রাষ্ট্রের ক্রান্তিকালীন সময়ে রাষ্ট্রযন্ত্র সংস্কারের জন্য গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ সম্পর্কে দক্ষিণ আফ্রিকা এবং ল্যাটিন আমেরিকার তুলনামূলক অভিজ্ঞতা বিনিময়ে আজ এক সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট বার এসোসিয়েশন অডিটোরিয়ামে ‘মানবতাবিরোধী অপরাধের প্রেক্ষিতে সত্য, ন্যায়বিচার, জবাবদিহিতা ও প্রতিকার’ শীর্ষক এ সভার আয়োজন করে বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড এন্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাষ্ট) এবং সাউথ এশিয়ান ইনস্টিটিউট অব এডভান্সড লিগ্যাল এন্ড হিউম্যান রাইটস স্টাডিজ।
ব্লাস্ট ভাইস চেয়ারম্যান ড. শামসুল বারীর সভাপতিত্বে ও সিনিয়র আইনজীবী সারা হোসেনের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় মূল বক্তা হিসেবে ইয়াসমিন সুকা এবং ড. কার্লোস ক্যাস্ট্রেসানা ফার্নান্দেজ তাদের অভিজ্ঞতা বর্ননা করেন।
স্বাগত বক্তব্যে সারা হোসেন বলেন, ‘যেকোনো ক্রান্তি কাল-সংঘাত মূলক কিংবা আন্দোলন পরবর্তী সময়ে যখন পট পরিবর্তন হয় তখন তার প্রেক্ষিতে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘন হতে দেখা যায়। পরবর্তী সময়ে একটি রাষ্ট্র বা জাতি কিভাবে এগিয়ে যেতে পারে, অথবা ক্রান্তিকালীন ন্যায় বিচার বাস্তবায়নে কি চ্যালেঞ্জ আছে তার সমাধান কি তা জানার প্রচেষ্টা সফল করতে এ আয়োজন।’
ইয়াসমীন সুকা তার উপস্থাপনায় ক্রান্তিকালীন ন্যয়বিচারের ক্ষেত্রে সাধারণ ক্ষমা, দায়মুক্তি, জবাবদিহিতা এবং ট্রুথ কমিশনের মধ্যকার আন্তঃসম্পর্ক তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি, ক্রান্তিকালীন ন্যয়বিচার প্রক্রিয়া ঐতিহাসিকভাবে চলে আসা অবিচার মোকাবেলায় এবং সামাজিক কাঠামো পুনর্গঠন নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
ক্রান্তিকালীন ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় প্রধান অন্তরায়গুলো হলো-অপরাধীদের যথাযথ শাস্তি নিশ্চিত করা, শান্তি ও ন্যায়বিচারের মধ্যে সঠিক ভারসাম্য রক্ষা করা এবং ভুক্তভোগীদের ক্ষতিপূরণের সঠিক ব্যবস্থা করা।’
ড. কার্লোস ক্যাস্ট্রেসানা ফার্নান্দেজ তার অভিজ্ঞতার কথা বলতে গিয়ে বলেন, ‘ক্রান্তিকালীন ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে জবাবদিহিতা ও সার্বিক সমন্বয়নের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রেখে সংঘাত থেকে সকলের জন্য শান্তিপূর্ণ পরিবেশ তৈরী করা জরুরি। যে কোনো অভুত্থান পরবর্তী সময়ে ন্যায়বিচার, আন্তর্জাতিক বাধ্যবাধকতা এবং মানবাধিকারের প্রতি পূর্ণ শ্রদ্ধা রেখে কাজ করতে হয়। উদাহরণ হিসেবে তিনি আর্জেন্টিনায় স্বৈরশাসন ও চিলির একনায়কতন্ত্র শাসনামলের কথা তুলে ধরেন।
তিনি আরো বলেন, আন্তর্জাতিক আদালতে ন্যায়বিচারের জন্য তাদের চলমান প্রচেষ্টা প্রমাণ করে যে নির্যাতন ও মানবতা বিরোধী অপরাধ কোনোভাবেই আন্তর্জাতিক আইনে দায়মুক্তির আওতায় পড়ে না। যাদেরকে নিজেদের দেশে বিচার করা সম্ভব হয় না তাদেরকে অন্য তৃতীয় কোন রাষ্ট্রে সার্বজনীন এখতিয়ারভুক্ত অপরাধসমূহের বিচার করা সম্ভব।
অংশগ্রহণকারীদের প্রশ্নোত্তর পর্বে বক্তারা আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা ও অর্থনৈতিক অপরাধ, আন্তর্জাতিক প্রথাগত আইন, ভূ-রাজনীতি, বর্হি:রাষ্ট্রের দ্বিমুখিতা এবং প্রমাণ সংগ্রহ ও বিচারিক প্রতিবন্ধকতা নিয়ে আলোচনা করেন।
উল্লেখ্য, ইয়াসমিন সুকা দক্ষিণ আফ্রিকার ট্রুথ অ্যান্ড রিকনসিলিয়েশন কমিশন এবং সিয়েরা লিওনের ট্রুথ অ্যান্ড রিকনসিলিয়েশন কমিশনের সদস্য ছিলেন। বর্তমানে তিনি দক্ষিণ সুদানের মানবাধিকার বিষয়ে জাতিসংঘ কমিশনের চেয়ার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
অনুষ্ঠানের অপর বক্তা ড. কার্লোস ক্যাস্ট্রেসানা ফার্নান্দেজ ৩০ বছরেরও বেশি সময় ধরে আইনজীবী, ম্যাজিস্ট্রেট, তদন্তকারী বিচারক এবং প্রসিকিউটর হিসেবে কাজ করছেন। বর্তমানে তিনি দক্ষিণ সুদানের জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশনার এবং কলম্বিয়ার স্পেশাল জুরিসডিকশন ফর পিস-এর উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
এর আগে তিনি গুয়াতেমালায় আন্তর্জাতিক অপরাধ দমন কমিশনের কমিশনার হিসেবে কাজ করেছেন।
বাংলাদেশ সময়: ২২:৪৬:৩৩ ১০ বার পঠিত