যারা দেশের টাকা লুটপাট এবং মহাচুরির মাধ্যমে পুরো দেশকে ভয়ানক লণ্ডভণ্ড অবস্থায় রেখে গেছেন সরকার তাদের বিচারের মুখোমুখি করবে বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস শফিকুল আলম।
তিনি বলেছেন, ‘গত ১৫ বছরে যে নৈরাজ্য হয়েছে, তার বিচার এবং জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা সরকারের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার। গণহত্যা এবং গুম-খুনের বিচারের পাশাপাশি দেশে যে ধরনের মহাচুরি হয়েছে তার বিচার অব্যশই হবে। তবে এর জন্য তথ্য-প্রমাণ সংগ্রহ করতে হবে। এলক্ষ্যে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) পুনর্গঠন করা হচ্ছে। আশা করি তারা দ্রুত এসব চুরির বিচার শুরু করবে।
রোববার ঢাকায় ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে শফিকুল আলম এসব কথা বলেন।
দেশের অর্থনীতির সার্বিক পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটি তাদের প্রতিবেদন আজ রোববার উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ড. ইউনূসের কাছে হস্তান্তর করেছে।
শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির প্রধান হিসেবে কাজ করছেন বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। তিন মাসের অনুসন্ধান শেষে তাদের প্রতিবেদন আজ প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে হস্তান্তর করা হলো।
শফিকুল আলম এই প্রতিবেদনের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বলেন, শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটিকে রিপোর্ট তৈরির জন্য তিন মাসের সময় বেঁধে দেয়া হয়েছিল। সে অনুযায়ী তারা আজ রিপোর্ট জমা দিয়েছেন। লুটপাটের চিত্র খোঁজার পাশাপাশি আগে উন্নয়নের যে গল্প বলা হয়েছিল, কমিটির সদস্যরা তার পোস্টমর্টেমও করেছেন বলে তিনি জানান।
তিনি বলেন, পুরো বাংলাদেশের মানুষের চোখের সামনে দিয়ে লুটপাট চলেছে। অনেকে এটার বৈধতা দিয়েছেন। এটার ফলাফল আপনারা দেখেছেন কত বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার পাচার হয়েছে। প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনূসকে উদ্বৃত করে প্রেস সচিব বলেন, লুটপাটের গল্প শুনে আমরা আতংকিত। রক্ত হিম করার মত বিষয়। বাংলাদেশের করদাতার অর্থ, গরীব মানুষের টাকা কীভাবে লুট হয়েছে। রাজনীতিবিদ, আমলা এবং কিছু ব্যবসায়ীর যোগসাজসে এই মহাচুরি সংগঠিত হয়েছে বলে শফিকুল আলম দাবি করেন।
শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির রিপোর্ট হস্তান্তর অনুষ্ঠানে ড. ইউনূস আরও বলেন, লুটপাটের যে চিত্র, তা পাঠ্যবইয়ে আসা উচিত। স্কুল, কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাথীদের এই গল্প জানা উচিত।
প্রধান উপদেষ্টা শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির প্রতিবেদনকে একটা ঐতিহাসিক ডকুমেন্ট বলে উল্লেখ করেছেন।
পাচার হওয়া টাকা ফেরত আনার ব্যাপারে সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ উল্লেখ করে শফিকুল আলম বলেন, যে টাকা বাইরে চলে গেছে, সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ- এই টাকা আমরা ফেরত আনবে। আন্তর্জাতিক যেসব প্রতিষ্ঠান এইগুলো নিয়ে কাজ করে, তাদের সঙ্গে ইতোমধ্যে আমরা কাজ শুরু করেছি।
লুটপাটের মহাযজ্ঞ চললেও আমাদের সমাজের অনেকে এটা নিয়ে চুপ ছিলেন বলে মন্তব্য করেন তিনি। বলেন, পতিত স্বৈরাচার সরকারের প্রধানমন্ত্রী বীরত্বের সুরে বলেছিলেন, তার পিয়ন ৪০০ কোটি টাকার মালিক।
প্রেস সচিব শফিকুল আরও বলেছেন, এই রিপোর্টটি তিন মাসের। অনেকগুলো বিষয় এখানে আপডেটেড হবে। তখন বাংলাদেশের মানুষ শেখ হাসিনার শাসনামালের দুর্নীতির সামগ্রিক পুরো চিত্র পাবেন আশা করি।
বাংলাদেশ সময়: ২২:০৬:০৯ ২১ বার পঠিত