বঙ্গোপসাগরে ঘূর্ণিঝড় ‘ডানা’ এখনও সৃষ্টি হয়নি। তবে সম্ভাব্য দুর্যোগের আশঙ্কায় আগাম প্রস্তুতি নিয়ে রাখছে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ ও ওড়িশা। আগাম সতর্কতা হিসেবে বুধবার (২৩ অক্টোবর) থেকে শুক্রবার (২৫ অক্টোবর) পর্যন্ত ওড়িশার ১৪ জেলায় সব স্কুল বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছে প্রশাসন। এছাড়া পশ্চিমবঙ্গের উপকূলবর্তী জেলাগুলোতেও মাইকিং করে সতর্ক করা হচ্ছে।
হিন্দুস্তান টাইমস এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, ঘূর্ণিঝড় ‘ডানা’ তৈরি হলে তা সাগরদ্বীপ ও পুরীর মধ্যবর্তী কোথাও আছড়ে পড়তে পারে। আর সেই আঘাতের আগে সতর্ক দুই রাজ্যের প্রশাসনই। সৈকত শহর পুরী মঙ্গলবারের মধ্যেই দৃশ্যত পর্যটকশূন্য করে দেয়া হচ্ছে।
ঘুরতে যাওয়া পর্যটকদের বুধবারের আগেই পুরী ছাড়ার জন্য বলে দিয়েছে ওড়িশা সরকার। তাদের নিজ নিজ রাজ্যে ফিরে যাওয়ার জন্য বলা হয়েছে। সেইসঙ্গে বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার কোনো পর্যটককে পুরী ভ্রমণে না আসার পরামর্শও দিয়েছে রাজ্য সরকার।
এক প্রতিবেদনে আনন্দবাজার বলছে, পশ্চিমবঙ্গের দুই উপকূলবর্তী জেলা— পূর্ব মেদিনীপুর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনায় আগাম সতর্কতা নিয়েছে প্রশাসন। দুর্যোগের আশঙ্কায় সোমবার থেকেই প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাইকিং করা শুরু হয়েছে দক্ষিণ ২৪ পরগনার নামখানা, সাগরদ্বীপ, পাথরপ্রতিমা, বকখালিসহ বিভিন্ন উপকূলবর্তী অঞ্চলে।
তৈরি রাখা হচ্ছে ‘ফ্লাড শেল্টার’ বা বহুমুখী ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্রগুলোকেও। কাকদ্বীপ অঞ্চলে এরইমধ্যে একটি কন্ট্রোল রুমও চালু করেছে মহকুমা প্রশাসন। পূর্ব মেদিনীপুরেও দিঘা, মন্দারমণি, তাজপুরসহ বিভিন্ন পর্যটনকেন্দ্রের দিকে সজাগ নজর রয়েছে রাজ্য প্রশাসনের। আগামী কয়েক দিন দিঘা ও পার্শ্ববর্তী সমুদ্রসৈকতে পর্যটকরা যাতে না যান, সে ব্যাপারে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে স্থানীয় প্রশাসনকে।
আবহাওয়া অফিসের পূর্বাভাস, নিম্নচাপ অঞ্চলটি ক্রমে শক্তি বৃদ্ধি করে প্রথমে নিম্নচাপ, তারপর গভীর নিম্নচাপ এবং বুধবার সকালের মধ্যেই ঘূর্ণিঝড়ের রূপ নিতে পারে। এরপর সেটি অগ্রসর হবে উত্তর এবং উত্তর-পশ্চিম অভিমুখে। জলভাগের ওপর দিয়ে অগ্রসর হওয়ার কারণে এটির শক্তি আরও বৃদ্ধি পাবে।
বৃহস্পতিবার সকালে যখন ওড়িশা ও পশ্চিমবঙ্গ উপকূলের কাছাকাছি এসে পৌঁছাবে, তখন এটি শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হবে। পুরী ও সাগরদ্বীপের মাঝখান দিয়ে স্থলভাগে প্রবেশ করবে এটি। সেই সময় উপকূলে ঝড়ের গতিবেগ থাকতে পারে ঘণ্টায় ১১০ কিলোমিটার।
এদিকে সমুদ্র এখন থেকেই উত্তাল হতে শুরু করেছে। আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, সোমবার থেকেই পূর্ব ও মধ্য বঙ্গোপসাগর উত্তাল। বৃহস্পতিবার সমুদ্র আরও উত্তাল হবে। পশ্চিমবঙ্গ ও ওড়িশা উপকূলের কাছাকাছিও বুধবার সন্ধ্যা থেকে শুক্রবার সকাল পর্যন্ত সমুদ্র উত্তাল থাকবে। ওই সময়ে পশ্চিমবঙ্গ ও ওড়িশার উপকূলে মৎস্যজীবীদের সমুদ্রে যেতে নিষেধ করা হয়েছে। দুর্যোগের প্রভাব পড়তে পারে পশ্চিমবঙ্গের দুই ২৪ পরগনা, দুই মেদিনীপুর, হাওড়া, হুগলি, কলকাতা ও বাঁকুড়া— এই আট জেলায়।
ওড়িশাতেও গঞ্জাম, পুরী, জগৎসিংহপুর, কেন্দাপাড়া, ভদ্রক, বালেশ্বর, ময়ূরভঞ্জ, কেওনঝড়, ঢেঙ্কানল, জজপুর, আঙ্গুল, খুরদা, নয়াগড় এবং কটকে দুর্যোগের শঙ্কা রয়েছে। আগাম সতর্কতা হিসাবে বুধবার থেকে শুক্রবার পর্যন্ত ওড়িশার এই ১৪ জেলায় সব স্কুল বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছে প্রশাসন।
দুর্যোগপূর্ণ পরিস্থিতির জন্য তৈরি থাকছে জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী (এনডিআরএফ)। ইতোমধ্যে পশ্চিমবঙ্গের জন্য এনডিআরএফের ১৪টি দল এবং ওড়িশার জন্য ১১টি দলকে প্রস্তুত রাখা হয়েছে। প্রয়োজন অনুযায়ী দুর্যোগ কবলিত এলাকায় তাদের মোতায়েন করা হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৩:২৬:২৭ ২৯ বার পঠিত