দেশে নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিতের জন্য আবার একটি আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। আন্দোলন ছাড়া মানুষকে সচেতন করা সম্ভব নয়।
আজ (বুধবার) রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া মিলনায়তনে বিশ্ব খাদ্য দিবস-২০২৪ উপলক্ষে বাংলাদেশ সেফ ফুড অ্যালায়েন্স আয়োজিত ‘নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিতকরণে আমাদের করণীয়’ শীর্ষক একটি গোল টেবিল বৈঠকে এসব কথা বলেন বক্তারা।
বক্তারা বলেন, দিনদিন আমাদের খাদ্য তার ঐতিহ্যগত নিরাপদবলয় থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। পৃথিবীর অন্যতম বৃহৎ মিঠাপানির প্রাকৃতিক ভাণ্ডার, দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত, নাতিশীতোষ্ণ জলবায়ুর দেশে নিরাপদ খাদ্য এখন অনেকটাই হুমকির মুখে। কৃষি জমিতে মাত্রাতিরিক্ত সার এবং ক্ষতিকর রাসায়নিকের ব্যবহার, কলকারখানার বর্জ্য, রঙ ও কেমিক্যাল, অপ্রয়োজনীয় প্রিজারভেটিভ, কার্বাইড, ফরমালিন এসবের যথেচ্ছ ব্যবহার এখন প্রকাশ্য। ফলে মাটি, পানি, বাতাসসহ গোটা পরিবেশ প্রকৃতিই মারাত্মকভাবে দূষিত হচ্ছে। রাজধানী ঢাকাসহ শহরাঞ্চলে খোলা ও নোংরা জায়গায় যত্রতত্র বিভিন্ন খাবারের দোকান গড়ে উঠেছে। ফলে এ ধরনের খাবার খেয়ে মানুষ নানারকম রোগব্যাধিতে আক্রান্ত হচ্ছে। পঙ্গু, বিকলাঙ্গ এবং মানসিক ভারসাম্যহীন অসুস্থ শিশুর সংখ্যা প্রতিনিয়তই বেড়ে চলেছে। এসব বিষয়ে আমাদের জনসাধারণকে সচেতন করে তুলতে হবে। সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মনিটরিং তৎপরতা বাড়াতে হবে। আমাদের খাদ্য নিরাপত্তা অনেকটাই নিশ্চিত হয়েছে। এখন সময় এসেছে সবার জন্য নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করতে সকলকেই তৎপর হতে হবে।
বিসেফ ফাউন্ডেশনের অ্যাডভাইজার ড. মাহমুদুল ইসলাম বলেন, নিরাপদ খাদ্যের জন্য আবার একটি আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। প্রতিটি জেলায় জেলায় গিয়ে মানুষকে জানাতে হবে।
রিসার্চ ইনিশিয়েটিভ বাংলাদেশের পরিচালক সুরাইয়া বেগম বলেন, আমি যেটা খেতে চাই সেটা খেতে পারছি না এই জায়গাটাতে আমাদের যেতে হবে। আমাদের আগে মনের জায়গাটা ঠিক করতে হবে তারপর আন্দোলন করতে হবে।
শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক ড. সাইফুল ইসলাম ভূইয়া বলেন, কিছু কোম্পানির কাছে মানুষ জিম্মি হয়ে গেছে। যে খাবারটা ভালো সেটা জানার পরেও পাওয়া যাচ্ছে না। দেশে অর্গানিক খাবার থাকলেও সেটা পাওয়া যায় না। প্রতিটি খাবার উৎপাদন থেকে খাওয়ার আগ পর্যন্ত ভেজালে পরিপূর্ণ।
বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইন্সটিটিউটের ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. নাজিম উদ্দিন বলেন, দেশে কৃষকদের গুরুত্ব দেওয়া হয় না। তারা সবচেয়ে বেশি গুরুত্বের দাবিদার। সচিব, ম্যাজিস্ট্রেটসহ অন্যারা যে গুরুত্ব পান সেটা তারা পান না। নিরাপদ খাদ্যের জন্য স্থানীয় সরকার বিভাগকে সংযুক্ত করতে হবে। এতে করে দেশের সব জায়গায় সচেতনতা পৌঁছে যাবে। রাজনৈতিক নেতারা তাদের বক্তব্যে এসব বিষয় নিয়ে কথা বললে মানুষ একটু শুনবে।
নিরাপদ খাদ্যে কর্তৃপক্ষের সদস্য ড. মোহাম্মদ মোস্তফা বলেন, তাদের অনেক কিছুই করার থাকে না। আমাদের এখান থেকে কেউ কখনো লাইসেন্স নেয় না। আমরা জানিই না বাংলাদেশে কতজন খাদ্য নিয়ে ব্যবসা করে।
তিনি বলেন, একটা হোটেলের পাশে ড্রেন থাকে, শৌচাগার পরিষ্কার না। কিন্তু এসব বিষয় কেমন হতে হবে সেই বিষয়ে আমাদের থেকে কোনো অনুমতি নেওয়া হয় না। পাবলিক যদি খাদ্য নিয়ে একটা জায়গা থেকে লাইসেন্স নিত তাহলে সুবিধা হতো। ২০১৩ সালে আইন হয়েছে আর ২০২০ সাল থেকে মাঠ পর্যায়ে কাজ শুরু হয়েছে।
বাংলাদেশ সেফ ফুড এলায়েন্সের সভাপতি কাজী জিয়া শামসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত গোল টেবিল বৈঠক সঞ্চালনা করেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক কৃষিবিদ আমিনুল ইসলাম বাবু। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন। এ ছাড়া আরও উপস্থিত ছিলেন কৃষি ও পরিবেশ সংগঠক ব্রাত্য আমিন, নিরাপদ শপের শাহজাহান পাটোয়ারী, ক্ষ্যাপাজয় বাজারের সোহেল আহমেদ প্রমুখ।
বাংলাদেশ সময়: ১৬:০০:০১ ৪৮ বার পঠিত