বিগত সরকারের নেওয়া শিশুশ্রম নিরসন প্রকল্পের শ্বেতপত্র প্রকাশের আহ্বান জানিয়েছেন শ্রম সংস্কার কমিশনের সভাপতি সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহমেদ।
তিনি বলেছেন, ২০২৫ সালের মধ্যে শিশুশ্রম নিরসনে বিগত সরকারের আমলে তিন দফায় প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে। কিন্তু জরিপে দেখা যাচ্ছে, দেশে শিশুশ্রম বেড়েছে। যদিও ঝুঁকিপূর্ণ শিশুশ্রম কমেছে।
কিন্তু সেটা শিশুর সজ্ঞার পার্থক্যের কারণে। তাহলে প্রকল্পের টাকা কোথায় গেল এবং কি কাজ হলো, সেটা জনসমক্ষে প্রকাশ করা দরকার।
আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর একটি অভিজাত হোটেলে ‘চাইল্ড লেবার ইলিমিনেশন প্লাটফর্ম (সিএলইপি)’র উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এসব কথা বলেন তিনি।
এডুকো বাংলাদেশের পরিচালক আব্দুর রহিমের সভাপতিত্বে সভায় তিনি আরো বলেন, শিশুশ্রম আইনে নিষিদ্ধ।
শিশুকে শ্রমে রেখে বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়ে তোলা অসম্ভব। বাল্যবিয়ে বন্ধে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও পুলিশের অভিযানের খবর পাই। কিন্তু শিশুশ্রমের বিরুদ্ধে কোনো অভিযানের কথা শুনি না। শিশুশ্রমের বিরুদ্ধে অভিযানের জন্য সরকারকে প্রশাসনিক নির্দেশ দিতে হবে।
এর বিরুদ্ধে সমাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। জাতীয় পর্যায়ে আইন ও নীতি প্রণয়ন ও তার বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হবে।
সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহমেদ বলেন, শিশুশ্রম আমাদের কমিশনের কাজে অগ্রাধিকার তালিকায় রয়েছে। আমরা দেখেছি, ঝুঁকিপূর্ণ কাজ নিয়ে নানা মতভেদ থাকলেও লেখাপড়া থেকে বঞ্চিত করে যে কোনো কাজই শিশুর জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। আমরা চাই, কোনো শিশুই শ্রমে থাকবে না।
সকলেই স্কুলে যাবে। সামর্থ্যবানরা কমপক্ষে একটি শিশুর দায়িত্ব নিলে এই কাজ অনেকটা এগিয়ে যাবে। এ কাজে শুধু সরকারকে দায়িত্ব দিলে হবে না, এর সাথে জড়িত সকল সংগঠনকেই দায়িত্ব নিতে হবে। তবে সরকারকে এ বিষয়ে জবাবদিহি করতে হবে। শিশুশ্রম নিয়ে কাজ করা সংগঠনগুলোর সাথে আলোচনা করে কমিশন সুপারিশ চূড়ান্ত করবে।
জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের উপ-পরিচালক এম রবিউল ইসলাম বলেন, শিশুশ্রম নিয়ে সরকারের কাজের মধ্যে সমন্বয়হীনতা রয়েছে। সরকার ও বেসরকারি সংস্থার সঙ্গে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন কাজ করতে চায়। বিশেষ করে শিশুদের গৃহস্থালি কাজ নিয়ে কাজ করা খুবই জরুরি। শ্রম আইনে শিশুদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ কাজের তালিকায় গৃহস্থালি কাজ এখনো যুক্ত করতে পারিনি বা কতৃপক্ষ বিবেচনায় নেয়নি।
শিশুশ্রম বন্ধে গ্রাম থেকে কাজ শুরু করা আহ্বান জানিয়ে ওয়ার্ল্ড ভিশনের সিনিয়র প্রোগ্রাম ডিরেক্টর চন্দন জেড গোমেজ বলেন, ওয়ার্ল্ড ভিশন দীর্ঘ দিন ধরে কাজ করছে। আমরা ইতিমধ্যে এক হাজার ৩টি ইউনিয়নকে শিশুশ্রম মুক্ত করেছি। যেখানে আগামীতেও শিশু শ্রমিক পাওয়া যাবে না। সকলেই যদি এভাবে কাজ করেন তাহলে দ্রুত দেশকে শিশুশ্রম মুক্ত করা সম্ভব হবে।
বাংলাদেশ লেবার ফাউণ্ডেশন (বিএলএফ)’র নির্বাহী পরিচালক এ কে এম আশরাফ উদ্দিনের সঞ্চালনায় সভায় আরো বক্তৃতা করেন গুড নেইবারস-বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর এম মাঈনউদ্দিন মইনুল, শাপলা নীড়ের কান্ট্রি ডিরেক্টর তমকো উচিয়ামা, সমাজসেবা অধিদপ্তরের মাহামুদ উল্লাহ, নারী উন্নয়ন শক্তির প্রধান নির্বাহী ড. আফরোজা পারভীন, শিশু কল্যাণ পরিষদের মাসুদ মান্না, এডুকো বাংলাদেশের ব্যবস্থাপক আফজাল কবীর খান, ইপসার অ্যাডভোকেট শারমিন সুলতানা, বাংলাদেশ সলিডারিটি প্লাটফর্মের হেনা আক্তার রুমা প্রমূখ।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, ২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশে সব ধরণের শিশু শ্রম নির্মূল করার লক্ষ্যে ২১টি আন্তর্জাতিক ও জাতীয় উন্নয়ন সংস্থার সমন্বয়ে চাইল্ড লেবার ইলিমিনেশন প্লাটফর্ম (সিএলইপি) নামের ওই প্লাটফর্ম গঠন করা হয়েছে। শিশুশ্রম নিরসনের লক্ষ্যে বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে আলোচনা, সম্মিলিতভাবে অ্যাডভোকেসি, প্রচার ও গবেষণার মাধ্যমে শিশুশ্রম সম্পর্কিত সম্যাগুলো সমাধানে একযোগে সরকারের সাথে কাজ করবে এই প্লাটফর্ম। প্লাটফর্মের সচিবালয়ের দায়িত্ব পালন করছে এডুকো বাংলাদেশ।
বাংলাদেশ সময়: ২২:৪৮:৪৪ ৮ বার পঠিত