মহাবিস্ফোরণের মধ্যদিয়ে আল্লাহ তাআলা এই পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন। আবার এক প্রলয়ংকরী ঘটনার মধ্যদিয়ে এ পৃথিবী ধ্বংসও করবেন। এ দুটি ঘটনার চেয়েও বড় ঘটনা আমাদের প্রিয় নবী হজরত মুহাম্মাদুর রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের এ ধরায় আগমন।
তিনি ছিলেন আল্লাহ তাআলার সৃষ্টির সেরা। তার আগমনের অপেক্ষায় ছিল আসমান ও জমিনের প্রতিটি জীব ও প্রতিটি প্রাণী। যুগের পর যুগ ধর্মীয় পণ্ডিতরা তার আগমনের সুসংবাদ দিতেন। জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত তার দেখা পাওয়ার অপেক্ষায় থাকতেন। তার সে আগমন কোনো সাধারণ ঘটনা ছিল না।
তার নবুয়তের পর যেমন বিশ্বব্যাপী সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক পরিবর্তন ঘটেছিল, তেমনি তার জন্মের সময়েও পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে ঘটেছিল অলৌকিক কিছু ঘটনা।
হজরত উসমান ইবনে আবুল আস (রা.)-এর মা হজরত ফাতেমা বিনতে আবদুল্লাহ (রা.) বলেন, ‘রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জন্মের মুহূর্তে আমি মা আমিনার কাছে ছিলাম। আমি দেখলাম, বিবি আমিনার ঘরটি আলোয় আলোকিত হয়ে গেল। আকাশের সব তারকা নিচের দিকে ঝুঁকে পড়ল। আমার মনে হতে লাগল, তারকাগুলো যেন আমার ওপর এসে পড়বে।’ (ফাতহুল বারি ৬/৭২৬)
তারকারাজির নিম্নমুখী হয়ে ঝুঁকে পড়ার দ্বারা এ ইঙ্গিত প্রদান করা হয়েছে যে, অচিরেই পৃথিবী থেকে কুফর ও শিরকের অমানিশা দূর হবে। হেদায়েতের উজ্জ্বল আলোকে এ পৃথিবী আলোকিত হয়ে উঠবে।
পবিত্র কোরআনে এ বিষয়টি সুস্পষ্টভাবে আলোচনা করা হয়েছে। আল্লাহ বলেন, নিশ্চয় তোমাদের কাছে আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে এসেছে আলো (হেদায়েত) ও সুস্পষ্ট কিতাব। যারা তার সন্তুষ্টি কামনা করে আল্লাহ তাআলা তাদেরকে এ হেদায়েতের আলোকবর্তিকা ও কিতাবের সাহায্যে শান্তির পথে পরিচালনা করেন এবং তারই অনুমতিক্রমে কুফর ও শিরকের অন্ধকার থেকে তাদেরকে হেদায়েতের পথে নিয়ে আসেন। (সুরা মায়েদা ১৫-১৬)
আরেক বর্ণনায় এসেছে, জন্মের সময় বিশ্বনবীর মায়ের পেট থেকে এমন একটি নুরের বিচ্ছুরণ ঘটেছিল, যার আলোকে পূর্ব থেকে পশ্চিম দিগন্ত পর্যন্ত সবকিছু আলোকিত হয়ে গিয়েছিল। কোনো কোনো বর্ণনায় পাওয়া যায়, মহানবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন ভূমিতে আবির্ভূত হলেন, তখন তিনি উভয় হাতের ওপর ভর দিয়ে ছিলেন। তারপর এক মুষ্টি মাটি নিয়ে আকাশের দিকে দৃষ্টিপাত করলেন। (মাওয়াহিবে লাদুন্নিয়া)
মহানবীর জন্মক্ষণে একদিকে পৃথিবীর মূর্তিশালায় নবুয়তের সূর্যোদয়, অপরদিকে পারস্য সম্রাট কিসরার রাজপ্রাসাদে ভূমিকম্পের সৃষ্টি হয়।
এ ভূমিকম্পের ফলে রাজপ্রাসাদের ১৪টি গম্বুজ ভেঙে গুঁড়িয়ে যায়। পারস্যের এক অগ্নিকুণ্ড, যা এক হাজার বছরব্যাপী বিরতিহীনভাবে জ্বলছিল, তা সে শুভ মুহূর্তে হঠাৎ নিভে যায়। সাওয়াহ নামক এক নদীতে যথারীতি পানি প্রবাহিত হচ্ছিল, নবীর আগমন মুহূর্তে হঠাৎ তার অথৈ জলরাশি শুকিয়ে যায় (সিরাতে মুস্তফা ১/৬৯)। প্রকৃতপক্ষে এটি ছিল অগ্নিপূজাসহ সব ভ্রান্তির অবসানের ইঙ্গিত।
রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘আমি তোমাদের আমার প্রাথমিক বিষয় সম্পর্কে বলছি। আমি হলাম ইবরাহিম (আ.)-এর দোয়া ও ঈসা (আ.)-এর সুসংবাদ। আমার মায়ের স্বপ্ন, যা তিনি আমাকে প্রসব করার সময় দেখেছিলেন। সে সময় এমন এক নুর উদ্ভাসিত হয়েছে, যার মাধ্যমে আমার আম্মাজানের জন্য সিরিয়ার প্রাসাদও উজ্জ্বল হয়েছিল। (দালায়েলুন নবুওয়াত লিল-বায়হাকি ৩৫)
বাংলাদেশ সময়: ১১:৫১:০৪ ৮৬ বার পঠিত