ভয়াবহ দাবানলে পুড়ছে যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ার লস অ্যাঞ্জেলেস শহর। স্থানীয় সময় সোমবার (১৩ জানুয়ারি) নতুন করে ভেনচুরা কাউন্টিতে দাবানল ছড়িয়ে পড়েছে। এরইমধ্যে পুড়ে গেছে ৫ একর ভূমি। আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে প্রাণপণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন দমকলকর্মীরা। তবে দাবানলের গতি কমার কোনো লক্ষণ নেই। এর মধ্যেই শহরটির ঘরবাড়ি, সড়ক আর গাড়ি লাল-গোলাপি গুঁড়ায় ঢাকা পড়েছে।
গেল মঙ্গলবার (৭ জানুয়ারি) আগুনের সূত্রপাতের পর লস অ্যাঞ্জেলেসে ছয়টি দাবানল ছড়িয়ে পড়ে। এখনো সক্রিয় রয়েছে তিনটি। এর মধ্যে শহরের পশ্চিম অংশে প্যালেসেইডস ও পূর্বে ইটন দাবানলের ভয়াবহতা সবচেয়ে বেশি। এই দুই দাবানল সামান্যই নিয়ন্ত্রণে আনা গেছে। শহরটিতে রেড অ্যালার্ট জারি রয়েছে।
লস অ্যাঞ্জেলেসজুড়ে ছড়িয়ে পড়া ভয়াবহ এ দাবানল নিয়ন্ত্রণে আনতে ছড়ানো হচ্ছে গোলাপি রংয়ের গুঁড়া। এ ধরনের গুঁড়া অগ্নিপ্রতিরোধক। দাবানলের বিস্তার ঠেকাতে বিশাল এলাকাজুড়ে আকাশ থেকে এই রঙিন গুঁড়া ছিটানো হয়েছে। কর্মকর্তারা বলছেন, গত এক সপ্তাহে লস অ্যাঞ্জেলেসে হাজারো গ্যালন লাল-গোলাপি গুঁড়া উড়োজাহাজ থেকে ছিটানো হয়েছে।
বার্তা সংস্থা এপি জানায়, গোলাপি রংয়ের উপাদানটির নাম ফস-চেক। পেরিমিটার নামের একটি কোম্পানি এটা বিক্রি করে। আগুন নিয়ন্ত্রণে ১৯৬৩ সাল থেকে যুক্তরাষ্ট্রে ফস-চেকের ব্যবহার হয়ে আসছে।
ফস-চেক মূলত আগুনের চারপাশে স্প্রে করা হয়, যাতে এটি আগুনের গতিপ্রবাহ বন্ধ করতে পারে। এর উপাদানগুলোর মধ্যে রয়েছে ৮০ শতাংশ পানি, ১৪ শতাংশ সারজাতীয় লবণ এবং ৬ শতাংশ রঙিন ও ক্ষয় প্রতিরোধী উপাদান। এটি জ্বালানির তাপমাত্রা হ্রাস করে এবং অক্সিজেন সরবরাহ কমিয়ে দেয়।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া লস অ্যাঞ্জেলেসে বেশ কিছু ছবিতে গাড়ি ও রাস্তাঘাটে গোলাপি রঙের গুঁড়ার আস্তর পড়ে থাকতে দেখা গেছে। পেরিমিটারের পক্ষ থেকে বাসিন্দাদের উদ্দেশে এই গুঁড়া পরিষ্কারের উপায় বলে দেয়া হয়েছে।
প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছে, এই গুঁড়া যত শুকিয়ে যাবে, পুরোপুরি পরিষ্কার করা তত কঠিন হতে পারে। ছোট কোনো জায়গা থেকে গরম পানি ও অল্প ডিটারজেন্ট ব্যবহার করে এটা উঠিয়ে ফেলা যাবে। আর পৃষ্ঠটি বড় হলে পানির উচ্চচাপ ব্যবহার করে পরিষ্কার করতে হবে।
তবে ফস-চেকের ব্যবহার নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। সমালোচকদের মতে, এটা পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর। এতে থাকা রাসায়নিক উপাদান কার্যকর নয়। জলাশয়ের মাছ মেরে ফেলে।
এদিকে, দাবানলের আগুনে এখন পর্যন্ত ২৪ জনের প্রাণহানির খবর পাওয়া গেছে। নিখোঁজ অন্তত ২০। আগুন নেভানোর কাজে এরইমধ্যে ক্যালিফোর্নিয়ার আশপাশের সাত অঙ্গরাজ্য থেকে ছুটে এসেছেন ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা। সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে প্রতিবেশী দেশ কানাডা ও মেক্সিকো।
বাংলাদেশ সময়: ১৬:০৮:০৩ ৬ বার পঠিত