জেলার ৩টি উপজেলার বিস্তীর্ণ ফসলের মাঠ জুড়ে বাতাসে দোল খাচ্ছে হলুদ সরিষা ফুল। হলুদের আভায় ছড়িয়ে থাকা সরিষার ক্ষেতগুলো দেখতে প্রকৃতি প্রেমীরা সকাল-বিকেল ভিড় করছেন। কৃষি প্রণোদনা পাওয়ায় এবং এ বছর বীজ বপনের সময় আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় সরিষার আবাদ ভালো হয়েছে। তাই কৃষি কর্মকর্তা ও কৃষকরা বাম্পার ফলনের আশা করছেন।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, তেলের চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় চলতি মওসুমে সরিষার চাষ বেড়েছে। জেলার ৩টি উপজেলায় ১৩ হাজার ৩৫০ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষ হয়েছে। এ চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৩ হাজার ৩৪৮ হেক্টর জমিতে। তবে বিগত বছরের তুলনায় এবার ৪৬২ হেক্টর বেশি জমিতে সরিষা চাষ বেড়েছে। গত বছর সরিষার আবাদ হয়েছিল ১২ হাজার ৮৮৮ হেক্টর জমিতে। চলতি মওসুমে উপজেলাওয়ারী সরিষার চাষ হয়েছে, নড়াইল সদর উপজেলায় ৪ হাজার ৪৩০ হেক্টর জমিতে, লোহাগড়া উপজেলায় ৫ হাজার ৩৬০ হেক্টর জমিতে এবং কালিয়া উপজেলায় ৩ হাজার ৫৬০ হেক্টর জমিতে। চাষ হওয়া জমিতে ১৭ হাজার ৯৯৩ মেট্রিক টন সরিষা উৎপাদনের সম্ভবনা রয়েছে বলে বাসসকে জানান উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা নিপু মজুমদার।
এদিকে, সরিষা ফুলের হলুদ রাজ্যে মৌমাছির গুঞ্জনে মুখরিত হয়ে উঠেছে মাঠ। মৌচাষিরা সরিষা ক্ষেতে মৌমাছির বাক্স বসিয়ে মধু আহরণে ব্যস্ত সময় পার করছেন। হলুদ আবরণে ঢাকা সরিষার ক্ষেত প্রকৃতির মাঝে অপরূপ সৌন্দর্যের শোভা ছড়াচ্ছে।
একাধিক সরিষা চাষী বাসসকে জানান, গত বছর আশানুরূপ দাম পাওয়ায় এবং কৃষি বিভাগ সরিষা চাষে প্রণোদনা দেওয়ায় চলতি মওসুমে কৃষকেরা সরিষা চাষে আগ্রহী হয়েছেন। এ বছর জেলায় গত বছরের তুলনায় বেশি জমিতে সরিষার চাষ করেছেন তারা। সদর উপজেলার কলোড়া গ্রামের কৃষক মোস্তফা মোল্যা ও নাজমুল মোল্যা বলেন, সরিষা চাষে বিঘা প্রতি খরচ হয় ৩ থেকে ৪ হাজার টাকা। ফলন হয়ে থাকে ৬-৭ মণ। প্রতি মণ সরিষার বাজার দর ৩ হাজার ২শ টাকা থেকে ৩ হাজার ৫শ টাকা। তারা আরও বলেন, গত বছর সরিষা চাষে আশানুরূপ লাভ হওয়ায় এবার দু’জনে প্রায় ১৫ বিঘা জমিতে সরিষার চাষ করেছেন। আশা করছি এবারও ভালো ফলন ও ভালো দাম পাবো।
নড়াইল কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের জেলা প্রশিক্ষণ অফিসার সৌমিত্র সরকার বলেন, মাঠ পর্যায়ের কৃষি কর্মকর্তারা সরিষা চাষীদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন। উন্নত জাতের সরিষার চাষ ও আবাদ বাড়াতে কৃষকদের পরামর্শ দেয়া হয়েছে। সরিষা ৩ থেকে সাড়ে ৩ মাস মেয়াদি ফসল। কম খরচ ও কম পরিশ্রমে সরিষা চাষ করতে পারেন কৃষকেরা। বর্তমানে সরিষা চাষ কৃষকের কাছে লাভজনক ফসলে পরিণত হয়েছে। গত বছর সরিষার আশানুরূপ ফলন ও দাম পাওয়ায় এ বছর কৃষকেরা বেশি জমিতে সরিষা চাষে উৎসাহী হয়েছেন। সরিষা চাষ একদিকে যেমন মাটির উর্বরতা বাড়ায়, অন্যদিকে পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আশা করছি, কৃষকরা সরিষার ভালো ফলনে লাভবান হবেন। এখানকার উৎপাদিত সরিষার তেল দেশের ভোজ্য তেলের চাহিদা পূরণেও বড় ভূমিকা রাখবে বলে তিনি জানান।
বাংলাদেশ সময়: ১৫:১৮:০৫ ৮ বার পঠিত