বীর মুক্তিযোদ্ধা শশুরকে জন্মদাতা বানিয়ে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় পুত্রবধূর চাকরি

প্রথম পাতা » ছবি গ্যালারী » বীর মুক্তিযোদ্ধা শশুরকে জন্মদাতা বানিয়ে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় পুত্রবধূর চাকরি
সোমবার, ৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪



বীর মুক্তিযোদ্ধা শশুরকে জন্মদাতা বানিয়ে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় পুত্রবধূর চাকরি

জামালপুর প্রতিনিধি‌ : জামালপুরে সরিষাবাড়ীতে মাফিয়া খাতুন ওরফে মিতু নামে এক নারী পিতার নাম পরিবর্তন করে বীর মুক্তিযোদ্ধা শ্বশুরকে পিতা সাজিয়ে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চাকরি নিয়ে শিক্ষকতা করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

এঘটনা উপজেলার ভাটারা ইউনিয়নের ৬১ নং মইশাবাদুরিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ঘটেছে। বিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, সহকারী শিক্ষক মাফিয়া খাতুন মিতু বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুর রহমানের ছোট ছেলে খায়রুল ইসলাম ওরফে খোকন এর স্ত্রী। সে ১৭ জানুয়ারি ২০১৬ সালে মইশাবাদুরিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন।

এঘটনায় তথ্যানুসন্ধানে গিয়ে জানা যায়, বীর মুক্তিযোদ্ধা মৃত আবদুর রহমান ভাটারা ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডের ধোপাদহ জুলারখুপি সাপলেঞ্জা গ্রামের বাসিন্দা। তার দুই ছেলে ও এক মেয়ে। বড় মেয়ের নাম রহিমা আক্তার। বড় ছেলের নাম শফিকুল ইসলাম ওরফে খোরশেদ আলম এবং ছোট ছেলের নাম খায়রুল ইসলাম ওরফে খোকন মিয়া। বড়ছেলে চাকরি করেন পুলিশে এবং ছোট ছেলে চাকরি করেন সেনাবাহিনীতে।

স্থানীয়রা জানান, বীর মুক্তিযোদ্ধার ছোট ছেলে খায়রুল ইসলাম খোকন জামালপুর জেলার মাদারগঞ্জ উপজেলার ৭নং সিদুলী ইউনিয়নের রায়ের ছড়া গ্রামের মোঃ হাসান আলী ওরফে মাহালি সুতারের মেয়ে মাফিয়া খাতুন ওরফে মিতুকে ২০১০ সালে বিয়ে করেন। ওই সময় মাফিয়া খাতুন মিতু নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিলেন।

জানা যায়, বীর মুক্তিযোদ্ধা কোটায় চাকরি নেওয়ার আশায় মাফিয়া খাতুন মিতু নবম শ্রেণিতে পড়ালেখা কালীন সময় এসএসসি পরীক্ষার রেজিস্ট্রেশন করতে গিয়ে তাহার পিতার নাম মোঃ হাসান আলী পরিবর্তে শশুর বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুর রহমান এবং মাতা মালেকা বেগম এর পরিবর্তে শাশুড়ি শরিফা রহমান এর নাম বসিয়ে রেজিস্ট্রেশন করেন এবং এসএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। যার রেজিস্ট্রেশন নং- ৬৫১৮৯৯ রোল নং -২৯৭৩৪৬। এরপর এসএসসির ওই সার্টিফিকেট দিয়ে ভাটারা স্কুল এন্ড কলেজে ভর্তি হয়ে এইচএসসি পাস করেন মিতু।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মাফিয়া খাতুন মিতু পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত পড়ালেখা করেন ৬৩ নং সদরাবাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। এরপর পঞ্চম শ্রেণী পাস করে ২০০৭ সালে রায়ের ছড়া সদরাবাড়ী মডেল একাডেমীতে নিজ পিতৃ পরিচয়ে ভর্তি হন এবং একই পরিচয়ে তিনি অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত পড়ালেখা করেন। এরপর নবম শ্রেণীতে গিয়ে তিনি পিতৃত্ব পরিচয় ও ঠিকানা পরিবর্তন করেছেন বলে জানান বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

এছাড়াও একই কায়দায় নিজের পিতা ও মাতার স্থলে বীর মুক্তিযোদ্ধা শশুর শাশুড়ির নাম বসিয়ে জাতীয় পরিচয়পত্র করেছেন মাফিয়া খাতুন। যার পরিচয়পত্র নং ৮২২২০৯৫৬১৭। এরপর হতে সার্টিফিকেট অনুযায়ী জন্মদাতা পিতা মোঃ হাসান আলীর পরিবর্তে বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুর রহমান হয় তার জন্মদাতা এবং মাতা মালেকা বেগম এর পরিবর্তে শাশুড়ি শরিফা রহমান হয় তার জন্মদাত্রী মাতা।

সেই হিসেবে বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রহমানের ছোট ছেলে খায়রুল ইসলাম খোকন হয় তার আপন সহোদর ভাই। বর্তমানে মাফিয়া খাতুন মিতু তার আপন ভাইয়ের সঙ্গে দাম্পত্য জীবনযাপন করছেন বলে এলাকায় ব্যাপক সমালোচনা সহ নিন্দার ঝড় উঠেছে।

এবিষয়ে অভিযুক্ত মাফিয়া খাতুন মিতুর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি এবিষয়ে কোন মন্তব্য করতে চাইনা। এছাড়াও মিতুর স্বামী খায়রুল ইসলাম খোকন এর সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, এ ব্যাপারে আমি কোন কথা বলতে চাচ্ছি না। আপনাদের যা তথ্য সংগ্রহ করার করেন।

এদিকে বীর মুক্তিযোদ্ধার বড় ছেলে খোরশেদ আলম বলেন, খায়রুল ইসলাম খোকন আমার ছোট ভাই। মাফিয়া খাতুন মিতু আমার ছোট ভাইয়ের স্ত্রী। সে আমার বোন নয়। আমার বোনের নাম রহিমা খাতুন। আমরা দুই ভাই এক বোন। মিতু যে কাজটি করেছে সেটি নিঃসন্দেহে নিন্দনীয় এবং অপরাধ। আমার ছোট ভাই খায়রুল ইসলাম তার এনআইডি’তে মায়ের নাম পরিবর্তন করে মোছাঃ রাবেয়া বেগম লিখেছে, এটিও অপরাধ। কেননা আমার বাবা একটি বিয়ে করেছে এবং আমাদের মা একজনই। তার নাম শরিফা রহমান। তাদের এই জাল-জালিয়াতির বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন বলে আমি মনে করি।

এব্যাপারে উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা মোফাজ্জল হোসেন বলেন,
শশুরকে বাপ বানিয়ে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় চাকরি নেওয়া জাল জালিয়াতি। এটা জঘন্য অপরাধ। এর বিরুদ্ধে অবিলম্বে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া দরকার।

এবিষয়ে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নাহিদা ইয়াসমিন কালবেলা কে বলেন, মাফিয়া খাতুন মিতু সহকারী শিক্ষক মইশাবাদুরিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সম্পর্কিত একটি অভিযোগ তদন্ত করার জন্য আমার কাছে জেলা কর্মকর্তা নির্দেশনা পাঠিয়েছেন। আমি তদন্ত করে এর উপযুক্ত প্রমাণাদি পেশ করবো।

এবিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শারমিন আক্তার বলেন, বিষয়টি আমি শুনেছি এবং প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে নির্দেশ দিয়েছি। বিষয়টি তদন্ত করে দেখার জন্য। সত্য প্রমাণিত হলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।

বাংলাদেশ সময়: ২৩:৪৪:৫০   ৯২ বার পঠিত  




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

ছবি গ্যালারী’র আরও খবর


গণ-অভ্যুত্থানে নিহত-আহতদের পরিবারকে পুনর্বাসন করা হবে : নাহিদ ইসলাম
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি উপদেষ্টার সাথে বিশ্ব ব্যাংকের ভাইস প্রেসিডেন্টের বৈঠক
অবৈধ ইটভাটা বন্ধ করা হবে : পরিবেশ উপদেষ্টা
বাংলাদেশে চুরি-ডাকাতির মেগাপ্রজেক্ট খোলা হয়েছিল : ফয়জুল করীম
সংস্কার কমিশনের কাজ শুরু ১ অক্টোবর, প্রতিবেদন ডিসেম্বরে
বাংলাদেশীদের গণতান্ত্রিক ও অন্তর্ভুক্তিমূলক ভবিষ্যতকে সমর্থন দিয়ে যাবে অস্ট্রেলিয়া
মূল সংস্কার উদ্যোগে বিশ্বব্যাংকের সহায়তার অঙ্গীকার
ঢাবিতে যুবককে পিটিয়ে হত্যা, ছাত্রলীগ নেতাসহ আটক ৩
অভিবাসী বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দু ওহাইও সফরের অঙ্গীকার ট্রাম্পের
সমন্বয়ক পরিচয়ে চাঁদা দাবি, ৯ জনকে পুলিশে দিল জনতা

News 2 Narayanganj News Archive

আর্কাইভ