জামালপুর প্রতিনিধি : জামালপুরে সরিষাবাড়ীতে জমি সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে বাড়ীঘর ভাংচুর সহ রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে আহত হয়েছে অন্তত ৩০ জন। এঘটনা উপজেলার মহাদান ইউনিয়নের মাটিয়াজানি পূর্বপাড়া এলাকায় ঘটেছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, শুক্রবার (৪ অক্টোবর) বিকালে মাটিয়াজানি গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত প্রাপ্ত সেনা সদস্য মোঃ ওমর আলী উরফে মেন্দি হাজীর ছেলে রোকনের নেতৃত্বে একই গ্রামের মোঃ মোজাফ্ফর আলীর দুই ছেলে বেনজির আহমেদ বিপুল ও হাবিবুর রহমান বেনুর নামে ক্রয়কৃত সম্পত্তিতে তোলা একটি দুচালা ঘর তারা ভাংচুর করে।
এসময় বিপুলের স্ত্রী খায়রুন নাহার নিজের ঘর হতে জানালা দিয়ে ভাঙচুরের ভিডিও ধারণ করে। এই দেখে রোকনের ছেলে হৃদয় তার মোবাইল ফোন কেড়ে নেয় এবং তার উপর হামলা করে। পরে তাদের মধ্যে সংঘর্ষ বাঁধলে স্থানীয়রা ছাড়িয়ে দেয়।
এর কিছুক্ষণ পর রোকনের নেতৃত্বে আবারও ২০-৩০ জন বহিরাগত লোক দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে অতর্কিত ভাবে হামলা করে বিপুলের বাড়িতে। এতে ঘটে রক্তক্ষয়ী ঘটনা। আহত হয় অন্তত ৩০জন। পরে আহতদের স্থানীয়রা উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঠিয়ে দেয়।
আহতরা হলেন - খলিলুর রহমান, মাসুদ রানা, মাজেদ মিয়া, নাহিদ হাসান, কামরুন নাহার, অপরদিকে রোকন মিয়া, পলাশ মিয়া ,হৃদয় মিয়া, সায়েদা বেগম ও অমর আলী। গুরুতর আহতরা হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসাধীন রয়েছে। আর বাকিরা প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি চলে গেছে বলে হাসপাতাল সূত্রে জানান।
এদিকে ভুক্তভোগী বিপুল ও বেনু জানান, রোকনের নেতৃত্বে বহিরাগত সন্ত্রাসীরা দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে আমাদের বাড়িতে হামলা করে দুটি মটরসাইকেল সহ বাড়ি ভাঙচুর করে। ঘরের আসবাবপত্র ভেঙ্গে ৩ ভরি স্বর্ণ সহ দুই লক্ষ টাকা লুট করে নিয়ে যায় তারা।
বিপুলের চাচা মাজেদ বলেন, অমর আলী মিলিটারি ১৯৯৩ সালে আমার ভাই খোকনের কাছ থেকে ৩৮ শতাংশের কাতে ৮ শতাংশ জমি ক্রয় করে। ওই সময় ওই জমিটির উত্তরাংশে একটি পরিত্যক্ত গর্ত ছিল। দলিলের উত্তরাংশ উল্লেখ করে জমি লিখে নিলেও সে পরিত্যক্ত জায়গায় না গিয়ে জমিটির দক্ষিণাংশে সে দখল নেয়। দীর্ঘদিন জমিটি চাষাবাদ করার পর সেই জমি থেকে মাটি উত্তোলন করে বসতবাড়ি করে।
এদিকে ২০২২ সালে যখন আমার দুই ভাতিজা বিপুল ও বেনু তার আরেক চাচার কাছ থেকে ওই একই দাগে ৩৮ শতাংশের কাতে পরিতক্ত গর্তটি সহ ৯ শতাংশ জমি ক্রয় করে মাটি কেটে ভরাট করে। ঠিক তখনই মিলিটারি ও তার সন্তানেরা তাদের দলিলে লেখা উত্তরাংশের শব্দটি ব্যবহার করে ভাতিজার ক্রয়কৃত ও মাটি ভরাটকৃত জমিটি দাবি করে দখল নিতে চায়। আর এই নিয়েই উভয়পক্ষের মধ্যে জমিসংক্রান্ত বিরোধ, বাড়ীঘরে হামলা, ভাঙচুর ও রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে বলে জানান তিনি।
এদিকে অভিযুক্ত রোকন মিয়া বলেন, আমার বাবা আমার মা সায়দা বেগমের নামে ৩১ বছর আগে জমিটির উত্তরাংশে ৮ শতাংশ জমি ক্রয় করে। কিন্তু দাতা আমাদের দখল দিয়েছিল দক্ষিণাংশে। তখন আমরা কিছু বলিনি। এখন দলিল সূত্রে আমরা দক্ষিণাংশে হতে উত্তরাংশে আসতে চাচ্ছি। কিন্তু জমিদাতা ও তার ভাতিজারা আমাদেরকে আসতে দিচ্ছে না। জোরপূর্বক আমাদেরকে না জমি তারা দখল করে নিচ্ছে। আমরা বাধা দেওয়ায় আমাদেরকে তারা মারধর করেছে। আমরা এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত সহ এর ন্যায়বিচার চাই।
এ বিষয়ে সরিষাবাড়ী থানার অফিসার ইনচার্জ চাঁদ মিয়া বলেন, এ ঘটনায় এখনো কোনো অভিযোগ পাওয়া যায়নি। অভিযোগ পেলে, তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
বাংলাদেশ সময়: ২২:১৩:৫১ ৭১ বার পঠিত