বার্ধক্য, দুশ্চিন্তা, অনিয়ম ইত্যাদি নানাবিধ কারণে আবু তালিবের অসুস্থতা ক্রমেই বৃদ্ধি পেতে থাকে এবং তিনি মৃত্যুমুখে পতিত হন। তার মৃত্যু গিরিসংকটে অন্তরিনাবস্থা শেষ হওয়ার ৬ মাস পর নবুওয়াতের ১০ম বর্ষের রজব মাসে। এ ব্যাপারে অন্য একটি মত হচ্ছে তিনি খাদিজা রা.-এর মৃত্যুর মাত্র তিন দিন পূর্বে রমজান মাসে মৃত্যুবরণ করেন।
সহিহ বুখারিতে মুসাইয়িব রা. হতে বর্ণিত হয়েছে যে, আবু তালিবের মৃত্যুর সময় উপস্থিত হলে নবী কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার নিকটে আগমন করেন। সেখানে আবু জাহলও উপস্থিত ছিল।
রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, أَيْ عَمِّ، قُلْ: لَا إِلٰهَ إِلاَّ اللهُ ، كَلِمَةً أُحَاجُ لَكَ بِهَا عِنْدَ اللهِ ‘চাচাজান! আপনি শুধু একবার লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ কালেমাটি পাঠ করুন, যাতে আমি বিচারদিবসে প্রমাণ হিসেবে তা আল্লাহর সমীপে পেশ করতে পারি।’
আবু জাহল এবং আব্দুল্লাহ বিন উমাইয়া বলল, ‘আবু তালিব আব্দুল মুত্তালিবের ধর্ম হতে কি তাহলে শেষ পর্যন্ত বিমুখ হয়েই যাবেন?’ তারপর এরা উভয়েই অবিরাম তার সঙ্গে কথা বলতে থাকে। সব শেষে আবু তালিব যে কথাটি বলেছিলেন তা হচ্ছে, ‘আব্দুল মুত্তালিবের ধর্মের উপর।’ নবী করিম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, لَأَسْتَغْفِرَنَّ لَكَ مَا لَمْ أُنْهَ عَنْـهُ ‘আমি যতক্ষণ বাধাপ্রাপ্ত না হব ততক্ষণ আপনার জন্য ক্ষমাপ্রার্থনা করতে থাকব।’
এ প্রেক্ষিতে এ আয়াতে কারিমা অবতীর্ণ হয়
مَا كَانَ لِلنَّبِيِّ وَالَّذِيْنَ آمَنُوْا أَن يَسْتَغْفِرُوْا لِلْمُشْرِكِيْنَ وَلَوْ كَانُوْا أُوْلِي قُرْبٰى مِن بَعْدِ مَا تَبَيَّنَ لَهُمْ أَنَّهُمْ أَصْحَابُ الْجَحِيْمِ ‘নবী ও মুমিনদের জন্য শোভনীয় নয় মুশরিকদের জন্য ক্ষমাপ্রার্থনা করা, তারা আত্মীয়-স্বজন হলেও, যখন এটা তাদের কাছে সুস্পষ্ট যে, তারা জাহান্নামের অধিবাসী।’ (সুরা তওবা, আয়াত : ১১৩)
আরো অবতীর্ণ হয় إِنَّكَ لاَ تَهْدِيْ مَنْ أَحْبَبْتَ ‘তুমি যাকে ভালোবাসো তাকে সৎপথ দেখাতে পারবে না।’ (সুরা কাসাস, আয়াত : ৫৬) এখানে এ কথা বলা নিষ্প্রয়োজন যে, আবু তালিব রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে কী পরিমাণ সাহায্য-সহযোগিতা ও রক্ষণাবেক্ষণ করেছিলেন। মক্কার অনাচারী মুশরিকগণের আক্রমণ থেকে ইসলামি আন্দোলনের প্রতিরক্ষার ব্যাপারে প্রকৃতই তিনি ছিলেন দুর্গস্বরূপ।
কিন্তু আল্লাহর নবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং ইসলামের জন্য এত করেও যেহেতু তিনি বংশপম্পরাসূত্রে প্রাপ্ত বহুত্ববাদের প্রভাব কাটিয়ে আল্লাহর একত্ববাদে বিশ্বাস স্থাপন করতে পারলেন না, সেহেতু দোরগোড়ায় আগত কামিয়াবি থেকে বঞ্চিতই রয়ে গেলেন।
যেমন সহিহুল বুখারি শরিফে আব্বাস বিন আব্দুল মুত্তালিব হতে বর্ণিত আছে যে, তিনি রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট জিজ্ঞাসা করলেন, ‘তুমি তোমার চাচার কি উপকারে আসবে?’ কারণ, নবী কারিম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের রক্ষণাবেক্ষণ এবং নিরাপত্তা বিধানের ব্যাপারে তার শত্রুদের সঙ্গে যুদ্ধ করতেও তিনি প্রস্তুত ছিলেন।
রসুলুল্লাহ বললেন
هُوَ فِيْ ضَحْضَاحٍ مِن نَّارٍ، وَلَوْلَا أَنَا لَكَانَ فِيْ الدَّرْكِ الْأَسْفَلِ مِنْ النَّارِ ‘তিনি এখন জাহান্নামের অগভীর স্থানে অবস্থান করেছেন। যদি আমি তার সঙ্গে সম্পর্কিত না হতাম তা হলে তিনি জাহান্নামের অতলে ডুবে যেতেন।’ (সহিহ বুখারি আবু তালিবের ঘটনা অধ্যায়, ১ম খণ্ড, পৃ. : ৫৪৮)
আবু সাইদ খুদরি রা. বর্ণনা করেছেন যে, একদফা রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট তার চাচা আবু তালিবের আলোচনা উপস্থিত হয়। আলোচনা সূত্রে তিনি বলেন, ‘সম্ভবত কিয়ামতের দিন আমার সুপারিশ তার উপকারে আসবে এবং তাকে জাহান্নামের এক অগভীর স্থানে রাখা হবে যা শুধু তার দু-পায়ের গিঁট পৌঁছবে।’ (সহিহ বুখারি, আবু তালিবের ঘটনা অধ্যায়, ১ম খণ্ড, পৃ. : ৫৪৮)
বাংলাদেশ সময়: ১৫:২৯:১৩ ৩৭ বার পঠিত