গণমাধ্যমের স্বাধীনতা রক্ষা ও নিরাপত্তা নিশ্চিতে পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর শীর্ষ নেতারা।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর একটি হোটেলে ‘আক্রমণের মুখে স্বাধীন সাংবাদিকতা ও গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠান: রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে মতবিনিময়’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতারা অংশ নিয়ে গণমাধ্যমের স্বাধীনতার পক্ষে নিজ নিজ অবস্থান তুলে ধরেন। এ সভার আয়োজন করে সংবাদপত্রের মালিকদের সংগঠন নিউজপেপার ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (নোয়াব)।
৫ আগস্টের পর গণমাধ্যমের ওপর আক্রমণ এবং গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিয়ে কথা বলতে হবে, এমনটা কখনো ভাবিনি বলে সভায় মন্তব্য করেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি বলেন, ‘দুর্ভাগ্য আমাদের, আজ ৫৩ বছর পরও একটা ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পরে এই গণমাধ্যমের ওপর আক্রমণের বিষয়ে আমাদের কথা বলতে হচ্ছে। আমরা বলেছি, এর নিন্দা ও ধিক্কার জানাই। আমরা সব সময় মনে করি, আমাদের লড়াইটাই তো বাকস্বাধীনতা ও গণতন্ত্রের জন্য। এই দীর্ঘ লড়াই করে আসছি, এই লড়াইয়ের মূল বিষয় হচ্ছে, আমি আমার কথা বলতে চাই।
আমি আমার অধিকার প্রয়োগ করতে চাই, ভোটের অধিকার প্রয়োগ করতে চাই। এ বিষয়গুলো অত্যন্ত জরুরি।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এখন কিছু মানুষ জাতিকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে। কিছু কথা বলা হচ্ছে, সেগুলো দেশকে নৈরাজ্যের দিকে নিয়ে যাচ্ছে।
সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে এটি বন্ধ করা দরকার। না হলে যে লক্ষ্য নিয়ে ছাত্র-জনতা প্রাণ দিয়েছেন তার সবটাই ব্যর্থ হয়ে যাবে।’
গণমাধ্যমের স্বাধীনতার পক্ষে নিজেদের শক্ত অবস্থানের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘আমরা যেকোনো মূল্যে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা, মানুষের স্বাধীনতা, ভোটের স্বাধীনতা, জনগণের স্বাধীনতা রক্ষা করার জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালাব। আমরা গণমাধ্যম ও জনগণের সঙ্গে আছি।’
সভায় জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আজাদ বলেন, ‘১৫ বছর গণতন্ত্র ও সংবাদপত্রের স্বাধীনতার জন্য সংগ্রাম হয়েছে।
গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থার অপরিহার্য শর্ত হচ্ছে স্বাধীন সাংবাদিকতা। সংবাদপত্র স্বাধীনভাবে কাজ করতে না পারলে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র বিকশিত হতে পারে না। রাষ্ট্রের অন্যতম স্তম্ভ হলো গণমাধ্যম। এটা যদি শক্তিশালী না হয়, তাহলে গণতন্ত্র কোনো দিন শক্তিশালী হবে না।’
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্যে নোয়াব সভাপতি এ কে আজাদ বলেন, ‘ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানের পরবর্তী পরিস্থিতিতে যখন সংবাদমাধ্যমগুলোর চাপমুক্ত পরিবেশে কাজ করার কথা, তখন কোনো কোনো সংবাদপত্র ও সংবাদমাধ্যমের ওপর নানাভাবে চাপ প্রয়োগের চেষ্টা ও হুমকি অব্যাহত। এমনকি বন্ধ করে দেওয়ার হুমকিও দেওয়া হচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘সম্প্রতি একটি মহল ইংরেজি দৈনিক ডেইলি স্টার ও প্রথম আলোর বিরুদ্ধে যে ধরনের কর্মসূচি নিয়েছে ও প্রচার-প্রচারণা অব্যাহত রেখেছে, তা সংবাদপত্রের স্বাধীনতার ওপর চরম হুমকি ছাড়া আর কিছু নয়। বিমানবন্দরে নিউ এজ সম্পাদক নুরুল কবীর বলেন, ‘পুরনো স্বৈরাচারী আমলের মতোই দুই দফা হয়রানির শিকার হতে হয়েছে। ঢালাওভাবে বাতিল করা হয়েছে সম্পাদকসহ সাংবাদিকদের অ্যাক্রেডিটেশন কার্ড।’
নোয়াব সভাপতি বলেন, কর্মসূচির নামে পত্রিকা অফিস দুটি ঘেরাও, বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি, দেশের বিভিন্ন স্থানে স্থানীয় অফিসে হামলা এবং পত্রিকা বিতরণে বাধা সৃষ্টির যে ঘটনা দেশের বিভিন্ন স্থানে ঘটছে, তা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। এসবের মাধ্যমে যে ভয়ভীতির পরিবেশ তৈরি করা হচ্ছে, তা সংবাদপত্রের স্বাধীনতার জন্য চরম হুমকি।
বাংলাদেশ সময়: ২৩:০৬:৩৩ ১০ বার পঠিত