চারদিন ধরে দাবানলে পুড়ছে লস অ্যাঞ্জেলেস। যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় ছয়টি অঙ্গরাজ্যের ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা মিলেও হিমশিম খাচ্ছেন পরিস্থিতি সামাল দিতে। অবশ্য, ঝোড়ো বাতাসের গতি কমে আসায় দাবানল ছড়িয়ে পড়ার গতি কিছুটা কমেছে। তবে, এরই মধ্যে ভয়াবহ এ দাবানলে প্রাণহানি ঘটেছে ১০ জনের। সঙ্গে আগুন গ্রাস করে নিয়েছে বিশাল জনবসতি।
দাবানলের ভয়াবহতা এতটাই যে লস অ্যাঞ্জেলেসের পশ্চিমাঞ্চলে স্যান্টা মনিকা ও মালিবুর মধ্যবর্তী প্যালিসেইডস এলাকা এবং পূর্বে পাসাডেনার কাছে ইটন এলাকার পরিস্থিতিকে শরটির ইতিহাসে সবচেয়ে ধ্বংসাত্মক পরিস্থিতি বলে বর্ণনা করা হচ্ছে। খবর সিএনএনের।
মার্কিন সংবাদমাধ্যমটির প্রতিবেদন অনুযায়ী, শুক্রবার (১০ জানুয়ারি) স্থানীয় সময় সকাল পর্যন্ত দাবানলটির মাত্র ৬ শতাংশ নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হন ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা। এর মধ্যে ইটনের আগুন, যেটিতে ১৩ হাজার একর জমি পুড়ে গেছে ইতোমধ্যে, সেটি একটুও নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়নি। আগুনে প্যালিসেডেসে পুড়ে গেছে ১৯ হাজার একর জমি। হার্স্ট এর আগুনে পুড়েছে ৭৭১ একর জায়গা। ৩৭ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়েছে এখানকার আগুন। অপরদিকে কেনেথের দাবানলের আগুন ৩৫ শতাংশ নেভানো সম্ভব হয়েছে। দাবানলে পুড়ে গেছে এখানকার এক হাজার একর জায়গা।
সিএনএন বলছে, ইতোমধ্যে দাবানলের হাত থেকে প্রাণ বাঁচাতে ১ লাখ ৮০ হাজার মানুষকে বাড়িঘর ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রেখেই চলে যেতে বলা হয়েছে। আরও ২ লাখ মানুষকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। তাদেরকেও যে কোনো সময় সরে যেতে বলা হতে পারে।
ভয়াবহ দাবানলে এখন পর্যন্ত ১০ জনের প্রাণহানির পাশাপাশি আহত হয়েছেন অসংখ্য মানুষ। এছাড়া পুড়ে ছাই হয়ে গেছে ১০ হাজার বাড়ি-গাড়িসহ অন্যান্য অবকাঠামো।
লস অ্যাঞ্জেলেসের শেরিফ রবার্ট লুনা এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। দাবানলের কারণে শুধু ইটন এলাকাতেই চার–পাঁচ হাজার অবকাঠামো ধ্বংস হয়ে গেছে। কর্মকর্তাদের বরাতে লস অ্যাঞ্জেলেস টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়, প্যালিসেইডসের দাবানলে আরও ৫ হাজার ৩০০ অবকাঠামো ধ্বংস হয়ে গেছে।
লস অ্যাঞ্জেলেস কাউন্টির ফায়ার সার্ভিসের প্রধান অ্যান্টনি ম্যারন বলেছেন, দাবানল নিয়ন্ত্রণে আসার পর মানুষের দেহাবশেষ শনাক্তকারী দল বাড়ি বাড়ি গিয়ে তল্লাশি চালাবে।
বেসরকারি আবহাওয়া সংস্থা একিউওয়েদারের হিসাব অনুসারে, দাবানলে ১৩ হাজার ৫০০ কোটি ডলার থেকে ১৫ হাজার কোটি ডলারের মতো আর্থিক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
এদিকে দাবানলের সুযোগে লুটপাটের ঘটনাও ঘটছে। মানুষের সম্পদ রক্ষায় আক্রান্ত এলাকাগুলোতে ন্যাশনাল গার্ডের সেনাদের মোতায়েন করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এছাড়া লুটপাটে জড়িত থাকায় অন্তত ২০ জনকে আটক করা হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে।
বিবিসির খবরে জানা গেছে, এ পর্যন্ত কেনেথ, হার্স্ট, লিডিয়া, ইটন ও প্যালিসাইডস অঞ্চলে দাবানলের আগুন ছড়িয়েছে। ধ্বংসপ্রাপ্ত হওয়ার হুমকিতে পড়েছে ঐতিহাসিক অনেক স্থানও। লস অ্যাঞ্জেলেস কাউন্টির ফায়ার সার্ভিসের প্রধান অ্যান্টনি ম্যারন বলেন, ইটন এলাকার দাবানল মাউন্ট উইলসন অবজারভেটরির মাঠ পর্যন্ত ছড়িয়েছে। এটি এমন একটি জায়গা, যেখান থেকে এক শতাব্দী আগে এডউইন হাবল মিল্কিওয়ের বাইরে ছায়াপথের অস্তিত্ব আবিষ্কার করেছিলেন। তিনি আরও বলেছিলেন, মহাবিশ্ব সম্প্রসারিত হচ্ছে।
এছাড়া পাহাড়ি এলাকা প্যাসিফিক প্যালিসেইডসে অনেক তারকার বসবাস। দাবানলে ঘরবাড়ি পুড়ে যাওয়া মানুষদের দলে যুক্তরাষ্ট্রের বেশ কয়েকজন তারকাও আছেন। তাদেরই একজন অভিনেতা জেমি লি কার্টিস। বৃহস্পতিবার তিনি ঘোষণা দিয়েছেন, ত্রাণ কার্যক্রমে ১০ লাখ ডলার অনুদান দেবে তার পরিবার ।
স্পেনের বংশোদ্ভূত মার্কিন শেফ হোসে আন্দ্রেস বিশ্বজুড়ে দুর্যোগকবলিত মানুষদের মধ্যে বিনামূল্যে খাবার পৌঁছে দেওয়ার মধ্য দিয়ে পরিচিতি পেয়েছেন আগেই। দাবানল কবলিত মানুষদের সহায়তায় এগিয়ে এসেছেন তিনিও। প্যালিসেইডসে দাবানল কবলিত এলাকার কাছে প্যাসিফিক কোস্ট হাইওয়েতে একটি খাবারের ট্রাক বসিয়েছেন তিনি।
ভয়াবহ দাবানল মোকাবিলার অভিজ্ঞতা আছে কানাডার। ইতোমধ্যে দক্ষিণাঞ্চলীয় ক্যালিফোর্নিয়ায় এ দাবানল মোকাবিলার জন্য বিশেষায়িত উড়োজাহাজ পাঠিয়েছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো। সেইসঙ্গে তিনি জানিয়েছেন, কানাডার ফায়ার সার্ভিসের ২৫০ জন কর্মীকেও প্রস্তুত রাখা হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের এ দাবানল মোকাবিলায়।
বাংলাদেশ সময়: ১৭:০৬:৫৫ ৪ বার পঠিত