দেশে ক্যান্সারে আক্রান্ত নারী রোগীদের মধ্যে স্তন ক্যান্সারে আক্রান্তের হার সবচেয়ে বেশি। গবেষণা বলছে, প্রতিবছর নতুন করে প্রায় ১৩ হাজার নারী ক্যান্সারে আক্রান্ত হচ্ছেন, যাদের মধ্যে মাত্র ১০ থেকে ১৫ শতাংশ প্রাথমিক পর্যায়ে আক্রান্ত হওয়ার কথা জানতে পারেন। এছাড়া, বিশ্বের অন্যান্য দেশে স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার গড় বয়স ৪৫ হলেও বাংলাদেশে তা ৩৫ বছর।
প্রায় ১০ বছর আগে স্তন ক্যান্সারের সঙ্গে যুদ্ধ শুরু করেন ৫৪ বছর বয়সী নাসরিন পান্না। নিজের মনোবল থাকলেও চারপাশের মানুষের অযৌক্তিক কৌতুহলে যেন মৃত্যুর দুয়ারেই পায়চারি করতেন প্রতিটি দিন।
চিকিৎসার পুরো সময়টায় নানা প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে উঠতে পরিবারের সহযোগিতা সবচেয়ে জরুরি বলে মনে করেন পান্না। তিনি বলেন, আমার অসুস্থতার সময় আমার স্বামী একদম পিলারের মতো ছিল আমার সাথে। এটি অনেক সাহস যুগিয়েছে। পরিবারের অন্য সদস্যদেরও সাপোর্ট পেয়েছি।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানাচ্ছে, বিশ্বে প্রতি ৮ জনে একজন নারী স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত। আর বাংলাদেশের নারীরা যেসব ক্যান্সারে আক্রান্ত হন তারমধ্যে স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার সংখ্যা শীর্ষে।
ক্যান্সার নিয়ে আন্তর্জাতিক গবেষণা সংস্থা গ্লোবোক্যানের তথ্য মতে, প্রতি বছর বাংলাদেশে প্রায় ১৩ হাজার মানুষ স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হন, যার ৯০ শতাংশই নারী। আর এর মধ্যে মাত্র ১০ থেকে ১৫ শতাংশ রোগী স্ক্রিনিংয়ের আওতায় আসেন।
ক্যান্সারে আক্রান্ত থাকার সময়ের অভিজ্ঞতা জানাচ্ছেন নাসরিন পান্না। ছবি: ভিডিও থেকে নেয়া
স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার প্রাথমিক পর্যায়ে চিকিৎসা না হওয়ার পেছনে দুটি কারণকে চিহ্নিত করেছেন বিশেষজ্ঞরা।
বিএসএমএমইউ স্তন ক্যান্সার স্ক্রিনিং কর্মসূচির প্রকল্প পরিচালক অধ্যাপক ডা. আশরাফুন্নেসা তার নিজের অভিজ্ঞতা থেকে বলেন, ‘নারীরা সময়মতো চিকিৎসা না করানোয় এটি বাড়ছে। দেখা যায়, ছয় মাস ধরে তিনি বুঝতে পারছেন চাকা হয়েছে। কিন্তু চিকিৎসকের কাছে আসেননি। এ বিষয়ে জানতে চাইলে উত্তর দেয়, বাড়ির কাজে সময় পাননি, বুঝতে পারেননি।’
একইরকম অভিজ্ঞতার কথা জানালেন জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইনস্টিটিউটের সার্জিক্যাল অনকোলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. হাসান শাহরিয়ার কল্লোল। তিনি বলেন, ‘রোগীরা অনেক ঘুরাঘুরির পর জায়গামতো আসেন। আবার অনেকেই শুরুতে গুরুত্ব দেন না। যখন আসেন তখন সেটা ক্যান্সারে চলে যায়।’ স্তন ক্যান্সারের সঠিক এবং ভালো চিকিৎসা কোথায় পাওয়া যাবে এই তথ্যের অপ্রতুলতাও আছে বলে মনে করেন এই চিকিৎসক।
এছাড়া, স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার বয়স নিয়েও নারীদের মধ্যে রয়েছে বিভ্রান্তি। যদিও বিশ্বের অন্যান্য দেশের নারীদের তুলনায় বাংলাদেশের নারীরা স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হন ১০ বছর আগে।
ডা. হাসান শাহরিয়ার কল্লোল বলেন, সারা বিশ্বে ৪৫-৫৫ বছর হচ্ছে স্তন ক্যান্সারের পিক টাইম। আর বাংলাদেশের ক্ষেত্রে ৩৫ থেকে ৪৫ বছরেই ক্যান্সার হচ্ছে। অর্থাৎ, ১০ বছর আগেই তারা ক্যান্সারে আক্রান্ত হচ্ছে। আমরা ২০-২২ বছরের মেয়েদেরও স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হতে দেখেছি।
দেশে প্রতিবছর প্রায় ৭ হাজার স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগী মারা গেলেও এ নিয়ে এখনও সচেতন নন বেশিরভাগ নারী। তাই সচেতনতা বাড়াতে সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের এগিয়ে আসার ওপর জোর দিচ্ছেন ক্যান্সার যোদ্ধাসহ বিশেষজ্ঞরা।
বাংলাদেশ সময়: ১১:৪৮:২৪ ৪৩ বার পঠিত