জামালপুর প্রতিনিধি : চিকিৎসক সংকটের কারণে নিজের ভাঙা পা নিয়েই হুইল চেয়ারে বসে রোগীদের স্বাস্থ্য সেবা দিচ্ছেন ডাঃ শারমিন সুলতানা শান্তা। শুক্রবার (২০ সেপ্টেম্বর) সকালে এমনটাই দেখা মেলেছে জামালপুরে সরিষাবাড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মহিলা ও শিশু ওয়ার্ডে।
পরে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ডাঃ শারমিন সুলতানা শান্তা গত (৩০ আগস্ট) সকালে চিকিৎসক সংকটের কারণে অতিরিক্ত ডিউটি করার সময় হঠাৎ সিঁড়ি থেকে পড়ে তার (পা মচকে) যায়। পরে তিনি শারীরিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং ছুটিতে যান।
এদিকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে মাত্র ৩জন ডাক্তারের মধ্যে একজন হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে চিকিৎসা সেবা আরো ব্যাহত হয় এবং ডাক্তার সংকট দেখা দেয়। পরে তিনি বাধ্য হয়েই শারীরিক অসুস্থতা নিয়ে চিকিৎসক সংকট কাটাতে মচকে যাওয়া (প্লাস্টার করা পা) নিয়ে হুইল চেয়ারে বসে ঘুরে ঘুরে রোগীদের চিকিৎসা সেবা প্রদান করে যাচ্ছেন এবং নিয়মিত ডিউটি করছেন।
হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, সরিষাবাড়ী উপজেলায় প্রায় ৩ লক্ষ ১৬ হাজার মানুষের বসবাস করে। এসব মানুষের স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ১৯৬৩ সালে ৩১ শয্যা বিশিষ্ট সরিষাবাড়ী হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা হয়। এরপর ২০০৮ সালে ৩১ শয্যা থেকে ৫০ শয্যায় উন্নীত হয়। কিন্তু ৩১ শয্যার ভিতরেই ৫০ শয্যা রোগীদের চিকিৎসা সেবা দেওয়া হচ্ছে। মাঝেমধ্যে দেখা যায়, শয্যা সংকট থাকায় রোগীদের জায়গা হয় হাসপাতালের মেঝেতে।
এছাড়াও উপজেলা ৮টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভার সহ পার্শ্ববর্তী মাদারগঞ্জ, সিরাজগঞ্জ, ধনবাড়ি উপজেলার একাংশের মানুষ এখানে চিকিৎসা নিতে আসে। জানা যায়, উপজেলার স্বাস্থ্যসেবাদানকারী একমাত্র সরকারি এই প্রতিষ্ঠানে প্রতিদিন চিকিৎসা নিতে আসেন প্রায় ৩-৪ শতাধিক মানুষ।
হাসপাতাল সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ জানায়, গত ১বছর যাবত চিকিৎসক সংকটে থাকায় চিকিৎসা সেবা ব্যাপক ব্যাহত হচ্ছে প্রতিনিয়ত। এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স পরিচালনার জন্য ২৯টি পদ রয়েছে। তন্মধ্যে কাগজ কলমে চিকিৎসক রয়েছেন ১০ জন। এদের মধ্যে মেডিকেল অফিসার রয়েছেন ৩ জন। বাকিরা নিয়মিত নয়। তিনজন চিকিৎসক দিয়ে ৫০ শয্যা বিশিষ্ট স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে স্বাস্থ্যসেবা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে বলে জানান হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
এবিষয়ে শারীরিক অসুস্থ ডাঃ শারমিন সুলতানা (শান্তা) বলেন, ‘হাসপাতালে চিকিৎসক ব্যাপক সংকট। মাত্র ৩ জন চিকিৎসক দিয়ে ৫০শয্যা হাসপাতাল চালানো অনেক কঠিন বিষয়। ২৪ ঘন্টা ডিউটি করার পর সিঁড়ি থেকে স্লিপ করে পা মচকে গেছে। সুস্থ্য হওয়ার জন্য ছুটি নেওয়ার সুযোগ নেই, ডিউটি করতেই হচ্ছে। তাই হুইল চেয়ারের সহযোগীতা নিয়ে রোগীদের চিকিৎসা সেবা দিয়ে যাচ্ছি।
এব্যাপারে সরিষাবাড়ী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাঃ রবিউল ইসলাম (আরএমও) বলেন, সেবা দিতে চরম ভাবে আমরা হিমশিম খাচ্ছি। কোন ডাক্তার অসুস্থ হলে ছুটি নিতে পারি না। জরুরি বিভাগ, বর্হির বিভাগ ও অন্তঃ বিভাগে মাত্র ৩ জন মেডিকেল অফিসাকে পর্যায়ক্রমে দেখতে হচ্ছে। ৫০ শয্যা হাসপাতাল ৩ জন চিকিৎসক দিয়ে কখনই চলতে পারে না। উদ্ধর্তন কর্তৃপক্ষের এবিষয়ে সুদৃষ্টি দেওয়া উচিত বলে তিনি মনে করছেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৮:৩৫:০২ ১৭০ বার পঠিত