পররাষ্ট্র সচিব মো. জসিম উদ্দিন পাচার হওয়া সম্পদ উদ্ধার অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অগ্রাধিকার উল্লেখ করে কর ফাঁকি এবং অবৈধ অর্থ পাচার মোকাবেলায় জাতিসংঘের প্রতি সহযোগিতার আহ্বান জানিয়েছেন।
সোমবার নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দফতরে সংস্থার আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল ফর ইকোনমিক অ্যান্ড সোশ্যাল অ্যাফেয়ার্স লি জুনহুয়ার সঙ্গে বৈঠকে তিনি এই আহ্বান জানান।
আজ ঢাকায় প্রাপ্ত পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে একথা বলা হয়েছে।
আলোচনাকালে পররাষ্ট্র সচিব আন্ডার সেক্রেটারি-জেনারেলকে ‘জুলাই-আগস্ট বিপ্লব’-এর আকাক্সক্ষা প্রতিফলিত করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কর্তৃক গৃহীত বর্তমানে বাংলাদেশে সংস্কার প্রক্রিয়া সম্পর্কে অবহিত করেন।
তিনি সরকারের সংস্কার এজেন্ডা, বিশেষ করে জাতিসংঘ ও বাংলাদেশের মধ্যে পাঁচ দশকের অংশীদারিত্ব গড়ে তোলার পাশাপাশি জবাবদিহিতা ও স্বচ্ছতা বৃদ্ধিতে জাতিসংঘের প্রযুক্তিগত ও নীতিগত সহায়তার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
এলডিসি অবস্থা থেকে বাংলাদেশের আসন্ন উত্তরণের প্রসঙ্গে তিনি উত্তরণ এবং উত্তরণোত্তর উভয় পর্যায়ে অব্যাহত আন্তর্জাতিক সহায়তার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন।
কভিড-১৯ মহামারি এবং বর্তমানে চলমান বৈশ্বিক সংঘাতের ফলে বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দার কারণে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনে চ্যালেঞ্জের কথা স্বীকার করে, তিনি আবাসিক সমন্বয়কারীর কার্যালয় থেকে উন্নয়ন সহযোগিতাসহ জাতিসংঘের কাছ থেকে আরো শক্তিশালী পদ্ধতিগত সহায়তা কামনা করেন।
তিনি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন যে অর্থনৈতিক ও সামাজিক বিষয়ক বিভাগ (ডিইএসএ) সাম্প্রতিক বাংলাদেশের নেতত্বে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে প্রস্তাবের বাস্তবায়নকারী সংস্থা হিসেবে কাজ করবে। প্রস্তাবে ৬ মে কে পল্লী উন্নয়ন দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে।
আন্ডার সেক্রেটারি-জেনারেল জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের দ্বিতীয় কমিটিতে বাংলাদেশের বর্তমান সভাপতিত্বের প্রশংসা করেন এবং সচিবালয়ের পক্ষ থেকে সর্বাত্মক সহায়তার আশ্বাস দেন।
তিনি পররাষ্ট্র সচিবকে বলেন, অর্থনৈতিক ও সামাজিক বিষয়ক (ডিইএসএ) বিভাগ বাংলাদেশের সংস্কার প্রক্রিয়ায় বিশেষ করে সরকারি প্রতিষ্ঠানের সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং ডিজিটাল গভর্নেন্সের জন্য তাদের সরঞ্জামের মাধ্যমে সহায়তা করতে পেরে খুশি হবে।
তিনি বলেন, এলডিসি থেকে উত্তরণকে প্রকৃতপক্ষে একটি নতুন সূচনা পয়েন্ট হিসেবে বিবেচনা করা উচিত এবং উত্তরণ হওয়া দেশগুলোকে অগ্রাধিকারমূলক ব্যবস্থা থেকে উপকৃত হওয়া অব্যাহত রাখা উচিত।
এসডিজি বাস্তবায়নের বিষয়ে তিনি ২০২৫ সালে স্পেনে অনুষ্ঠেয় আসন্ন চতুর্থ আন্তর্জাতিক সম্মেলনের গুরুত্ব তুলে ধরেন; যার মধ্যে উদ্ভাবনী অর্থায়ন, ঋণের স্থায়িত্ব নিশ্চিত করা এবং আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সংস্কারসহ বৈশ্বিক উন্নয়ন সহায়তাকে পুনরুজ্জীবিত করার প্রচেষ্টা করা হবে।
এর আগে একই দিনে পররাষ্ট্র সচিব জাতিসংঘ মহাসচিবের জলবায়ু কার্যক্রম ও জাস্ট ট্রানজিশন বিষয়ক বিশেষ উপদেষ্টা সেলউইন চার্লস হার্টের সঙ্গেও সাক্ষাৎ করেন।
বৈঠকে পররাষ্ট্র সচিব প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী পর্যাপ্ত জলবায়ু অর্থায়ন নিশ্চিত করাসহ প্যারিস চুক্তির পূর্ণ বাস্তবায়নে বাংলাদেশের আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করেন।
বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তন জনিত ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর মধ্যে একটি উল্লেখ করে তিনি আরো বলেন, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি এবং অন্যান্য জলবায়ু-পরিবর্তন সংক্রান্ত বিপর্যয়ের কারণে অভ্যন্তরীণ বাস্তুচ্যুতি অনেক দেশের জন্য একটি বড় অস্তিত্বের ঝুঁকি।
তিনি আরো বলেন, প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ডক্টর মুহাম্মদ ইউনূস তার ‘তিন শূন্য’ তত্ত্বের অংশ হিসেবে শূণ্য কার্বন নির্গমনের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন।
বাংলাদেশের ‘জাতীয় অভিযোজন পরিকল্পনা’র জন্য ২০৫০ সাল পর্যন্ত ২৩০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের প্রয়োজন হবে জানিয়ে তিনি জোর দিয়ে বলেন, অভিযোজনের জন্য জলবায়ু অর্থায়নে স্বল্পতা রয়ে গেছে এবং অভিযোজন ব্যবস্থারও একটি সীমা রয়েছে।
তিনি জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবেলায় বাংলাদেশের প্রতি জাতিসংঘের অব্যাহত সহায়তা কামনা করেন।
হার্ট বৈশ্বিক জলবায়ু আলোচনায় বাংলাদেশের দীর্ঘকালীন নেতৃত্বের প্রশংসা করেন।
তিনি আসন্ন কপ-২৯ সম্মেলনে বাংলাদেশ থেকে সর্বোচ্চ পর্যায়ের অংশ গ্রহণের প্রত্যাশা করেন।
তিনি অভিযোজন এবং স্থিতিস্থাপকতা তৈরির প্রয়োজন মোকাবেলা করার জন্য দেশের প্ল্যাটফর্ম তৈরির ওপর ও জোর দেন।
পররাষ্ট্র সচিব জসিম উদ্দিন জাতিসংঘের স্বল্পোন্নত দেশ, এলএলডিসির উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি এবং এসআইডিএস-এর রাবাব ফাতিমার সঙ্গেও সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন।
আলোচনায় সংস্কার এজেন্ডা, এলডিসি উন্নরণ এবং উত্তরণ ও উত্তরোত্তর পর্যায়গুলোতে জাতিসংঘের সহায়তা এবং নীতি পর্যায়ে জাতিসংঘে বাংলাদেশি নাগরিকদের প্রতিনিধিত্ব বৃদ্ধির ওপর আলোকপাত করা হয়।
বাংলাদেশ সময়: ১৬:১০:৫৬ ৪৭ বার পঠিত