জামালপুর প্রতিনিধি : জামালপুরে সরিষাবাড়ীতে শিক্ষক ও শিক্ষার্থী মধ্যে স্ত্রী আয়া’কে নিয়ে মারপিটের ঘটনায় ১০জন আহত হয়েছে। এঘটনা মঙ্গলবার (১০ ডিসেম্বর) দুপুরে উপজেলার পোগলদিঘা ইউনিয়নের পাটাবুগা দাখিল মাদ্রাসায় ঘটেছে।
মাদ্রাসা ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, মঙ্গলবার সকাল ১০টায় শিক্ষার্থীরা মাদ্রাসায় পরীক্ষা দিতে আসে। এসময় ৯ম শ্রেণীর ক্লাসরুমে ময়লা আবর্জনায় থাকায় শিক্ষার্থীরা আয়া আঞ্জুমানারা কে ক্লাসরুম পরিস্কার করতে বলে। কিন্তু আয়া আঞ্জুমানারা ক্লাসরুম পরিস্কার করতে অনীহা প্রকাশ করে। পরে এই নিয়ে আয়া ও শিক্ষার্থীদের মাঝে কথা কাটাকাটি হয়। একপর্যায় আয়া আঞ্জুমানারার স্বামী ও উক্ত মাদ্রাসার সহকারী শিক্ষক রমজান আলী বিষয়টি শুনতে পেয়ে ওইসব শিক্ষার্থীদের উপর ক্ষিপ্ত হয়ে বলে তোদের মা-বোন এনে ক্লাসরুম পরিস্কার করতে পারিস না। আমার বউ এসব করতে পারবে না।
পরে এই নিয়ে শিক্ষক রমজান আলীর উপর ক্ষিপ্ত হয় শিক্ষার্থীরা। পরে রমজান আলী ফোন করে বহিরাগত লোকজন এনে শিক্ষার্থীদের উপর হামলা ও মারধর করায়। এতে স্থগিত হয়ে যায় পরীক্ষা। মুহুর্তের মধ্যে এলাকায় সৃষ্টি চাঞ্চল্যকর পরিবেশ।
শিক্ষক রমজান আলীর নেতৃত্বে হামলায় আহত হয় মাদ্রাসার নিরাপত্তাকর্মী রুহুল আমিন, ৯ম শ্রেণির শিক্ষার্থী আল-আমিন, শাকিল, সোহানসহ অন্তত ১০ জন। পরে খবর পেয়ে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা, একাডেমিক সুপারভাইজার ও পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসে।
এদিকে আহত শিক্ষার্থী আল-আমিন, শাকিল ও সোহান জানান, আয়া মাদ্রাসায় আসেন না, আসলেও তার সাথে কথা বলা যায় না। আয়া আঞ্জুমানারা কে খালা ডাকলে সে রেগে যায়। তাকে ম্যাডাম ডাকতে বলে। কিছু বলতে গেলে তার স্বামী রমজান স্যার পরীক্ষার ফেল করিয়ে দেওয়ার হুমকি দেয়। আয়াকে কক্ষ পরিষ্কার করতে বলায় বহিরাগত লোকজন এনে তার স্বামী আমাদের মারধর করে।
মাদ্রাসার নিরাপত্তাকর্মী রুহুল আমিন অভিযোগ করে বলেন, আঞ্জুমনোয়ারা ও তিনি একসঙ্গেই চাকরি নিয়েছেন। কিন্তু তিনি নিয়মিত দায়িত্ব পালন করলেও আয়া অনুপস্থিত থাকেন। শুধু মাস শেষে হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করে বেতন তুলে নেন। আয়ার কাজগুলোও আমাদেরই করতে হয়। বহিরাগত লোকজন এনে ছাত্রদের ওপর হামলা সময় প্রতিবাদ করায় আমাকেও মারধর করেছে।
এমন ঘটনায় অভিযুক্ত শিক্ষক রমজান আলী সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘এবিষয়ে এখন তার কোন বক্তব্য নেই। তিনি আইনগত ব্যবস্থা নিবেন। এই বলে তিনি এবং তার স্ত্রীকে নিয়ে প্রতিষ্ঠান থেকে মোটরসাইকেল যোগে দ্রুত চলে যান।
এ ব্যাপারে মাদ্রাসার সুপারিন্টেন্ডেন্ট আইয়ুব আলী বলেন, আয়া আঞ্জুৃমনোয়ারা ও তার স্বামী রমজান আলীকে অফিসিয়ালভাবে বারবার সতর্ক করা হলেও কোনো পরিবর্তন হননি। বরং বিভিন্ন সময় দলীয় প্রভাবে হুমকিধামকি এবং বহিরাগত লোকজন নিয়ে শিক্ষক-কর্মচারীদের নানাভাবে লাঞ্ছিত করেন। তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বরাবর লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।
এব্যাপারে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোজাম্মেল হক জানান, হামলা-মারধরের বিষয়টি শুনে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। এরআগেও অভিযুক্ত ওই দম্পতির বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত কমিটি গঠিত হয়েছে। শীঘ্রই তদন্ত প্রতিবেদন দেওয়া হবে।
এবিষয়ে সরিষাবাড়ী থানার (ওসি) মোঃ চাঁদ মিয়া বলেন, সংবাদ পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসে। এখনো কোনো অভিযোগ পাওয়া যায়নি। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
বাংলাদেশ সময়: ২২:০০:৪৮ ২৭ বার পঠিত