জলবায়ু পরির্বতনে কৃষক ও মৎস্য পরিবারগুলো জীবিকা হারিয়ে দেশের বিভিন্ন জায়গায় আশ্রয় খুঁজছে। বাস্তুহারা এসব কৃষি ও মৎসজীবী সাধারণ মানুষ জলবায়ু পরিবর্তনের সাথে নিজেদের খাপ খাইয়ে নিতে গিয়ে প্রতারিত হয়ে মানবপাচারের কবলে পড়ছে।
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ক্রমবর্ধমান মানবপাচার রোধে জনসাধারণের মাঝে সচেতনতা বৃদ্ধি ও করণীয় নিয়ে রংপুরে অনুষ্ঠিত এক কর্মশালায় বক্তারা জলবায়ু পরিবর্তনে বাস্তুহারা শ্রমজীবী পরিবারের মানবপাচার ঠেকাতে সচেতনতা বাড়ানোর আহ্বান জানান।
আজ সোমরার সকালে জেলা প্রশাসক হল রুমে অনুষ্ঠিত উইনরক ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ প্রোগ্রাম আয়োজিত কর্মশালায় সংগঠনটি জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুকি মোকাবিলায় সংগঠনটির সহযোগিতায় গণ উন্নয়ন কেন্দ্র (এটক)-এর জলবায়ু প্রকল্প ‘অগ্রযাত্রা’ তুলে ধরে।
বক্তারা জানান, ২৪ সালের জানুয়ারি থেকে শুরু হওয়া দুই বছর মেয়াদের প্রকল্পটি শেষ হবে ২৬ সালে। গাইবান্ধা, লালমনির হাট ও রংপুর জেলার ৮ টি উপজেলা ও ১৪ টি ইউনিয়নে এটি বাস্তবায়িত হচ্ছে।
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে আধুনিক দাসত্বের অবসান ঘটাতে উইনরক ইন্টারন্যাশনালের বাংলাদেশ প্রোগ্রাম ‘অগ্রযাত্রা’ প্রকল্পটি হাতে নিয়েছে। প্রকল্পটি বাংলাদেশ সরকারকে জলবায়ু পরিবর্তন কীভাবে মৎস্যজীবী এবং কৃষকদের উপর প্রভাব ফেলছে তা আরও ভালোভাবে বুঝতে সাহায্য করবে এবং বাংলাদেশের দুর্বল জনগোষ্ঠীর মাঝে মানবপাচারের ঝুঁকি কমাতে সঠিক তথ্য ও প্রমাণ সরবরাহ করবে।
এই কর্মসূচি মানবপাচার ও জলবায়ু পরিবর্তন উভয় ক্ষেত্রেই বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের একসাথে কাজ করার প্রতিশ্রুতিকে তুলে ধরে। জলবায়ু অভিযোজন, সহনশীলতা এবং প্রশমন ব্যবস্থার বাস্তবায়নে বাংলাদেশের সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং সম্পদ সংগ্রহে সহায়তা করার ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে যুক্তরাষ্ট্র।
যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্টের সহায়তায়, অগ্রযাত্রা প্রকল্পটি জলবায়ু পরিবর্তন, মানব পাচার এবং আধুনিক দাসত্বের মধ্যে যোগসূত্র নিয়ে জ্ঞানের পরিধি বাড়াবে। সারাদেশ থেকে প্রমাণ সংগ্রহের মাধ্যমে, প্রকল্পটি জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে কৃষি ও মৎস্যজীবী পরিবারগুলোতে হওয়া সম্পত্তি ও জীবিকার ক্ষতির কারণে শোষণ ও মানবপাচারের ঝুঁকি হ্রাস করবে।
প্রকল্পের মাধ্যমে কৃষি ও মৎস্যজীবীদের মাঝে ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর জন্য জলবায়ু-সহিষ্ণু জীবিকার ব্যবস্থা করা হবে। যা এই জনগোষ্ঠীর সচেতনতা বৃদ্ধি এবং জলবায়ু পরিবর্তন ও পাচারের চ্যালেঞ্জকে স্থানীয় নীতিতে অন্তর্ভুক্ত করার রোডম্যাপ সরবরাহ করবে। প্রকল্পটি মানবপাচারের সম্ভাব্য শিকার এবং অতীতের ভুক্তভোগীদের রক্ষা করতে এবং পাচারকারীদের বিচারের আওতায় আনতে সহায়তা করবে।
বক্তারা জানায়, জলবায়ু পরিবর্তনের সাথে যুক্ত পরিবেশগত বিপর্যয় লাখ লাখ মানুষের ঘরবাড়ি, স্বাস্থ্য এবং কাজকে বিপন্ন করে তোলে। পাশাপাশি এটি ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার লোকেদের অপরাধী গোষ্ঠীর হাতে শোষণের বৃহত্তর ঝুঁকিও তৈরি করে।
কর্মশালায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মো. ময়নুল ইসলাম অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি), রংপুর, মো. আলমগীর রহমান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, রংপুর, নাসির চৌধুরী, প্রজেক্ট ডিরেক্টর, উইনরক ইন্টারন্যাশনাল, কুশাল বনিক, হেড অফ ফাইন্যান্স, উইনরক ইন্টারন্যাশনাল, অতিরিক্ত উপপরিচালক কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, রংপুর, মালিক মোহাম্মদ তৈমুর গোফরান, সহকারী পরিচালক, জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিস, রংপুর, মো. কাওছার হোসেন সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা, গণ উন্নয়ন কেন্দ্রের প্রোগ্রাম ম্যানেজার কৃষিবীদ মুনীর হোসেন, উইনরক ইন্টারন্যাশনালের রিজিয়োনাল কোর্ডিনেটর মো. মিজানুর রহমান, অগ্রযাত্রা প্রকল্পের প্রজেক্ট ম্যানেজার মো. এরফান মন্ডল ছাড়াও বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা ও প্রিন্ট মিডিয়া ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার প্রতিনিধিরা।
বাংলাদেশ সময়: ২১:৪৫:৪৯ ১৩ বার পঠিত