নির্বাচিত ও অন্তর্বর্তী সরকার মিলেও ২০২৪ সালে জীবনযাত্রার ব্যয় বাগে আনতে পারেনি। ইচ্ছায় বা অনিচ্ছায় হোক, টাকা ছাপিয়ে সংকট কাটানোর চেষ্টা করেছে। রেমিট্যান্স ও রফতানি আয় বাড়ায় ঠেকেছে রিজার্ভের পতন। তবে রাজনৈতিক অস্থিরতার জেরে বিনিয়োগ স্থবিরতায় বাড়েনি কর্মসংস্থান। তবে অর্থনীতির এমন দুর্দশা চলতি বছর কেটে যাওয়ার পূর্বাভাস দিয়েছে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো।
২০ বিলিয়ন ডলার রিজার্ভ, ১১০ টাকা ডলার রেট, ৯ দশমিক ৮৬ শতাংশ সাধারণ ও সাড়ে ৯ শতাংশ খাদ্য মূল্যস্ফীতির চাপ মাথায় নিয়ে ২০২৪ সালের শুরুতে দায়িত্ব নিয়েছিল আওয়ামী লীগ সরকার। ব্যাংকখাতের সংকট ও শেয়ারবাজারের অস্থিরতার মাঝেই প্রধান চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায় নিত্যপণ্যের দাম কমিয়ে ভোক্তাকে স্বস্তি দেয়া। তবে সিন্ডিকেটের কাছে ছিল অসহায় আত্মসমর্পণ।
জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে পতন হয় হাসিনা সরকারের। জনআশা ছিল স্বস্তি ফিরবে বাজারে। তবে ধীরে ধীরে তা ফিকে হয়েছে। নতুন সরকারের উপদেষ্টারা হাটে বাজারে দৌড়ঝাঁপ কম দেননি। কিন্তু তারাও অসহায় আত্মসমর্পণ করেছেন সিন্ডিকেটের কাছে। খোদ অর্থ উপদেষ্টা বলেছেন, ব্যবসায়ীরা খুব শক্তিশালী, সেটা ভাঙা সহজ না।
নিত্যপণ্যের বাজারের মতো স্বস্তি ছিল না পুঁজিবাজারেও। বছরের প্রথম প্রান্তিকে ফ্লোর প্রাইস তুলে দিয়ে পুঁজিবাজারকে চাঙ্গার চেষ্টা সফল হয়নি। নিয়ন্ত্রক সংস্থা ও স্টক এক্সচেঞ্জগুলোতে বড় পরিবর্তন এনে নতুন সরকারও বাজার স্থিতিশীল করতে পারেনি।
ব্যাংকখাতের লুটপাট ধামাচাপা দিতে একীভূতকরণের উদ্যোগ সফল করতে পারেনি হাসিনা সরকার। নতুন গভর্নর দায়িত্ব নিয়েই এস আলম নিয়ন্ত্রিত ব্যাংকগুলোর পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দেন। টাকা ছাপিয়ে ব্যাংকগুলোকে সহায়তা না করার ঘোষণা দিলেও পরে তা রাখতে পারেননি।
রিজার্ভের পতনে সরকার পরিবর্তনের আগে ডলারের দাম ১১৮ টাকা ছাড়িয়ে যায়। তবে, নতুন সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর রেমিট্যান্স প্রবাহ ও রফতানি আয় বাড়ায় পতন ঠেকানো গেছে। এতে ডলারের দাম ১২০ টাকায় স্থিতিশীল হলেও বছরের শেষে ডলারের দাম ছিল আবারো ঊর্ধ্বমুখী।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকে আসা রফতানি আয় ও রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) দেখানো আয়ের বিস্তর ফারাক নিয়ে আলোচনা ছিল ২০২৪ সালের শুরুতেই। আয়ের প্রধান উৎস তৈরি পোশাকখাত ভালো সময় পার করেনি। গণঅভ্যুত্থানের পর রাজনৈতিক ইন্ধন ও বেতন-ভাতার পাশাপাশি চাকরি হারানোর ভয়ে দেখা গেছে শ্রমিক অসন্তোষ। তাই শ্রম পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে গঠিত হয়েছে শ্রম সংস্কার কমিশন।
রাজনৈতিক অস্থিরতার বছরে নতুন করে খুব একটা বিনিয়োগে আসেননি উদ্যোক্তারা। বছরের বেশির ভাগ জুড়ে তাই বেসরকারিখাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি ছিল এক অঙ্কের ঘরে। বিনিয়োগ কম হওয়ায় বাড়েনি কর্মসংস্থান। বিকল্প হিসেবে বিদেশে শ্রমিক রফতানিও বছর ব্যবধানে কমেছে।
অর্থনীতির এমন দুর্দশার কারণ হিসেবে বিগত সরকারের সীমাহীন আর্থিক লুটপাটের ফিরিস্তি তুলে আনা হয়েছে অর্থনীতির শ্বেতপত্রে। এমন বাস্তবতায় ৩.৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস দিয়েছে আইএমএফ। তবে আগামী অর্থবছরে ঘুরে দাঁড়ানোর আশা তুলে ধরেছে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো।
বাংলাদেশ সময়: ১৬:০০:১২ ১৮ বার পঠিত