বাংলাদেশের মেরিন একাডেমিগুলোকে আন্তর্জাতিক মানের করা হবে বলে জানিয়েছেন নৌ-পরিবহন এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন।
আজ সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বাংলাদেশ মেরিন একাডেমি চট্টগ্রামের ৫৮তম ব্যাচ ক্যাডেটদের শিক্ষা সমাপনী কুচকাওয়াজ (গ্র্যাজুয়েশন প্যারেড) অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন।
অনুষ্ঠানে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেনসহ বিভিন্ন বাহিনীর সিনিয়র কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
উপদেষ্টা বলেন, ‘এই একাডেমি অত্যন্ত মনোরম পরিবেশে স্থাপিত। মেরিন একাডেমির সার্বিক উন্নয়নে মাস্টার প্ল্যান হাতে নেওয়া হবে। এখানের অনেক বিল্ডিং সংস্কার করতে হবে এবং আরও কিছু ডেভেলপমেন্ট প্রয়োজন। তিনি বলেন, সর্বপুরি বাংলাদেশের মেরিন একাডেমিগুলোকে আন্তর্জাতিক মানের করা হবে।’
নৌ-পরিবহন উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা দেশি-বিদেশি শিপিং করপোরেশনগুলোর সঙ্গে কথা বলেছি, যাতে আমাদের মেরিনারদের কর্মসংস্থানের সুযোগ হয়। ইতোমধ্যে আমাদের মেরিনাররা বিভিন্ন দেশে কাজ করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করে দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছেন।’
একাডেমির বিভিন্ন পরিবর্তনের বিষয়ে উপদেষ্টা বলেন, একাডেমির সিলেবাসও কিছুটা পরিবর্তন করতে হবে। একই সাথে সিলেকশন পদ্ধতিতেও কিছুটা পরিবর্তন করা হচ্ছে। এ সময় তিনি মেরিনারদের বিদেশে গিয়ে দেশের মর্যাদা বজায় রেখে কাজ করার আহ্বান জানান।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্যে বাংলাদেশ মেরিন একাডেমির কমান্ড্যান্ট (ভারপ্রাপ্ত) ক্যাপ্টেন মো. ইবনে কায়সার তৈমুর বলেন, ‘মেরিন একাডেমি একটি আন্তর্জাতিকমানের ক্যাডেট প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। এখানে হাতে কলমে মেরিনারদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।’
তিনি বলেন, ‘১৯৬২ সাল থেকে এখন পর্যন্ত ৫৩৬২ জন ক্যাডেট তৈরি হয়েছে এই মেরিন একাডেমিতে। এখানকার মেরিনাররা দেশি-বিদেশি বিভিন্ন শিপিং করপোরেশনে কাজ করে প্রতিবছরে বিপুল পরিমাণে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করে দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছেন।’
বাংলাদেশ মেরিন একাডেমি চট্টগ্রামের ৫৮ তম ব্যাচে নটিক্যাল শাখায় ১২৮ জন এবং ইঞ্জিনিয়ারিং শাখায় ১২০ জন ক্যাডেটসহ মোট ২৩৮ জন ক্যাডেট মেরিন একাডেমিতে দুইবছর একাডেমিক ও রেজিমেন্টাল প্রশিক্ষণ সমাপ্ত করেছে।
অনুষ্ঠানে ৫৮তম ব্যাচ ক্যাডেটদের মধ্যে সকল ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ কৃতিত্বের জন্য মো. মিনহাজ সাদমানকে রাষ্ট্রপতি স্বর্ণপদকে ভূষিত করা হয় এবং ২য় সর্বোচ্চ নম্বর পেয়ে বাংলাদেশ সিটি করপোরেশন পদক পান সিনিয়র ক্যাপ্টেন জিসান।
এছাড়া ক্যাডেট ক্যাপ্টেন নুসরাত, সিনিয়র ক্যাপ্টেন মাহিরাকে বাংলাদেশ মেরিন একাডেমি পদক, সিনিয়র ক্যাডেট হৃদয়কে বাংলাদেশ সিটি করপোরেশন পদক, ইসমাইলকে শিপিং করপোরেশন পদক প্রদান করা হয়।
এ বছর সমাপনী পরীক্ষায় সর্বোচ্চ নম্বর প্রাপ্তির জন্য নৌ শাখায় মো. ইবনে ফয়সাল তানভীর মজুমদার এবং প্রকৌশল শাখায় ইফফাদ হাসান অনিককে নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের রৌপ্য পদক প্রদান করা হয়।
মেরিন একাডেমি সূত্র জানায়, ১৯৬২ সালে প্রতিষ্ঠার পর গত ৬২ বছরে এই একাডেমি থেকে প্রায় ৫৩৬২ জন ক্যাডেট প্রশিক্ষিত হয়েছেন। তারা দেশি-বিদেশি বিভিন্ন জাহাজে সুনামের সঙ্গে কাজ করছেন। শুধু তাই নয়, মেরিন পেশাজীবীদের মাধ্যমে দেশে বছরে রাজস্ব আসে তিন হাজার কোটি টাকার ওপরে।
ওই সূত্র আরও জানায়, মেরিন একাডেমির প্রশিক্ষণমান আন্তর্জাতিক মানের হওয়ায় ২০১৯ সালে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতিও লাভ করে। বিএসএমআর মেরিটাইম ইউনিভার্সিটির অধিভুক্ত হওয়ার পর ২০১৩ সাল থেকে বাংলাদেশ মেরিন একাডেমির নটিক্যাল ও ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে চার বছর মেয়াদি ব্যাচেলর অব মেরিটাইম সায়েন্স সম্মান কোর্স চালু করা হয় এবং ব্যাচগুলোর কোর্স সম্পন্ন করা হয়।
বাংলাদেশ সময়: ১৮:০৩:০৯ ৭ বার পঠিত