব। তখনও যেমন ততোধিক উজ্জ্বল এখনও। সালমান শাহ-পরবর্তী সময়ে যারা চলচ্চিত্রে নায়ক হওয়ার জন্য এসেছেন তারা প্রত্যেকেই বলেছেন, এখনও সালমান শাহ-ই তাদের অনুপ্রেরণার প্রধান উৎস। সালমানকে দেখেই তারা নায়ক হতে এসেছেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৭:৫৯:৫৪   ২৪ বার পঠিত  




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

ছবি গ্যালারী’র আরও খবর


আজকের রাশিফল
আল কোরআন ও আল হাদিস
সহধর্মিণী হারালেন নাট্যজন মামুনুর রশীদ
লেবাননে পেজার বিস্ফোরণে ৯ জন নিহত, ২ হাজার ৮শ’ আহত
এখন থেকে প্রকল্পের সব তথ্য ওপেন থাকবে : প্রধান উপদেষ্টা
রোহিঙ্গা শিবির থেকে অস্ত্র-গুলিসহ সন্ত্রাসী গ্রেপ্তার
রূপপুর প্রকল্পের সমাপ্তির আশ্বাস রাশিয়ার
যমুনা সার কারখানা পুনরায় চালুর দাবিতে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ
বাংলাদেশ সমবায় ব্যাংকের ৪৭তম বার্ষিক সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত
সালমানসহ ২৮ জনের বিরুদ্ধে সিআইডির ১৭ মামলা

News 2 Narayanganj News Archive

আর্কাইভ