জলবায়ু পরিবর্তনের প্রথম সারির ঝুঁকিতে থাকা প্রান্তিক কৃষকদের ক্ষমতায়নের জন্য দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে পরষ্পরের মধ্যে বাস্তব ভিত্তিক কৃষি শিক্ষা ও অনুশীলনের প্রয়োজনীয়তার উপর গুরুত্বারোপ করেছেন কৃষি বিশেষজ্ঞরা।
বিশেষজ্ঞরা উচ্চ পর্যায়ের নীতি-নির্ধারণী এক বৈঠকে বলেছেন- দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর কৃষকদের মধ্যে প্রমাণ্য কৃষি শিক্ষা ও অনুশীলনের আদান-প্রদান করা উচিত, কারণ তারা জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে সবচেয়ে ঝুঁকিপূণ পরিস্থিতিতে থাকেন।
আজ এখানে প্রাপ্ত এক বার্তায় জানা যায়, মালদ্বীপে ১৪ ও ১৫ নভেম্বর দু’দিনব্যাপী ‘সাউথ এশিয়া’স এগ্রিকালচারাল ফিউচার: স্কেলিং আপ ক্লাইমেট-স্মার্ট এগ্রিকালচার প্র্যাকটিসেস ফর সাসটেইনেবল গ্রোথ’ শীর্ষক উচ্চ পর্যায়ের নীতিনির্ধারণী ফোরামের বৈঠকে তারা এসব কথা বলেন।
মালদ্বীপের কৃষি ও প্রাণী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অংশীদারিত্বে- সার্ক এগ্রিকালচার সেন্টার (এসএসি), ইন্টারন্যাশনাল ফুড পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট (আইএফপিআরআই), ইন্টারন্যাশনাল ফান্ড ফর এগ্রিকালচারাল ডেভেলপমেন্ট (আইএফডি) এবং সার্ক ডেভেলপমেন্ট ফান্ডের (এসডিএফ) যৌথ উদ্যোগে কনসোর্টিয়াম ফর স্কেলিং-আপ ক্লাইমেট-স্মার্ট এগ্রিকালচার ইন সাউথ এশিয়া (সি-এসইউসিএসইএস) এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত, মালদ্বীপ, নেপাল, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কাসহ সাকভুর্ক্ত সদস্য রাষ্ট্রের গবেষক, প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ, কৃষি ও সম্প্রসারণ কর্মকর্তা, নীতিনির্ধারক এবং কৃষকরা অংশগ্রহণ করেন।
ফোরামের মূল উদ্দেশ্য ছিল- সমগ্র অঞ্চল জুড়ে টেকসই কৃষি প্রবৃদ্ধি এবং খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য দি স্কেলিং আপ ক্লাইমেট-স্মার্ট এগ্রিকালচার (সিএসএ) প্রযুক্তির সমর্থন করা।
সিএসএ অনুশীলনগুলোকে উন্নীত করার প্রয়াসে, সি-এসইউসিএসইএস প্রকল্পের কার্যক্রমের অংশ হিসেবে ১০টি মূল সিএসএ প্রযুক্তির উপর ব্যাপক প্রশিক্ষণ মডিউল, ভিডিও মডিউল এবং উপকরণ প্রবর্তন করেছে। এই সংস্থানগুলো জাতীয় ফোকাল পয়েন্ট ও অঞ্চল জুড়ে আঞ্চলিক বিশেষজ্ঞদের ইনপুট নিয়ে তৈরি করা হয়েছিল। এই বছরের শুরুতে স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে এসএসি, আইএফপিআরআই এবং বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল (বিএআরসি) আয়োজিত এক কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়েছিল।
মালদ্বীপের কৃষি ও প্রাণী কল্যাণ মন্ত্রী ড. আইশাথ রামিলা, কৃষকের গাইড এবং ফ্যাসিলিটেটর ম্যানুয়ালসহ প্রশিক্ষণ মডিউলগুলো আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ড. রামিলা।
ড. রামিলা তার ভাষণে, কৃষিতে জলবায়ুর প্রভাব মোকাবেলায় আন্তঃদেশীয় সহযোগিতার গুরুত্ব তুলে ধরেন।
তিনি বলেছেন- এই উচ্চ পর্যায়ের নীতিনির্ধারণী ফোরাম দক্ষিণ এশিয়া জুড়ে জলবায়ু পরিবর্তনে স্মার্ট কৃষির ভবিষ্যতের জন্য আমাদের কৌশল এবং নীতিগুলোকে সমন্বিত করতে এক অনন্য প্ল্যাটফর্ম। একসঙ্গে কাজ করার মাধ্যমে, আমরা একটি স্থিতিস্থাপক কৃষিখাত গড়ে তোলার পথে এগুচ্ছি, যাতে জলবায়ু পরিবর্তনে সঙ্গে খাপ খেয়ে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত এবং আমাদের জনগণের জন্য অর্থনৈতিক সুযোগ তৈরি করা যায়।
কৃষি শিক্ষাগুলো পরষ্পরের মধ্যে পরীক্ষিত অনুশীলনের প্রতি তিনি গুরুত্বারোপ করেন। যা প্রান্তিক কৃষকদের ক্ষমতায়নের জন্য, যারা জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবের জন্য সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ।
ড. রমিলা বলেছেন- উন্নত ফসলের জাত, দক্ষ পানি ব্যবস্থাপনা অনুশীলন এবং টেকসই মাটি ব্যবস্থাপনায় বিনিয়োগের মাধ্যমে, আমরা আরও বেশি উৎপাদনশীল এবং জলবায়ু-সহনশীল কৃষি ব্যবস্থা গড়ে তুলতে পারি।
মালদ্বীপের কৃষি ও প্রাণী কল্যাণ প্রতিমন্ত্রী আহমেদ হাসান দিদি, আঞ্চলিক সহযোগিতা বৃদ্ধির গুরুত্বের ওপর জোর দেন।
তিনি অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। তিনি বলেন- নীতিগত সমন্বয় এবং সংলাপকে উৎসাহিত করার মাধ্যমে, আমরা উন্নত কৃষিতে ইকো সিস্টেম গড়ে তুলতে পারি, যা টেকসই খাদ্য নিরাপত্তা সমর্থন করে।
আইএফপিআরআই’র দক্ষিণ এশিয়ার পরিচালক ড. শাহিদুর রশিদ বলেছেন- দক্ষিণ এশিয়া সবচেয়ে জলবায়ু-সংবেদনশীল অঞ্চলগুলোর মধ্যে একটি এবং স্থিতিস্থাপকতা গুরুত্বপূর্ণ হলেও এখনো সীমিত রয়েছে।
তিনি বলেন- সমাধান খুঁজতে আমাদের একসঙ্গে কাজ করতে হবে। আমাদের গবেষণার ফলাফলের জন্য অবশ্যই কঠোর হতে হবে, যাতে প্রাসঙ্গিক ও সময়োপযোগী মানসম্মত হয়।
সার্ক কৃষি কেন্দ্রের পরিচালক ড. হারুনুর রশীদ কৃষি প্রোগ্রামিংয়ের ক্ষেত্রে পরিবর্তনের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত অন্যান্য প্রতিনিধিদের মধ্যে ছিলেন- মালদ্বীপের কৃষি ও প্রাণী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ে কৃষি বিভাগের মহাপরিচালক হুসেইন ফয়সাল, ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ এগ্রিকালচারাল রিসাচের্র সেন্ট্রাল রিসার্চ ইনস্টিটিউট ফর ড্রাইল্যান্ড এগ্রিকালচার (আইসিএআর-সিআরআইডিএ) এবং সি-এসইউসিএসইএস প্রজেক্ট স্টিয়ারিং কমিটির চেয়ারপারসন ডক্টর ভি কে সিং এবং সার্ক কৃষি কেন্দ্রের গভর্নিং বডির চেয়ারপারসন আলী আমির।
বাংলাদেশ সময়: ২২:৩৮:৪৬ ৮ বার পঠিত